সংস্কারের মূল লক্ষ্য প্রশাসনিক নয়, নৈতিক : প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, সংস্কারের মূল লক্ষ্য প্রশাসনিক নয়, বরং নৈতিক—যাতে প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাকে নয়, মানুষকে সেবা দেয়, কর্তৃত্ব বৈধতার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং বিচার বিভাগ জনগণের আস্থার নৈতিক অভিভাবকে পরিণত হয়।

শনিবার (৮ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছরপূর্তি (হীরক জয়ন্তী) ও পুনর্মিলনী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতির মা ড. সুফিয়া আহমেদ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। একই বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশের প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক ছিলেন।

অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমেদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধান বিচারপতি বলেন, তিনি ছিলেন সেই বিরল প্রজন্মের একজন, যাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নৈতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিল। তার জীবন ছিল নারীর একাডেমিক ক্ষমতায়ন ও শিক্ষার নৈতিক শুদ্ধতার প্রতীক, যা এখনো আমাকে প্রভাবিত করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আরো বলেন, এই ঐতিহাসিক দিনে আপনাদের সামনে দাঁড়ানো মানে স্মৃতি ও নিয়তির এক মহামিলনের অভিজ্ঞতা অর্জন করা। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছরের যাত্রা কেবল একাডেমিক সাফল্যের ইতিহাস নয় বরং এটি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনেরই এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়।

তিনি বলেন, ইতিহাসের গভীর বোধ ছাড়া কোনো সংস্কারক প্রজ্ঞাবান হতে পারেন না, আর কোনো বিচারক তার সভ্যতার শিকড় না বুঝে আইনের যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারেন না।

তিনি আরো বলেন, আইন হলো কোনো জাতির নৈতিক ইতিহাস, যা ন্যায়ের ভাষায় লেখা হয়; আর ইতিহাস হলো কেন সমাজকে আরো ভালো হতে হবে, তারই অনুসন্ধান।

প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি মিসরের বিবলিওথেকা আলেকজান্দ্রিনা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, প্রাচীন আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার মানবজাতির সেই সাহসী বিশ্বাসের প্রতীক ছিল, যেখানে জ্ঞানের মাধ্যমে ভিন্ন সভ্যতার মানুষ একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হতো।

তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও একইভাবে রাজনৈতিক প্রতিকূলতা ও ইতিহাসের বিভাজন অতিক্রম করে জ্ঞানের আলোয় জাতিকে আলোকিত করে চলেছে।

বিচার বিভাগীয় সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগ কেবল ঐতিহ্যের স্বস্তিতে টিকে থাকতে পারে না। এটিকে সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হতে হয়। আর সময়ের সঙ্গে বিচার বিভাগকে প্রাসঙ্গিক থাকতে হলে তাকে সংস্কার করতে হয়। গত ১৫ মাসে আমরা বিচারব্যবস্থার স্বায়ত্তশাসন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও জনগণের বিচারপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি এবং সেটি এখনো চলমান আছে।

তিনি বলেন, সংস্কারের মূল লক্ষ্য প্রশাসনিক নয়, বরং নৈতিক—যাতে প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাকে নয়, মানুষকে সেবা দেয়, কর্তৃত্ব বৈধতার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং বিচার বিভাগ জনগণের আস্থার নৈতিক অভিভাবকে পরিণত হয়।

অনুষ্ঠানের সমাপ্তিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আজকের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি কেবল একাডেমিক উদযাপন নয়, এটি প্রতিষ্ঠানের নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রভাবের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ বারবার প্রমাণ করেছে, ইতিহাস আমাদের মূল্যায়ন করে অর্জনে নয়, বরং প্রচেষ্টার সততা ও নিষ্ঠার মানদণ্ড।

এই বার্তাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভবিষ্যতের মূলভিত্তি মর্মে তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। এতে সভাপতিত্ব করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বড়দিন উপলক্ষে জ্যাকুলিনকে ফের চমকে দিলেন সুকেশ! Dec 24, 2025
img
বিশ্বের সকল খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের বড় দিনের শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান Dec 24, 2025
img
পিস্তলসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা গ্রেপ্তার Dec 24, 2025
img
‘সাইয়ারা’র খ্যাতির পর ভয়ঙ্কর চিঠি ও জন্মদিনের শুভেচ্ছায় আহান পাণ্ডে Dec 24, 2025
img
১০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে বিএনপিতে যোগ দিলেন ড. রেদোয়ান Dec 24, 2025
img
বছরের শেষ, বড়দিনে নিজেকে সাজাতে পারেন সেলিব্রিটি স্টাইলে! Dec 24, 2025
img
গোবিন্দর প্রেমের গুঞ্জন নিয়ে মুখ খুললেন স্ত্রী সুনীতা Dec 24, 2025
img
ঝুঁকিতে ভারতীয় পেসার বুমরাহর শীর্ষস্থান Dec 24, 2025
img
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকে গুলশান-পল্টনে লাইন দিচ্ছে: হাসনাত Dec 24, 2025
img
আরবাজ খান ও সুরার বিয়ের ২ বছর, নাচের ভিডিওতে মলাইকাকে খোঁচা! Dec 24, 2025
img
ফের রিয়ালিটি শোতে জোজো, বিচারক নন তাহলে কোন ভূমিকায় থাকছেন তিনি? Dec 24, 2025
img
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ভাঙচুর Dec 24, 2025
img
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থান টেকসই সমাজের পূর্বশর্ত : ধর্ম উপদেষ্টা Dec 24, 2025
img
সিক্যুয়েল আসার আগেই জাপানে মুক্তি পাচ্ছে ‘অ্যানিমেল’ Dec 24, 2025
img
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে সফরসঙ্গী হচ্ছেন কারা! Dec 24, 2025
ডি ভিলিয়ার্সের রেকর্ড ভাঙলেন সূর্যবংশী, দ্রুততম ১৫০ রানের কীর্তি Dec 24, 2025
img
ভারতীর দ্বিতীয় সন্তানের সঙ্গে আবেগঘন প্রথম সাক্ষাৎ Dec 24, 2025
img
প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, গ্রেপ্তার ৩১ Dec 24, 2025
img
ব্যাডমিন্টনে চমক, চার বাংলাদেশি জুটি কোয়ার্টার ফাইনালে Dec 24, 2025
img
রিয়াজ সুস্থ আছেন, মৃত্যুর খবরের কোনো ভিত্তি নেই Dec 24, 2025