পঞ্চগড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশ্য প্রহরী ও দপ্তরি নিয়োগের নামে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দুই প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করার আদেশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেলে পঞ্চগড় জেলা শহরের সরকারি অডিটোরিয়াম চত্বরে দুদকের গণশুনানিতে তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই আদেশ প্রদান করেন দুদকের কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী।
বহিষ্কারকৃত দুই শিক্ষক হলেন- পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হায়াত বাবুল ও ধাক্কামারা ইউনিয়নের বুড়িরবান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঝরেন রায়।
কমিশনের ভুক্তভোগীদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, ডাঙ্গাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হায়াত বাবুল ভুয়া সার্কুলার দিয়ে নৈশ্য প্রহরী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে আল আমিন নামে এক ব্যক্তির কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নেন। পরে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ফেরত দিলেও ৮০ হাজার টাকা আর ফেরত দেননি। তাই দুদকের গণশুনানিতে এই অভিযোগ তোলেন আল আমিন। অভিযোগের শুনানিতে ওই প্রধান শিক্ষক টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলে তাকে সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ দেয় কমিশন। একই সঙ্গে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে আল আমিনের পাওনা ৮০ হাজার টাকা তাকে না দিয়ে সরকারি কোষাগারে ডিসেম্বরের মধ্যে জমা করারও আদেশ দেওয়া হয়।
এদিকে ৪ বছর আগে বুড়িরবান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে নাসরিন আক্তার নামের এক নারীর কাছে আড়াই লাখ টাকা ঘুষ নেয় প্রধান শিক্ষক ঝরেন রায়। ৪ বছর তার পিছে পিছে ঘুরেও টাকা ফেরত পাননি ওই নারী। দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগ জমা দেওয়ার খবর শুনেই তড়িঘড়ি করে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সব টাকা ফেরত দেয় ওই প্রধান শিক্ষক। গণশুনানিতে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করায় তাকে সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ দেয় কমিশন।
পঞ্চগড় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফ আহম্মেদ বলেন, ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গণশুনানিতে দুই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কারের জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা তো সরাসরি সাময়িক বহিষ্কার করতে পারি না। তাই অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হবে।
গণশুনানিতে সরকারি বেসরকারি ৪২ টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৮১টি অভিযোগ জমা হয়েছিল তার মধ্য ১১৮টি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ নিষ্পত্তিও করা হয়। জেলা প্রশাসন ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহযোগিতায় দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের ঠাকুরগাঁও এই গণশুনানির আয়োজন করে।
গণশুনানিতে অন্যদের মধ্যে দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন, জেলা প্রশাসক সাবেত আলী, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ডা. খালেদ তৌহিদ পুলকসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবর আজিজী বলেন, আপনাদের যুবক সন্তানেরা জীবন বাজি রেখে পথে নেমেছিল এবং অন্যায়ের প্রতিকার করেছে।
দেশের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে বিচার প্রধান, বাইতুল মোকাররমের খতিব থেকে শুরু করে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত দুর্নীতিতে রসগোল্লার মতো ডুবে ছিল। এতো দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে যে এখন আমরা সন্ধ্যা আগে বাড়ি ফিরতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী আমাদেরকেও সংবরণ করতে হবে। সেবাগ্রহীতাদের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। আমরা এটা ভুলে যাই। কখনো কখনো মাথায় কারো হাত থাকলে আমরা লাইনচ্যুত হই। হতে পারে তিনি বড় ভাই, রাজনীতিবিদ বা অন্য কেউ। কিন্তু আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত না ওই বড় ভাই একদিন হাত সরিয়ে নেবেন বা তিনিই একদিন থাকবেন না। অল্প কিছুদিন আগে এমন ঘটনা ঘটে গেছে। এর বড় সাক্ষী আপনার। তাই দুর্নীতি প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
টিজে/এসএন