রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেছেন, সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিও নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে; অনেকে সেটি শেয়ারও করেছেন। এই ঘটনা খুবই গম্ভীরভাবে নেওয়া প্রয়োজন। এই ভিডিওটি আসলে এআই ব্যবহার করে তৈরি। নির্বাচনকে সামনে রেখে যেকোন একজন প্রার্থীকে লক্ষ্য করে এ ধরনের ভিডিও বানিয়ে চরিত্রহানির চেষ্টা করা যেতে পারে।
ধর্মীয় বাণীর নামে উস্কানি, হিংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি বা কোনো প্রার্থীকে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রদর্শন করা। ভোটের রাজনীতিতে যেখানে প্রতিটি মানুষের একটিই ভোট মূল্যবান, সেখানে এই ধরনের বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট বড় অর্থে কাজ করতে পারে।
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেল জাহেদস টেইক-এ এসব কথা বলেন তিনি। তিনি জানান, ভাইরাল ভিডিওটির কমেন্টগুলো পড়ে জানা যায় খুব কম মানুষ এটাকে এআই বা ফেইক বলে শনাক্ত করেছে।
অধিকাংশ মানুষ এই ভিডিওটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে বিএনপির বিরুদ্ধে ছড়াচ্ছে। এর অর্থ আমরা কি ঘটছে তা বুঝতে পারছি না; সাধারণ মানুষের ডিজিটাল সাক্ষরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা সহজেই এগুলো গ্রহণ করছে। এটা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।
তিনি বলেন, এই সমস্যা কেবল নির্বাচনের সময় সীমাবদ্ধ থাকবে না; ভবিষ্যতে যেকোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক সংঘাত মিছিলে এ ধরনের কৃত্রিম ভিডিও ভয়াবহভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ছোট ছোট ১৫–২০ সেকেন্ডের ক্লিপই যথেষ্ট। স্টাডি দেখায় বিশেষত ৮ সেকেন্ডের ভিডিও মানুষ বেশি বিশ্বাস করে। ফলে, ফেক তৈরির কাজ যতই খুঁতখুঁতে বা কাঁচা হোক, তা দ্রুত প্রোপাগান্দায় কাজ দেয়।
তিনি আরো বলেন, ‘দ্য এজ অব সারভেইল্যান্স ক্যাপিটালিজম’ নামক বইয়ে বলা আছে কিভাবে আমাদের অনলাইনে করা প্রতিটি কাজ, প্রতিক্রিয়া ও পছন্দ ক্যাপিটালিজমের কাছে ডেটা হয়ে যায় এবং ব্যবসায় রূপ নেয়। এই ব্যবসায়িক গতিবেগ নিয়ন্ত্রণমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হওয়ার আগেই অনেক বেশি দ্রুত বেড়ে গেছে।
ফলে আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছি। এআই যুক্ত হলে অবস্থাটা আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন আমরা কতটা প্রস্তুত। সরকার, নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কতটুকু সক্ষম, তা অনিশ্চিত। ভবিষ্যতে এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে: এআই ভিডিও, ডিপফেক ও আরও উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া মিথ্যা। কিছু দল-গোষ্ঠী নিয়মিতভাবে ফেক ছবি, ফেক আইডি কার্ড ইত্যাদি ছড়ায়, এ প্রবণতা বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, দলগুলোকে এই বিষয়ে সিরিয়াস হতে হবে। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো কেবল হয়েই থাকবে না, তা দৃশ্যমান করে দেখাতে হবে। অন্তত ফেক ভিডিও বা ফেক ফুটেজের সোর্স খুঁজে বের করা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এই ধরনের অপরাধকে শাস্তিযোগ্য করে সুনিশ্চিত অপরাধবোধজনক ব্যবস্থা না নিলে প্রবণতাকে থামানো যাবে না। সময় খুব বেশি নেই। এ বিষয়ে কার্যকর ও ত্বরিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এমকে/এসএন