বন্দর ব্যবহারকারীদের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম বন্দরের সেবাখাতে বর্ধিত শুল্ক গত ১৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে কার্যকর করা হয়।১৯৮৬ সালের পর এবারই প্রথম শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়, যা স্থগিতের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সেবাখাতে ৪১ শতাংশ বর্ধিত শুল্ক এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই শুল্ক কেন স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
রোববার (৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ মেরিটাইম ল' সোসাইটির (বিএমএলএস) দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক এবং বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালত নৌপরিবহন সচিব, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের আদেশ বাস্তবায়ন এবং চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বন্দর ব্যবহারকারীদের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম বন্দরের সেবাখাতে বর্ধিত শুল্ক গত ১৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে কার্যকর করা হয়।১৯৮৬ সালের পর এবারই প্রথম শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়, যা স্থগিতের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
পরে বাংলাদেশ মেরিটাইম ল' সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন আবদুল কাদির তিনটি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে আইনি নোটিশ দেন।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ২০ ফুট কনটেইনারপ্রতি গড় চার্জ ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা করা হয়েছে। এতে আমদানি কনটেইনারে ৫ হাজার ৭২০ টাকা এবং রপ্তানি কনটেইনারে ৩ হাজার ৪৫ টাকা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। এছাড়া জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানামার প্রতি ইউনিট চার্জ ৪৩ দশমিক ৪০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৬৮ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, শুল্ক মার্কিন ডলারে নির্ধারণ করায় ডলার-টাকা বিনিময় হারের ওঠানামায় ব্যয় আরও বাড়বে। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ছাড়াও ভোগ্যপণ্য সরবরাহ, শিল্প কাঁচামাল, উৎপাদন ব্যয় এবং মূল্যস্ফীতিতে চাপ পড়বে।
বিএমএলএস অভিযোগ করে, শুল্ক নির্ধারণে যেসব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যুক্ত ছিল, তাদের কারও বন্দর ব্যবস্থাপনা বা মেরিটাইম খাতে অভিজ্ঞতা নেই। পরামর্শক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও প্রক্রিয়াগত বৈধতা মানা হয়নি। এছাড়া 'পোর্ট অ্যাক্ট ১৯০৮'-এর ৩৩(৫) ধারায় গেজেট প্রকাশের ৬০ দিন পর ট্যারিফ কার্যকর করার বিধান থাকলেও ১৪ সেপ্টেম্বরের এসআরও ১৪ অক্টোবর থেকে কার্যকর করা হয়েছে, যা আইনবহির্ভূত ও অবৈধ।
নোটিশে বিএমএলএস ও সংশ্লিষ্ট অংশীদাররা শুল্ক কার্যকর স্থগিত রেখে পুনর্বিবেচনার জন্য স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে যৌথ পরামর্শ কমিটি গঠনের দাবি জানান। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প শুল্ক ইস্যুতে সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য রপ্তানি খাতে স্বস্তি এনেছে, অথচ দেশে নিজ উদ্যোগে শুল্ক বাড়ানো আত্মঘাতী পদক্ষেপ হবে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে দেশের অর্থনীতি ও জনস্বার্থ রক্ষায় আদালতের দ্বারস্থ হবে তারা।কোনো সাড়া না পাওয়ায় গত সপ্তাহে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে বিএমএলএস।
এমআর/এসএন