রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালাম আজাদ রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে শেষবার ভাবির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। সেই সময় তিনি তার ভাবিকে বলেন, ‘দু-এক দিনের মধ্যেই বাড়ি আসব, ইলিশ মাছ কিনে রেখো।’ এর পরপরই তার দুর্ঘটনার খবর পৌঁছায় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামে।
রোববার (২৬ অক্টোবর) কৃষিবিদ ইনস্টিটিটিউটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আবুল কালাম আজাদ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের মৃত আব্দুল জলিল চোকদারের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানতলী এলাকায় বসবাস করতেন। তার মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোক।
নিহতের পারিবার সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে আবুল কালাম ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করতেন। নিয়মিত ব্যাবসায়িক কাজে ফার্মগেট এলাকায় যাতায়াত ছিল তার।
নিহতের মেজো ভাবি আছমা বেগম বলেন, দুপুর ১২টার দিকে কালামের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল। বলেছিল, দু-এক দিনের মধ্যে বাড়ি আসব, তুমি ইলিশ মাছ কিনে রেখো। কিন্তু ভাই আর বাড়ি ফিরল না।
চাচাতো ভাই আব্দুল গণি মিয়া চোকদার জানান, কালাম খুব ভদ্র ও পরিশ্রমী মানুষ ছিল। নিজের চেষ্টায় ঢাকায় ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিল। এমন দুর্ঘটনা সরকারের অবহেলার কারণেই ঘটেছে। এখন ওর সংসার কিভাবে চলবে?
নিহতের পরিবার জানায়, আবুল কালামের ৫ বছরের এক ছেলেসন্তান (আব্দুল্লাহ) ও ৩ বছরের এক কন্যাসন্তান (সুরাইয়া আক্তার) রয়েছে। তার মৃত্যুর পর পরিবারটি এখন নিঃস্ব অবস্থায় পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হঠাৎ করেই মেট্রোরেল পিলারের ওপর থেকে ভারী ধাতব (বিয়ারিং প্যাডটি) নিচে পড়ে যায়। সেটি কালামের মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলেও চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সড়ক ও রেলপথ মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, নিহতের পরিবারের প্রতি মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া পরিবারের কর্মক্ষম কাউকে মেট্রো রেলে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবারটিকে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা দেওয়া হবে।
ইএ/টিএ