নরসিংদীর মধ্যম মাত্রা, আশুলিয়ার বাইপাইলের ভূমিকম্পের পর আবারও দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আতঙ্ক গোটা দেশে। আসুন ভূমিকম্প সম্পর্কে কিছু বিস্ময়কর তথ্য জেনে নেয়া যাক, যা অনেকেরই অজানা।
ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে প্লেটের নড়াচড়ায় এটি ঘটে। এ তথ্য সবাই জানলেও ভূমিকম্প সম্পর্কিত কয়েকটি বিস্ময়কর তথ্য রয়েছে যা বেশিরভাগ মানুষেরই অজানা।
আসুন এরকমই কিছু বিস্ময়কর তথ্য একে একে জেনে নিই-
১। পৃথিবীর ভূখণ্ড সাতটি বড় প্লেট এবং অসংখ্য ছোট ছোট সাব-প্লেট দিয়ে তৈরি যেগুলো ভূঅভ্যন্তরের নরম পদার্থের ওপর ভাসছে।
২। পৃথিবীতে কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে একাধিক ভূমিকম্প হয়। যে তালিকা মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিস) ওয়েবসাইটে গেলে আপনি দেখতে পারবেন। এ হিসেবে বছরে লাখ লাখ ভূমিকম্প হয় পৃথিবীতে।যুক্তরাষ্ট্রে ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জিওলজিক্যাল সার্ভে বলছে, প্রত্যেক বছর গড়ে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয় ১৭টি এবং ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয় একবার।
৩। গবেষকরা বলছেন, ভূমিকম্পের আগে শুধু ব্যাঙ নয়, পশুপাখিরাও বুঝতে পারে। এরা মাটির ছোট ছোট তরঙ্গ মানুষের তুলনায় অনেক বেশি অনুভব করতে পারে।
৪। ভূমিকম্প নিয়ে আরও একটি বিস্ময়কর তথ্য হলো বেশি মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে পর্বতের উচ্চতা কমে যায়। যেমন ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল নেপালে হওয়া ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা এক ইঞ্চির মতো কমে গিয়েছিল।
৫। গবেষকরা বলছেন, ভূমিকম্পের কারণে দিনের দৈর্ঘ্যও কমবেশি হতে পারে। কারণ বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে পৃথিবীর ভরের পরিবর্তন হয়। যার ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি সামান্য বেড়ে যায়। এতেই কমে যায় দিনের দৈর্ঘ্য।
২০০৯ সালের ১১ মার্চ জাপানের উত্তর-পূর্বে ৮.৯ মাত্রার ভূমিকম্পের কারণে সেদিনের দৈর্ঘ্য ১.৮ মাইক্রো সেকেন্ড কমে গিয়েছিল দাবি গবেষকদের।
৬। ভূঅভ্যন্তরের প্লেটের নড়াচড়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহর প্রত্যেক বছর গড়ে দুই ইঞ্চি করে লস অ্যাঞ্জেলসের দিকে সরে যাচ্ছে। আপনি কি জানেন, এই একই গতিতে আমাদের আঙ্গুলের নখ বাড়ে?
৭। ২০১০ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিলো চিলির কনসেপসিওন শহরে। এতে পৃথিবীর শক্ত উপরিভাগে ফাটল ধরে এবং শহরটি ১০ ফুট পশ্চিমে সরে যায়।
৮। আপনি কি জানেন, পৃথিবীতে যত ভূমিকম্প হয় তার ৯০ শতাংশই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রিং অফ ফায়ার এলাকাজুড়ে?
৯। ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগ বলছে, ২০০৯ সালে ইতালিতে ভূমিকম্পের সময় এক ধরনের ব্যাঙ সেখান থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিলো এবং ফিরে এসেছিলো ভূমিকম্পের পরে। বলা হয়, এই ব্যাঙ সেখানকার পানির রাসায়নিক পরিবর্তন খুব দ্রুত শনাক্ত করে।
তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্লেট সরে যাওয়ার কারণে মাটির নিচ থেকে যে গ্যাস নির্গত হয় তার কারণে ভূমিকম্পের আগে পুকুর, খাল-বিল, হ্রদ, জলাশয়ের স্থির পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। এ পানি সামান্য উষ্ণও হয়ে ওঠে।
১০। ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পরও পানিতে ঢেউ থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূকম্পনের পর পানিতে এর তরঙ্গ দীর্ঘসময় থাকতে পারে। এ অবস্থাকে শ্যাস বলা হয়। তাই ভূমিকম্পের সময় পানি যেমন পুকুর, সমুদ্র, সুইমিং পুলের সামনে থাকা নিরাপদ নয়।
টিকে/