দীর্ঘ নয় মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন।
শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে দ্বীপটিতে শুরু হচ্ছে পর্যটন মৌসুম। তবে দ্বীপটির পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এবার ভ্রমণ ব্যবস্থায় আনা হয়েছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ।
পর্যটকদের এখন থেকে অবশ্যই অনলাইনে ‘ট্রাভেল পাস’ নিয়ে যেতে হবে এবং পালন করতে হবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ১২ দফা নির্দেশনা।
যেভাবে ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করবেন:
পর্যটকদের ট্রাভেল পাস সংগ্রহের জন্য আলাদা কোনো নিবন্ধন করতে হবে না। এটি মূলত জাহাজের টিকিটের সঙ্গেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত থাকবে।
পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে জাহাজের টিকিট কিনতে হবে।
এই অনলাইন টিকিটের সঙ্গেই ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে।
কিউআর কোড ছাড়া কোনো টিকিট অবৈধ বলে গণ্য হবে। ঘাটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এই কিউআর কোড পরীক্ষা করবেন।
এদিকে বুধবার (২২ অক্টোবর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ-২ শাখা থেকে ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন নির্দেশিকা, ২০২৩’-এর আলোকে ১২ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়।
নতুন নির্দেশনার মূল দিকগুলো
১. বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্টমার্টিনে চলাচল করতে পারবে না।
২. পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েব পোর্টাল থেকে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে থাকবে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল হিসেবে বিবেচিত হবে।
৩. দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি ও পর্যটকসংখ্যা এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
৪. নভেম্বর মাসে শুধু দিনের বেলায় দ্বীপ ভ্রমণের অনুমতি থাকবে–রাত্রিযাপন করা যাবে না।
৫. ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সীমিত আকারে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে।
৬. ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।
৭. প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক সেন্টমার্টিনে প্রবেশ করতে পারবেন না।
৮. দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি আয়োজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৯. কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
১০. সৈকতে মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচলও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১১. নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী যেমন: চিপসের প্যাকেট, স্ট্র, প্লাস্টিক চামচ, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ছোট পানির বোতল বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
১২. পর্যটকদের নিজস্ব ফ্লাস্ক বা বোতল সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ কমে।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটনের কারণে সেন্টমার্টিনের ইকোসিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই দ্বীপের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পর্যটন কার্যক্রম ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হচ্ছে।
দ্বীপে প্রবেশ ও অবস্থানের প্রতিটি ধাপ এখন থেকে ডিজিটাল ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে তদারক করা হবে।
ইএ/টিকে