আপনাদের জাতির পিতা মুজিব হতে পারে, আমাদের নয় : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর বাহাত্তরের আওয়ামী লীগের যে সংবিধান রয়েছে, সেটার প্রতি পিরিত জেগে উঠেছে। যদি এত ভালোবাসা থাকে, তাহলে মুজিবকে আপনারা কেন জাতির পিতা মেনে নিচ্ছেন না? আপনাদের জাতির পিতা মুজিব হতে পারে, আমাদের জাতির পিতা মুজিব নয়। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের সৈনিকেরা এখনো জেগে আছে।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীতে শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এনসিপির ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) এবং ঢাকা জেলার সমন্বয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, আমাদের গণঅভ্যুত্থানের পরে এনসিপি খুব ক্রান্তিকাল একটি মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কারণ, আমরা যখন সংস্কারের কথা বলেছি, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কথা বলেছি, তখন আমরা দেখতে পেয়েছি বিভিন্ন এস্টাবলিশমেন্টের যে অংশ রয়েছে, সেখান থেকে তীব্র প্রতিবাদ। তবে আমরা যে সুচিন্তিত মতামতের মধ্য দিয়ে সংস্কার কমিশনে আমাদের মতামতগুলো রেখেছিলাম, সেখানে আমাদের দলের সদস্য সচিব সশরীরে উপস্থিত ছিলেন।

জুলাই সনদের ক্ষেত্রে স্বাক্ষরের বিষয়ে বাংলাদেশের অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বর্তমানে জলঘোলা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমরা তাদের উদ্দেশে বলব, বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রমগুলো চলছে, সেগুলো এনসিপির একার ভাবনা নয়। আপনারা যদি ঢাকা শহরের অলিগলিতে ঘোরাফেরা করেন, বাংলাদেশের লাখ কোটি মানুষ তা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে সংস্কার প্রয়োজন তা জানান দিয়ে গেছে। ফলে এটা কোনো একক দল, ব্যক্তিগোষ্ঠী, পরিবার বা ধর্মতান্ত্রিক কারো কোনো একার দাবি নয়। এটি বাংলাদেশের জনগণের দাবি।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, আগামীতে বাংলাদেশের মানুষ সেই দলকেই ভোট দেবে, যারা সংস্কার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে, আইনি সনদের ক্ষেত্রে, একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জনগণের দাবি মেনে নেবে। যদি সেই ক্ষেত্রে তারা কোনো... করে তাদের ফলাফল আগামীতে ইলেকশনে যে ভোট ব্যাংক রয়েছে, সেখানেই তারা তাদের শাস্তি বলি আর পুরস্কার বলি দুটো ক্ষেত্রে জনগণ তাদেরকে সমাধান দেবে। সনদে সাইন আমরা তখনই করব, জনগণের অধিকার যখন আমরা আইনিভাবে বুঝে পাব। কারণ নব্বইয়ে জনগণকে কলা দেখানো হয়েছে। চব্বিশে তাদেরকে কলা দেখানো যাবে না।

তিনি বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান, বাহাত্তরের মুজিবীয় কায়দাকানুন যতদিন বাংলাদেশে নতুন করে কায়েম করার প্রচেষ্টা চালানো হবে তাদের পরিণতি একইভাবে হাসিনার মতো হবে।

আমাদের সামনে বর্তমানে প্রশ্ন আসছে, আগামী রাজনৈতিক জোট গঠনে আমরা কোন দিকে যাব। আমরা বলি, জনগণ সংস্কার চায়। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিতে বাংলাদেশে নতুন একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যারা যাবে, আমাদের আগামীর জোট তাদের সাথেই হবে। এই ক্ষেত্রে যদি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে আসে তাহলে আমরা দুপা এগিয়ে যাব। যদি বিএনপি এগিয়ে আসে তাহলেও আমরা দুপা এগিয়ে যাব। আগামীর সংসদ কেমন হবে? ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি থেকে বাংলাদেশের জনমানুষ সবাই চোখ তাকিয়ে আছে এই দিকে।

সেখানে আমাদের এনসিপির নীতি হলো– আগামীর পার্লামেন্টে আমরা জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধি দেখতে চাই না।

জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগ মুক্ত একটি সংসদ চাই জানিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, এটার জন্যই এই ভোট ব্যাংকে এনসিপি কাজ করে যাবে। আগামীতে যারাই সংসদে সরকার গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করবে, এনসিপি এখানে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে। আর আগামীর এই ভোট ব্যাংক একটি নীরব বিপ্লব হবে।

