এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা তথা এপেক ফোরামের ৩২তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। আজ শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে দক্ষিণ কোরিয়ার গিওংজুর হিকো আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ভাষণ দেন তিনি।
ভাষণে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান চীনা প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ক্রমশ অস্থির ও জটিল হয়ে উঠছে। তাই ‘চেইন ভাঙা’র পরিবর্তে ‘হাত মিলানোর’ নীতি অনুসরণ করতে হবে এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের খোলা উন্নয়ন সমর্থন করতে হবে।
জিনপিং তার ভাষণে এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের অনিশ্চয়তা ও উত্তেজনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এপেকের মূল লক্ষ্য—অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি ও জনগণের কল্যাণ উন্নত করা—এই লক্ষ্যের প্রতি সকলকে অবিচল থাকতে হবে।
এছাড়া উন্মুক্ত উন্নয়নের সুযোগ ভাগ করে নেয়া, সবার স্বার্থ রক্ষার নীতি মেনে চলা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে এগিয়ে নেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। ভাষণে চীনা প্রেসিডেন্ট ৫টি প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রথমত, দেশগুলোকে যৌথভাবে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা রক্ষা করতে হবে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা তথা ডব্লিউটিও কেন্দ্রিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়াতে হবে।
দ্বিতীয়ত, উন্মুক্ত আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পরিবেশ গঠন ও বিনিয়োগ উদারীকরণ উৎসাহিত করতে হবে। তৃতীয়ত, শিল্প ও সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে, এবং ‘হাত মেলানোর’ নীতি মেনে চলা জরুরি। চতুর্থত, বাণিজ্যের ডিজিটালাইজেশন ও সবুজায়ন যৌথভাবে উৎসাহিত করতে হবে। পঞ্চমত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নকে সমর্থন করতে হবে যাতে সব মানুষ সমানভাবে উপকৃত হয়।
তিনি আরও জানান, চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সহযোগিতা এগিয়ে নেবে, উন্নয়নশীল দেশকে সমর্থন করবে এবং নতুন অর্থনৈতিক ক্ষেত্র উন্মুক্ত করবে। এরই মধ্যেই চীন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পণ্যের ওপর শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করেছে। এছাড়া চীনের পঞ্চদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা সংস্কার আরও গভীর করার এবং আধুনিকায়ন প্রসারিত করার সুযোগ এনে দেবে।
শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে শুরু হয় দুদিনব্যাপী এশিয়া প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সম্মেলন- এপেক ২০২৫। বিশ্বের অর্ধেক বাণিজ্য আর ৬১ শতাংশ জিডিপির প্রতিনিধিত্ব করছে এপেকের ২১টি দেশ। বাণিজ্য যুদ্ধ, প্রযুক্তি, সরবরাহ চেইন আর বহুপাক্ষিক সহযোগিতা সব মিলিয়ে এবারের সম্মেলন নজর কাড়ছে সবার।
সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিসহ আগত বিশ্বনেতাদের স্বাগত জানান এবারের এপেক সম্মেলনের আয়োজক দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং।
এবারের এপেক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, কানাডা, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ ২১টি দেশ। বাণিজ্য, সরবরাহ চেইন নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি, জনসংখ্যা সমস্যা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নই থাকবে আলোচনার মূল বিষয়।
এছাড়াও এপেকে গুরুত্ব পাচ্ছে জলবায়ু, টেকসই উন্নয়ন এবং ডিজিটাল সংযোগও। যৌথভাবে ডিজিটাল ব্রিজ ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগ নিয়েছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। এপেক সম্মেলনকে শুধু অর্থনীতি নয়, মূল্যবোধের মঞ্চ বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, সিটিজিএন
ইএ/টিকে