দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলে এক কোরিয়ান মুসলিম তরুণ নিজের বাড়ির একটি অংশে গড়ে তুলেছেন নামাজের স্থান। নামাজের এই স্থানটি এখন হয়ে উঠেছে জেজু দ্বীপের মুসলিম অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য আশ্রয়, স্বস্তি আর আত্মিক প্রশান্তির স্থান।
জেজুর সিওগুইপো শহরের মাছচাষ এলাকা সংলগ্ন এই বাড়ির মালিক ৩৫ বছর বয়সী নাসির হং-সুক সাং। তিনি পেশায় মাছের খামার পরিচালনাকারী। মুসলিম অভিবাসী শ্রমিকদের নামাজের কষ্ট দেখে নিজের ঘরের একাংশকে নামাজের স্থান বানিয়ে দেন তিনি।
‘দক্ষিণ কোরিয়ার হাওয়াই’ নামে পরিচিত জেজু দ্বীপ এখন পর্যটনের পাশাপাশি শ্রমনির্ভর অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। সরকারি হিসাবে ২০২৪ সালে এখানে নিবন্ধিত অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫৬৭ জন। এর মধ্যে অনেকে মুসলিম, যারা মূলত ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা থেকে এসেছেন।
নাসিরের অনুমান, শুধু তার অঞ্চলের প্রায় ৩০০টি মাছের খামারে দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন, আর তাদের অর্ধেকই মুসলিম।
দক্ষিণ কোরিয়ার এই দ্বীপের একমাত্র মসজিদ মাছচাষ এলাকা থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে জেজু সিটিতে অবস্থিত। ফলে শ্রমিকদের জন্য সেখানে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করা প্রায় অসম্ভব।
নাসির বলেন, আমি যখন জানতে পারলাম মসজিদে যেতে না পারার কারণে এবং নামাজের জায়গা না থাকায় তারা বেশিরভাগ সময় ডরমেটরির ছোট্ট কোণে নামাজ পড়ে, শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
নাসির আগে ইনচন শহরে একটি গেস্ট হাউস পরিচালনা করতেন, যেখানে প্রায় ৩০ শতাংশ অতিথি ছিলেন মুসলিম দেশগুলো থেকে। সেখানেই তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়, এবং ইসলাম সম্পর্কে তার ভুল ধারণা দূর হয়। পরে ২০২৩ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, মানুষ ইসলামকে ভুলভাবে বোঝে। অথচ ইসলাম মানে একে অপরের খেয়াল রাখা, প্রতিবেশীর প্রতি যত্নশীল থাকা। এটা খুবই সহজ এক জীবনবোধ।
তিনি নিজের দাদার পুরোনো বাড়িতে এক মাসের শ্রমে গড়ে তোলেন নামাজের এই স্থান। মার্চ মাস থেকে প্রতিদিন কাজের পর সময় ব্যয় করেছেন শুধু নামাজের এই ঘর সাজাতে।
‘আমি যখন এখানে এলাম, তখন আমার কাছে কোনো আসবাব ছিল না। কিন্তু প্রথমেই আমি এই নামাজের স্থান তৈরি করি। এটা সব সময় খোলা থাকে, যে কেউ এসে নামাজ পড়তে পারে। মানুষকে এখানে নামাজ পড়তে দেখলে আমার মনে অদ্ভুত শান্তি কাজ করে’ বলেন নাসির।
নামাজের স্থানটি ছোট হলেও পরিচ্ছন্ন ও স্নিগ্ধ। মেঝেতে সারি সারি নামাজের চাটাই, তাকভরা ইংরেজি, কোরিয়ান ও আরবি ভাষার কোরআন শরিফ। দেয়ালে সুনিপুণ আরবি ক্যালিগ্রাফি আর কিবলার দিকটি চিহ্নিত করে রাখা হযেছে।
জেজুতে গত ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন খালিদ হোসেন নামে ৩৮ বছর বয়সী এক পাকিস্তানি শ্রমিক। তিনি এখন নাসিরের মাছের খামারেই কর্মরত। তিনি নিয়মিত এখানে এসে নামাজ পড়েন। তিনি বলেন, জেজুর সংস্কৃতি, ধর্ম সবকিছুই আমাদের থেকে একেবারে আলাদা। তবে এখানে নামাজের জায়গা পেয়ে আমাদের জীবন অনেক সহজ হয়েছে।
তার সহকর্মী জাহিদ হুসাইনও পাকিস্তান থেকে এসেছেন । তিনিও নিয়মিত এখানে নামাজ পড়েন। হাসিমুখে বলেন, অবশেষে জুমার নামাজ পড়তে পারছি। এটা সত্যিই ভালো লাগার বিষয়।
জেজুর ঝলমলে সমুদ্রসৈকতের আড়ালে এই নিভৃত নামাজের স্থান এখন মুসলিম শ্রমিকদের জন্য হয়ে উঠেছে বিশ্বাস, ভালোবাসা ও সহমর্মিতার প্রতীক।
সূত্র : আরব নিউজ
এমআর/এসএন