আশুলিয়ার ঘটনায় সানি মৃধার সাক্ষ্য

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা সানি মৃধা। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। তার শরীর থেকে ১৭টি পিলেট বের করা হয়। এখনো শরীরে একটি পিলেট নিয়ে চলাফেরা করছেন। তার সহযোদ্ধা সজলকে পুলিশ ভ্যানে অন্যদের সঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে তিনি ভিডিওতে দেখেছেন। জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, এসব ঘটনার নির্দেশদাতা ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীরা।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীকে জেরা করেন।

ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন-অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। এদিন বেলা সোয়া ১১টার পর সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন মামলার ২১তম সাক্ষী সানি মৃধা।

জবানবন্দিতে পুলিশের গুলিতে নিজে আহত হওয়ার কথা জানান সানি।

একই সঙ্গে গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার নির্মমতার দৃশ্যের বিবরণ দেন।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।
জবানবন্দিতে সানি মৃধা বলেন, আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেই। গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে বাইপাইল এলাকায় অবস্থান করি। আনুমানিক বেলা ২টার দিকে জানতে পারি, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। আমরা সবাই বিজয় মিছিল করি। তখন আশুলিয়া থানার দিক থেকে অনেক গোলাগুলির শব্দ আসছিল। আমরা ছাত্র জনতা সবাই আশুলিয়া থানার দিকে রওনা হই।

পুলিশ আশুলিয়া থানার কাছে গলির মধ্যে চলে যায়। ওই সময় আমরা পুলিশদের উদ্দেশে বলতে থাকি যে, হাসিনা পালিয়ে গেছে, আপনারা কেন এখনো গুলি করছেন? এরপরও পুলিশ আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। তখনই আমার হাঁটুর ওপরে কোমড়ের নিচে রানে গুলি লেগে দুই পা ভেদ করে বের হয়ে যায়। এছাড়া হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে শর্টগানের ছররা গুলি লাগে। এ সময় প্রকাশ্য ট্রাইব্যুনালে ক্ষতস্থান প্রদর্শন করা হয়।

সাক্ষী বলেন, ছররা গুলির মধ্যে ১৭টি পিলেট বের করা হয়েছে এবং ডান হাতের কনুইয়ে একটি পিলেট এখনো রয়েছে। আমার সঙ্গে আরও অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। যার মধ্যে আমার পরিচিত একজন ছিল, তার নাম সজল।

আমাকে কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সর্বশেষে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। আমি এখনো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না, আমাকে এখনো ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। আমার ডান পায়ে সাপোর্টিং ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়। আমার দুই পায়ের নার্ভে অসহ্য ব্যথা আছে।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হুকুমে স্থানীয় এমপি সাইফুলসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্রসহ স্থানীয় (আশুলিয়া থানা) পুলিশের সঙ্গে থেকে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। রনি ভূঁইয়া নামে একজনের হাতে আমি অস্ত্র দেখেছিলাম। আমি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই যেন আগামীতে কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনগণের ওপর অত্যাচার করতে না পারে।

এ মামলায় আসামি ১৬ জন, তাদের মধ্যে ৮ আসামি গ্রেফতার আছেন। তারা হলেন-সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। বুধবার তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। সাবেক সংসদ-সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ এ মামলার আট আসামি পলাতক। তাদের মধ্যে শেখ আবজালুল হক ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী হিসাবে পরিচিত) হয়েছেন।

আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে পোড়ানোর ঘটনায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার বিবরণে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট বিকাল ৩টার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর বাইরে আরও একজন গুলিতে গুরুতর আহত হন। একজনকে জীবিত ও পাঁচজনকে মৃত অবস্থায় প্রথমে একটি ভ্যানে তোলা হয়। সেখান থেকে পুলিশের একটি গাড়িতে তোলে পুলিশ। পুলিশের গাড়িতে এ ছয়জনকে (যার মধ্যে একজন জীবিত) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ।

কারাগারে সিএমপির সাবেক কমিশনার সাইফুল : জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদল নেতা ওয়াসিমসহ তিনজনকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

বৃহস্পতিবার সকালে সাইফুলকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। পরে আদালতে তোলা হলে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মন্ত্রী হলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন Nov 01, 2025
img
হাসপাতালে নুরুল হাসান সোহান, শরিফুলকে নিয়েও আছে শঙ্কা Nov 01, 2025
img
আ. লীগের মিছিল বেগবান হচ্ছে, দিশেহারা পুলিশ : মোস্তফা ফিরোজ Oct 31, 2025
img
টলিউডে রাজনীতি এখন আরও প্রকট: রঞ্জিত মল্লিক Oct 31, 2025
img
ফ্যাসিবাদ সরকার যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখে ফেলে গেছে: শামা ওবায়েদ Oct 31, 2025
img
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে: নির্বাচন কমিশনার Oct 31, 2025
img
আসন্ন নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ফেক নিউজ : শফিকুল আলম Oct 31, 2025
img
মোবাইল ফোন হারালে ব্লক করার প্রক্রিয়া Oct 31, 2025
img
ভেনেজুয়েলায় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র Oct 31, 2025
img
চরমপন্থা-সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার Oct 31, 2025
img
মহানগর ও বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিটে চালু হচ্ছে নতুন পোশাক Oct 31, 2025
img
ডাচ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে রব জেটেন Oct 31, 2025
img
কুয়েতে দুর্ঘটনার কবলে কিংসের বাস, অনুরোধ রাখেননি ম্যাচ কমিশনার Oct 31, 2025
img
তদন্তের মধ্যেই হাসপাতালে ছুটলেন শিল্পা শেঠি Oct 31, 2025
img
আমি যখন কোনো সম্পর্কে থাকি তখন আমার পুরোটা দিই: তামান্না ভাটিয়া Oct 31, 2025
img
দলগুলো ঐকমত্যে আসতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: হাসনাত Oct 31, 2025
img
জবি ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদের পদত্যাগ, পরে ডিলিট করলেন পোস্ট Oct 31, 2025
img
যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা লুটপাট দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়ন করেছে : এ্যানি Oct 31, 2025
img
১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজ যাচাইয়ে ডিএনসিসির কমিটি গঠন Oct 31, 2025
img
জিম্বাবুয়েকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত আফগানিস্তানের Oct 31, 2025