ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ভবঘুরে উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে ফের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানে ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য সর্ব মিত্র চাকমার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
ভিডিও দেখা যাচ্ছে এক ভবঘুরে বৃদ্ধকে উচ্ছেদ করছেন সর্বমিত্র চাকমা ও তার এক সহযোগী। এ সময় ওই সহযোগী লাটি দিয়ে বৃদ্ধকে ভয় দেখান এবং তার হাতে থাকা ব্যাগে বেশ কয়েকবার আঘাত করেন।
এ সময় সহযোগীর হাত থেকে লাঠিটি নিয়ে নেন সর্বমিত্র। তাকে বলতে শোনা যায়— তোমাকে দেখব আর? ওই বৃদ্ধ বলেন, না। সর্বমিত্র চাকমা বলেন- কতবার ওঠাবো আর? কতবার ওঠাবো?
ভিডিওটি প্রকাশের পরপরই এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। অভিনেতা ইমতু রাতিশ ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, "যদি রাষ্ট্র ছিন্নমূল মানুষের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারে, তাহলে সমাধান কী? ভিডিওতে দেখা যায়, ঢাবির প্রোক্টরিয়াল টিম ও ডাকসুর সর্বমিত্র চাকমা বার্ন ইউনিটের গেটের সামনে এক ছিন্নমূল বৃদ্ধকে উচ্ছেদ করছেন।"
মো. আমজাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, "যদি রাষ্ট্র ছিন্নমূল মানুষের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, তবে অন্তত তাদের মর্যাদাটুকু রক্ষা করা উচিত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও বিভিন্ন নিউজে দেখা যাচ্ছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরিয়াল টিম ও ডাকসুর সর্ব মিত্র চাকমা বার্ন ইউনিটের সামনে থাকা এক ছিন্নমূল বৃদ্ধ মানুষকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করছেন এবং তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করছেন। প্রশ্ন খুবই পরিষ্কার- এক অসহায় ছিন্নমূল বৃদ্ধকে আঘাত করার দায়িত্ব কি তাকে দিয়েছে রাষ্ট্র? মানবিক দায়িত্ব কি এভাবেই পালন হয়?"
তবে অনেকে বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করলেও অনেকে সর্বমিত্রের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মামুন নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, "ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য সর্বমিত্র চাকমার উদ্যোগে বর্তমানে ক্যাম্পাস আগের চেয়ে হাজারগুণ নিরাপদ।
তার উদ্যোগ সত্যি প্রশংসা দাবিদার। যে কাজ এতদিনে কেউ করতে পারেনি, সেই কাজ সর্বমিত্র করে দেখিয়ে দিয়েছেন। ঢাবি ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখার জন্য যা করার দরকার অবশ্যই তাকে করতে দেওয়া উচিত। ক্যাম্পাস কোন ভবঘুরে মাদক ব্যবসায়ী ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য হওয়া উচিত নয়।"
এদিকে আলোচনা-সমালোচনার মাঝেই নিজের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে অভিযানে আর মাঠে না থাকার ঘোষণা দিয়েছেন সর্বমিত্র চাকমা।
তিনি লিখেছেন, "যে বৃদ্ধ লোকটিকে দেখছেন, আমি শুরুর দিন থেকে এই লোকটাকে সেই মেট্রো স্টেশন থেকে তুলেছি প্রতি রাতে। লোকটা ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়-ই না, উনার সাথে আরেকজন আরো বৃদ্ধ, উনিও মাদকাসক্ত, এই লোকের কাছে এর আগে একবার গাঁজা পাওয়া গিয়েছিল। এই লোকগুলোকে তোলাটা অত্যন্ত কঠিন, তুললে আগায় ৪ কদম। তাই, লাঠিসোটা ছাড়া বা ভয়-ভীতি প্রদর্শন না করে তাদের তোলা যায়-ই না। তিনি বলেন, আমার নিজের এটার জন্য স্বার্থসিদ্ধি নাই, আমি আমার ক্যাম্পাসকে ভবঘুরে-পাগল-গাঁজাখোর মুক্ত দেখতে চেয়েছিলাম শুধু। আজ আমাদের নারী শিক্ষার্থী দুজন হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছেন। আমার চাওয়া, এই ভবঘুরে-পাগল-হ্যারাসারমুক্ত ক্যাম্পাস গড়া। কিন্তু, এরকম প্রতিনিয়ত বিতর্ক আমার ব্যক্তিগত জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। এভাবে প্রক্টরিয়াল টিমের সাথে রাতে পাহারা দিয়ে উচ্ছেদ করাটা ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্যের কাজ না, আবার আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ছে না এমনটাও না।"
তিনি আরো লিখেছেন, "কিছুদিন আগে তিনজন মাদকসেবীকে তুলতে গিয়েছিলাম, একইভাবে পোস্ট করে আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছে। এদের তাড়ানোর জন্য লাঠি হাতে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না, যারা মাঠে কাজ করে তারাই জানে এটা কতটুকু কঠিন। একজন সদস্য হিসেবে আমি নিশ্চয় নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে আমার তরফ থেকে কাজ করব, কিন্তু মাঠে আমি আর থাকছি না।"
টিজে/এসএন