রামপুরার ঘটনায় হাবিবুরসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে ফের সাক্ষ্যগ্রহণ ৩ নভেম্বর

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর রামপুরায় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি করাসহ দুজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী সোমবার (৩ নভেম্বর) দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন। অন্য সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এদিন বেলা সোয়া ১১টা থেকে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন গুলিবিদ্ধ বাসিত খান মুসার বাবা মো. মোস্তাফিজুর রহমান। জুলাই আন্দোলনে মুসার দাদি মায়া ইসলাম শহীদ হন। তবে, দেশ-বিদেশে দীর্ঘ চিকিৎসা নিলেও এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি ছয় বছরের মুসা। বেঁচে থাকলেও কথা বলতে পারছে না। হুইল চেয়ারে করে তাকে আজ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।

জবানবন্দিতে গত বছরের ১৯ জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন মোস্তাফিজ। নিজের চোখের সামনেই গুলিবিদ্ধ হয় একমাত্র ছেলে মুসা। সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। কিন্তু, গুলিটি ছেলের মাথা ভেদ করে লাগে মায়ের পেটে। এতে তিনি মারা যান। সাক্ষ্যের একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মোস্তাফিজ। পরে তাকে জেরা করেন পলাতক তিন আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন ও গ্রেপ্তার চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহান।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, সুলতান মাহমুদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।

গত ২৩ অক্টোবর প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন কার্নিশে ঝুলে থাকা গুলিবিদ্ধ হওয়া আমির হোসেন। পরে তাকে জেরা করেন ডিফেন্স আইনজীবীরা।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। ওইদিন এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারওয়ার জাহান। আসামিকে অভিযোগ পড়ে শোনান তিনি। এরপর নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন আসামি চঞ্চল। ১৬ সেপ্টেম্বর পলাতক চার আসামির পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি এ মামলা থেকে চার আসামির অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

এদিকে আজ সকালেও এ মামলায় রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। হাবিবুর ছাড়া পলাতক বাকি তিন আসামি হলেন- খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান ও রামপুরা থানার সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। গত ১০ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে, ১ সেপ্টেম্বর পলাতক চার আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২৫ আগস্ট পলাতক আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ৭ আগস্ট প্রসিকিউশনের পক্ষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) দাখিল করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। গত ৩১ জুলাই চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। 

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে রামপুরায় হোটেলে কাজ শেষে ঢাকায় থাকা ফুফুর বাসায় ফিরছিলেন আমির হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বনশ্রী-মেরাদিয়া সড়কের দুই পাশে পুলিশ-বিজিবির গাড়ি দেখে ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে পাশে থাকা একটি নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের ছাদে ওঠেন তিনি। 

ওই সময় পুলিশও তার পিছু পিছু যায়। একপর্যায়ে জীবন বাঁচাতে ওই নির্মাণাধীন ভবনটির ছাদের কার্নিশের রড ধরে ঝুলে থাকেন আমির। কিন্তু তাকে দেখে ফেলে পুলিশ। পরে তার ওপর ছয়টি গুলি ছোড়েন এক পুলিশ সদস্য। এতে তিন তলায় পড়ে গেলে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন উদ্ধার করেন। এরপর বনশ্রীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওইদিন রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন ভুক্তভোগী এই তরুণ।

এছাড়া, একই দিন রামপুরার বনশ্রী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নাদিম ও মায়া ইসলাম নিহত হন। একইসঙ্গে, মায়া ইসলামের ছয় বছর বয়সী নাতি বাসিত খান মুসা গুলিবিদ্ধ হয়। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিলে এখনও কথা বলতে পারছে না এই শিশু।

গত ২৬ জানুয়ারি রাতে আমির হোসেনকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো সাবেক এএসআই চঞ্চল সরকারকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে গ্রেপ্তার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহার নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি দল।

কেএন/এসএন


Share this news on:

সর্বশেষ

img
সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে অর্থ আত্মসাৎ, আইওএফের ১২ জনের জামিন Oct 27, 2025
img
অন্তর্বর্তী সরকারকে যে কারণে তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকায় যেতে বলছে বিএনপি Oct 27, 2025
img
'ডিপ ফেকের' শিকার চিরঞ্জীবী, আইনি পদক্ষেপ নিলেন অভিনেতা Oct 27, 2025
img
১০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ ৬৪, বিপাকে বাংলাদেশ Oct 27, 2025
img
নাফিসার অরবিটালস ইন্টারন্যাশনালসহ ৮ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিআইডির মানিলন্ডারিং মামলা Oct 27, 2025
img
কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদলের সাথে বিএনপির বৈঠক Oct 27, 2025
img
চালু হচ্ছে পাকিস্তান-ইরান-তুরস্ক ট্রেন সেবা Oct 27, 2025
img
শাকসু নির্বাচনের কমিশন ঘোষণা Oct 27, 2025
img
সাভারে সিটি ইউনিভার্সিটিতে আটক থাকা ড্যাফোডিলের ১১ শিক্ষার্থীকে হস্তান্তর Oct 27, 2025
img
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে : সারজিস Oct 27, 2025
img
ক্যামেরা বন্ধের ঘটনায় তর্কে জড়ালেন সারজিস Oct 27, 2025
img
থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ৫-১ গোলে হারল বাংলাদেশ Oct 27, 2025
img
রাজধানী থেকে আওয়ামী লীগের ৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার Oct 27, 2025
img
রাবিতে উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙলো শিক্ষার্থীরা, শাটডাউন বহাল Oct 27, 2025
img
‘অভিযুক্ত যারা দেশে আছেন তারা যেন কেউ পালাতে না পারেন’ Oct 27, 2025
img
সম্পর্ক নয় সমাজ বদলাতেই ভাগাভাগি চান কোয়েল মল্লিক! Oct 27, 2025
img
পাওয়েলের শেষ ওভারের ঝড়ে ১৬৫ রানের পুঁজি পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ Oct 27, 2025
img
৫ উপদেষ্টাকে এনসিপির আজ্ঞাবহ বানাতে না পেরে ট্যাগিং করা হচ্ছে : রাশেদ খান Oct 27, 2025
img
সিটি ইউনিভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ Oct 27, 2025
img
মঙ্গলবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেবে ঐকমত্য কমিশন Oct 27, 2025