হিমেল হাওয়া বইছে, ঘন কুয়াশায় জড়িয়ে আসছে শীতের আমেজ। আর এ সময়টাই ত্বকের জন্য সবচেয়ে সংবেদনশীল। গরমের ঘাম ও ধুলোবালির পর এবার ত্বককে সামলাতে হবে ঠান্ডা, শুষ্ক বাতাসের আঘাত থেকে। তাই আগেভাগেই বদলে ফেলুন আপনার নিয়মিত ফেসওয়াশ। কারণ, কী দিয়ে মুখ ধোয়া হচ্ছে-সেটাই নির্ধারণ করবে আপনার ত্বক কতটা সজীব, কোমল ও সুস্থ থাকবে পুরো শীতে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘ত্বকের ধরন বুঝে ফেসওয়াশ বাছাই করলে শীতকালেও ত্বক থাকবে উজ্জ্বল ও কোমল। রাসায়নিক বা তীব্র ঘ্রাণযুক্ত পণ্য যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।’
কেন বদলাতে হবে ফেসওয়াশ?
শীতকালে আমাদের ত্বক শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য কাজ করে বেশি। তাই সহজেই শুষ্কতা, টানটান ভাব বা তৈলাক্ততা দেখা দেয়। যাদের ত্বক সংবেদনশীল, তাদের ক্ষেত্রে দেখা দেয় অ্যালার্জি, র্যাশ বা চুলকানির সমস্যা। তাই আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ফেসওয়াশও পরিবর্তন করুন ত্বকের ধরন অনুযায়ী।
আপনার ত্বকের ধরন কীভাবে বুঝবেন?
তৈলাক্ত ত্বক: পুরো মুখে চকচকে ভাব
শুষ্ক ত্বক: মুখ ধোয়ার পর টান টান অনুভূতি
মিশ্র ত্বক: কপাল ও নাক চকচকে, বাকিটা টানটান
স্বাভাবিক ত্বক: ভারসাম্যপূর্ণ অনুভূতি
সংবেদনশীল ত্বক: সহজে অ্যালার্জি বা লালচে ভাব হয়
ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসওয়াশ বেছে নিন। তবে ফেসওয়াশে যেসব উপাদান দেখে কিনবেন, তা হলো-
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, রেটিনল, ভিটামিন ‘সি’, হালকা এক্সফোলিয়েন্ট উপাদান। এগুলো ত্বক পরিষ্কার রাখে, মৃত কোষ দূর করে উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
শুষ্ক ত্বক: শীতে সবচেয়ে ভোগে এই ত্বক। দরকার বাড়তি আর্দ্রতা। এ ধরনের ত্বকের জন্য ফেসওয়াশ কেনার আগে যা দেখবেন তা হলো-ভিটামিন ‘ই’, ল্যাকটিক অ্যাসিড, হায়ালুরনিক অ্যাসিড, সেরামাইড, ল্যানোলিন, প্রাকৃতিক তেল, অ্যালোভেরা, দুধ, মধু, জোজোবা অয়েল। এড়িয়ে চলবেন গ্লাইকোলিক বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, অ্যালকোহল ও কৃত্রিম ঘ্রাণ। ব্যবহার করুন হাইপোঅ্যালারজেনিক, কোমল ও ঘ্রাণবিহীন ফেসওয়াশ।
তৈলাক্ত ত্বক: শীতেও অনেকের ত্বকে অতিরিক্ত তেল দেখা দেয়। এ ধরনের ত্বকের জন্য ফেসওয়াশ কেনার আগে যা দেখবেন তা হলো-মৃদু, জেলভিত্তিক বা ক্লে ফেসওয়াশ, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, নায়াসিনামাইড, টি ট্রি অয়েল ও অ্যালোভেরা। এড়িয়ে চলবেন ভারী ক্রিম, তেল বা অ্যালকোহলযুক্ত ফেসওয়াশ।
সংবেদনশীল ও মিশ্র ত্বক: সবচেয়ে সতর্কভাবে যত্ন নিতে হয় এই ত্বক। এ ধরনের ত্বকের জন্য ফেসওয়াশ কেনার আগে যা দেখবেন তা হলো-হাইপোঅ্যালারজেনিক ও ঘ্রাণবিহীন ফর্মুলা, সালফেট, অ্যালকোহল, প্যারাবেন ও সাবানবিহীন উপাদান, ভিটামিন ‘ই’ বা অ্যালোভেরা যুক্ত ফেসওয়াশ। এড়িয়ে যাবেন স্ক্র্যাব, মাইক্রোবিডস বা ঘ্রাণযুক্ত পণ্য।
একনজরে সঠিক ফেসওয়াশের উপাদান
স্বাভাবিক: ভিটামিন ‘সি’, রেটিনল
শুষ্ক: হায়ালুরনিক অ্যাসিড, সেরামাইড
তৈলাক্ত: স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, টি ট্রি অয়েল
সংবেদনশীল: অ্যালোভেরা, ভিটামিন ‘ই’
টিপস কর্নার
মুখ ধোয়ার সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন
মুখ ধোয়ার পরপরই ময়েশ্চারাইজার লাগান
প্রতিদিন দুবারের বেশি ফেসওয়াশ ব্যবহার করবেন না
নতুন পণ্য ব্যবহারের আগে ছোট জায়গায় টেস্ট করে নিন
ত্বকের যত্নে দামি পণ্য নয়, বরং সঠিক পণ্যটাই সবচেয়ে কার্যকর। শীতের রুক্ষ আবহাওয়ায় ত্বককে সজীব রাখতে চাই সচেতন পছন্দ। তাই এবার ফেসওয়াশ বদলান ত্বকের ধরন বুঝে আর পুরো মৌসুম থাকুন আত্মবিশ্বাসী, উজ্জ্বল ও ত্বকবান্ধব।
টিজে/টিএ