ভোট ব্যাংকের মধ্য দিয়ে আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের প্রার্থিতা কার্যক্রম শুরু করে দেব। তবে এক সপ্তাহের মধ্যেই ঐকমত্য কমিশন থেকে রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি যারা রয়েছেন, আমরা তাদেরকে আবেদন জানাবো– জুলাই সনদের আইনি প্রক্রিয়ার একটি রোডম্যাপ দিন। আমরা একটি রোডম্যাপ দিয়েছি। আমরা বলেছি, এটা কোনো প্রজ্ঞাপন হতে পারবে না। কোনো অধ্যাদেশ হতে পারবে না। এটা অবশ্যই বাংলাদেশে জুলাই সনদের আদেশ হতে হবে।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো এবং এস্টাবলিশমেন্টের অংশের কারণে আমাদের খুনের দায়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের চুপ্পু এখনো আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বঙ্গভবনে ঘুমাচ্ছে। আমরা চুপ্পুকে দিয়ে বাংলাদেশে আর কোনো আদেশের ক্ষেত্রে সাইন চাই না। এই আদেশে অবশ্যই অবশ্যই ইউনূসের সাইন আমরা চাই। ড. ইউনূস, জনগণ আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। জনগণ আপনাকে সম্মান দিয়েছে। আপনি জনগণের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে জনগণের জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিতে সাইন দিয়ে জনগণের ন্যায্য অধিকার, জনগণের প্রাপ্য অধিকার, শহীদদের বিচার এবং আহত আমাদের যারা ভাই রয়েছেন তাদের আকাঙ্ক্ষিত বিচার, বাংলাদেশে হাসিনার বিচার হবে।

তিনি বলেন, গত ৫২ বছরে বিএনপি গণতন্ত্রের কথা বলে বাংলাদেশে জিয়া তন্ত্র কায়েম করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইসলামের কথা বলে এখানে মওদুদী তন্ত্র কায়েমের প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আমরা আপনাদের বিরোধী নই। আমরা আপনাদের কল্যাণকামী। আমরা চাই, সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হোক। যেই গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে জনগণ আপনাদেরকে সম্মানের আসনে আসীন করবে। আপনারা জনগণের কল্যাণে নিজেদের জীবন ব্যয় করবেন।

ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, ডাকসু ইলেকশনে শিবির সবাইকে নিয়ে প্যানেল দিয়েছে কিন্তু ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরে প্রথমেই তারা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে স্লোগান দিয়েছে। আমরা বাংলাদেশে ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগানের বিরোধী নই কিন্তু ছাত্ররা আপনাদেরকে যেই কারণে ভোট দিয়েছে আপনারা এই পর্যন্ত জনগণের সামনে তা হাজির করতে পারেন নাই। বরং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম হিসেবে আপনারা ছাত্রদেরকে দিয়ে ইউনিভার্সিটিগুলোকে অস্থিতিশীল করার জন্য নতুন করে পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। আমরা আপনাদেরকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। ছাত্ররা আপনাদেরকে ভোট দিয়েছে।

আপনারা সম্মানের আসনে আসীন হয়েছেন। আপনারা গণতন্ত্রের জন্য কাজ করুন। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য কাজ করুন। আপনারা কোনো দলের নন।


আইকে/ টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়ার ইচ্ছা সাহাবুদ্দিনের, দায়িত্বে থাকতে চান নির্বাচন পর্যন্ত Dec 11, 2025
img
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখ Dec 11, 2025
img
তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা Dec 11, 2025
img
তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে ইসির নিরপেক্ষতা-সক্ষমতা নিয়ে এনসিপির প্রশ্ন Dec 11, 2025
img
তফসিল ঘোষণা গণতন্ত্রের নতুন অধ্যায়: মির্জা ফখরুল Dec 11, 2025
কমলা গাউনে ঝড় তুললেন ফারিন খান Dec 11, 2025
আশনা হাবিব ভাবনার অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ এবং সাহসী বক্তব্য Dec 11, 2025
বার্নাব্যুতে রিয়ালকে হারাল ম্যানসিটি Dec 11, 2025
বিশ্বকাপে মিসর–ইরান ম্যাচ আলোচনায় Dec 11, 2025
img
আমাদের একটাই উদ্দেশ্য- সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন: সিইসি Dec 11, 2025
যে কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাদিক কায়েম Dec 11, 2025
সেনা সংকট চরমে: ইউক্রেনীয় বাহিনীতে পলাতক-অনুপস্থিত ৩ লাখ Dec 11, 2025
২০২৫ সাল হবে বিশ্ব ইতিহাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় উষ্ণতম বছর Dec 11, 2025
img
মেট্রোরেলের ভ্যাট প্রত্যাহার Dec 11, 2025
img
‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলা শিক্ষককে ঢাবি শিক্ষার্থীদের ধাওয়া Dec 11, 2025
img
তফসিলে সন্তুষ্ট বিএনপি, এতে ভোটের অধিকার বাস্তবায়ন হবে: মির্জা ফখরুল Dec 11, 2025
img
নির্বাচনে প্রতি উপজেলায় কাজ করবেন ২ জন ম্যাজিস্ট্রেট Dec 11, 2025
img
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন অভিনেত্রী ওয়েন অ্যালটন Dec 11, 2025
img

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর Dec 11, 2025
img
সবার সহযোগিতায় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় পেয়েছি : প্রধান বিচারপতি Dec 11, 2025