জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, আরপিও সংশোধনের যে নতুন অধ্যাদেশ জারি হয়েছে, মানে নির্বাচন কমিশন যে সংশোধনের প্রস্তাবনা করেছিল এবং যেটা গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদে পাস হয়েছিল, খসড়াটা নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছিল, সেটা নিয়ে বিএনপি আপত্তি করেছিল। বিএনপির আপত্তির কারণ আছে। বিএনপি বলেছিল, ওখানে যে একটা পয়েন্ট ছিল, যেটা বিএনপির নির্বাচনি যে স্ট্র্যাটেজি, তার সঙ্গে একটু সংঘাতপূর্ণ ছিল। স্ট্র্যাটেজিটা কী? বিএনপি অনেকদিন ধরে বলেছিল, যদি তারা আগামীতে সরকারে যায়, তাহলে তারা একটি জাতীয় সরকার গঠন করবে।
এখন জাতীয় সরকারটা কী? বিএনপি বলেছিল যে, তাদের সঙ্গে যারা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছে, যারা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে, তাদেরকে নিয়েই, তাদের প্রতিনিধিদের নিয়েই উনারা একটি সরকার গঠন করবেন।
যদি কেউ কম আসনও পায়, একদম কম, তবুও তাদের সরকারের অংশ তারা করতে চায়। এ ধরনের একটা চিন্তা তাদের মধ্যে ছিল এবং তারা যখন ৩১ দফা করে, সেটাও তারা একা একা করেনি। সেখানে তারা শরিক দল যারা আছে, তাদের মতামত নিয়েই ৩১ দফা দিয়েছিল।
আজকে থেকে দু-তিন বছর আগের ঘটনা। বিএনপির সদিচ্ছাকে অনেকে ওয়েলকাম করেছিল এবং আমার নিজেরও মনে হয়েছিল এটা হওয়াটা ভালো। কারণ একভাবে একদল হয়ে গেলে এটা কেমন! যদি আরো দুই-একটি ছোট দলের বড় নেতা, তারা ভালো ভূমিকা রাখেন, ভালোভাবে পরামর্শ দিতে পারেন, তারা যদি থাকেন সরকারে, তাহলে ভালো, আমি এতে কোনো মন্দ দেখি না। কিন্তু আরপিওর যে সংশোধনীটা অনুমোদিত হলো এবং যেটা অধ্যাদেশ আকারে ইতোমধ্যে গ্যাজেট হয়ে গেছে, সেখানে এমন কিছু জিনিস আছে যেটা না কি বিএনপির ওই প্রত্যাশার ক্ষেত্রে একটু হলেও বাধার সৃষ্টি করবে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ‘কথা’ নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।
মাসুদ কামাল বলেন, মূল যে সমস্যাটা, যেটা নিয়ে বিএনপি নিজেও আপত্তি জানিয়েছিল, সেটা হলো যখন তারা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে, তখন জোটের যারা প্রার্থী হবেন, তারা নিজের দলের প্রতীক নিতে পারেন অথবা এই জোটের অন্য কারো প্রতীক নিতে পারেন। কারণ বিএনপি প্রধান দল এবং বিএনপির ভোট ব্যাংকটা বড়, যদি ধানের শীষ তারা নেয়, অনেকে হয়ত প্রার্থীকে চিনে না, কিন্তু প্রতীকটাকে চিনে, তারা হয়ত ধানের শীষ দেখে সেই প্রার্থীকে যিনি বিএনপি করেন না, কিন্তু অন্য দলের লোক, কিন্তু বিএনপির সঙ্গে শরিক হিসেবে আছেন, ধানের শীষ দেখলে হয়ত তারা ওই লোকটাকে ভোটটা দিতে পারে।
কিন্তু যদি ধানের শীষ যদি তাকে দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে বাস্তবতাটা কী আমি উদাহরণ দিয়ে বলি। আমরা দেখেছি, কালকে যে ২৩৭ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপি, সেখানে ৬৩টি আসন তারা ঘোষণা করেনি, ফাঁকা রেখেছিল।
কেন ফাঁকা রেখেছিল? কালকে আমি বলেছিলাম যে এর মধ্যে অনেকগুলো আছে, এগুলো না কি বিএনপি তার শরিকদের ছাড় দিতে চায়। এরকম অনেক অনেক লিডার আছে, যারা না কি বড় বড় লিডার, কিন্তু দল অতটা বড় নয়, তারা বিএনপির সঙ্গে আছে, যেমন ববি হাজ্জাজ, আন্দালিব রহমান পার্থ, মাহমুদুর রহমান মান্না, নুরুল হক নুরু, রাশেদ খান, গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকি- এরা সবাই মোটামুটি পরিচিত। এরা সবাই বিএনপির এই জোটের সঙ্গে আছে এবং তারা একত্রে আন্দোলন করছে। আন্দোলনের পরিকল্পনা করেছে এবং তারা একত্রে নির্বাচনও করতে চায়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাদেরকে যদি বিএনপি ছাড় দেয়, তাহলে কী হবে? এখন যে নতুন আইনটা হলো, এই আইনের ফলে কী হবে? তারা কেউ ধানের শীর্ষ প্রতীকটি নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না।
এমআর/টিএ