নির্বাচনের পথরেখা ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সফল করতে হবে : জোনায়েদ সাকি

ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের ভিত্তি বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, আর এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে বিচার সংস্কার, নির্বাচন– তার যে পথরেখা ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেই পথরেখাকে সফল করতে হবে।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দলটির রাজনৈতিক দল হিসেবে এক দশক পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কেউ যাতে ঐক্যে কোনোভাবে ফাটল ধরাতে না পারে তার জন্য আপনাদের সদা প্রস্তুত, সদা সতর্ক এবং সদা চেষ্টা করে যেতে হবে। আমরা একটা ভীষণ জাতীয় সংকটের মধ্যে আছি। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের মধ্যে আছে। রাষ্ট্রব্যবস্থা এখনো বিপর্যয় কাটিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। আমাদের মৌলিক সংস্কার দরকার। সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দরকার এবং এই সবকিছু থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে আমাদের নির্বাচন দরকার। আমাদের দরকার গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন, যেটা একইসঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মধ্যে হতে হবে।

তিনি বলেন, যে রাষ্ট্র ন্যায়বিচার দিতে পারে না সেই রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও নতুন যাত্রা ন্যায়বিচারের ওপর দাঁড়াতে হবে। সব হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, সব ধরনের লুটপাট এবং ঘরে-বাইরে যত ধরনের অপরাধ হয়, মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায়, সেই রকম ব্যবস্থা আমাদের কায়েম করতে হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার ছাত্র, শ্রমিক, জনতা, এই দেশের মেহনতি, খেটে খাওয়া মানুষ এই রাষ্ট্রে তাদের ন্যায্য হিস্যা চায়। সেই অনুযায়ী অর্থনৈতিক পরিকল্পনাসহ রাষ্ট্রের সমগ্র পরিকল্পনা তৈরি হতে হবে। ফ্যাসিস্টরা ঘৃণা, বিভাজন, নানারকম ট্যাগিং করে তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চেয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বদলে আজ যারা ধর্মের নামে, আজ যারা জাতি পরিচয়ের নামে বিভাজন তৈরি করতে চায়, ট্যাগিং তৈরি করতে চায়, নানাভাবে ঘৃণা উৎপাদন করতে চায়, যারা মানুষকে অপমানিত করে, মব তৈরি করে নিজের মতো চাপিয়ে দিতে চায়, এই সমস্ত জবরদস্তিকে অভ্যুত্থান না বলে দিয়েছে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, এই দেশ স্বাধীন সার্বভৌম মর্যাদা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের মর্যাদা ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে আমরা সুসম্পর্ক করতে চাই। কিন্তু কোনো দেশের কাছে পরাধীন হতে চাই না। বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে ভারতীয় কর্তৃত্বকে না বলে দিয়েছে। যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এই দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কারো কাছে মাথা নোয়াবার জন্য নয়। বাংলাদেশের মানুষ আগেও রক্ত দিয়েছে, ভবিষ্যতেও রক্ত দিয়ে নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করবে।

গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ২০০২ সালে জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে গণসংহতি আন্দোলন। এরপর থেকে বাংলাদেশের মানুষের প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামে, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সম্পদ রক্ষার লড়াইয়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখে ২০১৫ সালের নভেম্বরে জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বশীল দল হিসেবে গণসংহতি আন্দোলন রাজনৈতিক দল আকারে আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য যে সংবিধান সংস্কার করতে হবে, তার জন্য প্রথম ডাক দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দেশের জনগণের যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে লড়াকু ভূমিকা রেখে চলেছে এই দল।

তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশের বিষয়বস্তুতে গণভোটের পদ্ধতি অংশে যেভাবে ধারাগুলো লেখা হয়েছে, সেগুলো স্পষ্ট নয়। আদেশের প্রতিটি ধারার বিষয়ে পরিষ্কার করে জনগণকে জানানো এবং নির্বাচনের আগেই টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও অন্যান্য মাধ্যমে গণভোটের বিষয়বস্তু ও প্রক্রিয়া বিষয়ে জনগণকে স্পষ্টভাবে অবহিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব।

সমাবেশের পর বর্ণাঢ্য এক মাথাল র‍্যালি শাহবাগ, বাংলামোটর ও মগবাজার এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মাথাল গণসংহতি আন্দোলনের দলীয় প্রতীক। দলের নেতাকর্মীদের মাথায় মাথাল পরে, হাতে ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে শোভাযাত্রা করেন।

সমাবেশ ও র‍্যালিতে আরও উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, দেওয়ান আবদুর রশীদ নীলু, মনির উদ্দীন পাপ্পু, হাসান মারুফ রুমী, নির্বাহী কমিটির সদস্য বাচ্চু ভুইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ, দীপক কুমার রায়, তারিকুল সুজনসহ কেন্দ্রীয় ও সারা দেশের নেতাকর্মীরা।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দরকার টেকসই পরিকল্পনা: পরিকল্পনা সচিব Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়ার জানাজার সময় নিয়ে বিএনপির বার্তা Dec 30, 2025
img
১৫ দিনে ১৫ কোটি টিকিটের আবেদন পেল ফিফা Dec 30, 2025
img
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীকের বিদায় : বান্নাহ Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়া ছিলেন আমাদের প্রতিরোধের প্রতীক: প্রেস সচিব Dec 30, 2025
img
সাবেক আ. লীগ নেতার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে আটক ২ Dec 30, 2025
img
এখন এফডিসির দিকে তাকাই না : ডলি জহুর Dec 30, 2025
img
নির্বাচনের মাঠে অপরাজেয় বেগম খালেদা জিয়া Dec 30, 2025
img
জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়া ভোর ৬টায় মৃত্যুবরণ করেন: ডা. জাহিদ Dec 30, 2025
img
মৃত ঘোষণার সময় বেগম জিয়ার পাশে তারেক রহমানসহ দলের বিশ্বস্ত মুখগুলো Dec 30, 2025
img
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জামায়াত আমিরের শোক Dec 30, 2025
img
জকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু সকাল সাড়ে ৮টায় Dec 30, 2025
img
৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও দাখিলকারীর সংখ্যা জানাল ইসি Dec 30, 2025
img
বাংলাদেশে এলে মনে হয় দেশেই আছি: সালমান মির্জা Dec 30, 2025
img
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই Dec 30, 2025
img
নিজ বাসভবনে হামলার খবর পুতিনই ফোনালাপে জানিয়েছেন: ট্রাম্প Dec 30, 2025
img
ঢাকা-৫ আসনের সাবেক এমপি প্রার্থী গ্রেপ্তার Dec 30, 2025
img
দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার বাস্তব চিত্র নিয়ে সোচ্চার পিয়া জান্নাতুল Dec 30, 2025
img
নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক শেষে ইরানে হামলার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের Dec 30, 2025