যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হতে সময়সীমা বাড়ছে বিদেশি কর্মীদের

যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে নিয়মিত অভিবাসীদেরও থাকতে হতে পারে দীর্ঘ অপেক্ষায়। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেছেন, নিয়মিত অভিবাসীদের স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাসের অনুমতি দেওয়ার আগে সর্বোচ্চ ২০ বছর অপেক্ষায় রাখার পরিকল্পনা করছে সরকার।

নিয়মিত অভিবাসন কমানোর লক্ষ্যেই এমন প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছেন শাবানা মাহমুদ। কয়েক দিন আগে অনিয়মিত অভিবাসনের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তনের কথা বলেন তিনি।
অনিয়মিতের পাশাপাশি নিয়মিত অভিবাসনের ওপর এমন কঠোর পদক্ষেপের কিছুটা জনমত জরিপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ দেশটিতে অভিবাসনবিরোধী নেতা নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন ডানপন্থি রিফর্ম ইউকে পার্টির প্রতি জনসমর্থন বেড়ে চলেছে। আবার অতিরিক্ত চাপের মুখে থাকা দেশটির সরকারি সেবার উপর চাপ কমানোর একটি প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখা হচ্ছে এই উদ্যোগকে।

অভিবাসী পরিবারে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেছেন, এই দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করা কোনো অধিকার নয়, বরং একটি সুবিধা, যা অর্জন করতে হয়।
চলতি বছরের মে মাসে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে যোগ্যতার সময়সীমা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করার কথা ভাবা হচ্ছে।

মাহমুদ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, যারা নিয়মিত অভিবাসনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যে এসেছেন এবং ১২ মাসের বেশি সময় ধরে সুবিধা নিয়েছেন, তাদের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে আবেদন করার আগে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। আর যারা অনিয়মিত পথে এসেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই অপেক্ষার সময় হবে ৩০ বছর।
তিনি বলেন, ব্রেক্সিটের পর স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিচর্যা ভিসা নিয়ে আসা কিছু ‘কম যোগ্যতাসম্পন্ন’ কর্মী এবং যারা ১২ মাসের কম সময় ধরে সুবিধা নিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অপেক্ষার সীমা ১৫ বছর।

এই পরিকল্পনা আগামী ১২ সপ্তাহ ধরে যাচাই-বাছাই করা হবে। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশা করছেন, আগামী বছরের এপ্রিল থেকে এটি কার্যকর হবে। তবে, ডাক্তার ও নার্সদের মতো সরকারি সেবাখাতের কর্মীদের ক্ষেত্রে সময়সীমা রাখা হয়েছে পাঁচ বছর। উচ্চ আয় যাদের, তারা তিন বছর পর যোগ্য হবেন বলেও জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

শাবানা মাহমুদ বলেছেন, অভিবাসন ‘‘সবসময় ব্রিটেনের গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ’’ হয়ে থাকবে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসনের মাত্রা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন সরকার।
সরকার অনুমান করছে, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নিট অভিবাসন বাড়ার কারণে ২০২৬ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ১৬ লাখ মানুষ আইনগতভাবে দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের যোগ্য হবেন।

• অতি ডানপন্থি বয়ান
শাবানা মাহমুদের সংস্কার প্রস্তাবের অধীনে, যারা স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে থাকতে চান তাদের কোনো প্রকার অপরাধের রেকর্ড থাকতে পারবে না, উচ্চ মানের ইংরেজি জানতে হবে, কোনো ঋণ থাকতে পারবে না এবং তিন বছর সামাজিক নিরাপত্তা কর পরিশোধ করতে হবে।

স্থায়ী বা অনির্দিষ্টকালের বসবাসের অনুমতির (আইএলআর) অর্থ হলো, একজন ব্যক্তি ব্রিটেনে কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়াই বসবাস, কাজ এবং পড়াশোনার সুযোগ পাবেন। একইসঙ্গে এটি যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব পাওয়ার একটি প্রধান পথ।

চলতি বছরের বেশিরভাগ সময় জনমত জরিপে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির চেয়ে দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা অতি ডানপন্থি রিফর্ম ইউকে পার্টি জানিয়েছে, তারা অনির্দিষ্টকাল ধরে বসবাসের অনুমতি পুরোপুরি বাতিল করবে।

এর পরিবর্তে, অভিবাসীদের প্রতি পাঁচ বছর পর ভিসার জন্য পুনরায় আবেদন করতে হবে। এমনকি, ইতিমধ্যে বসবাসের অনুমতি পাওয়া লাখ লাখ মানুষের ক্ষেত্রেও এই নীতি প্রযোজ্য হবে। মাহমুদ বলেছেন, লেবার পার্টির পরিকল্পনা ইতিমধ্যে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়া মানুষদের প্রভাবিত করবে না।
তিনি শরণার্থীদের সুরক্ষা কমানোর পরিকল্পনা ঘোষণা দিয়েছেন গত সোমবার। যেসব দেশ অনিয়মিত অভিবাসীদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করবে তাদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞারও হুমকি দিয়েছেন তিনি। পরিকল্পনাটি শরণার্থী বিষয়ক এনজিওগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছে এবং লেবার পার্টির বামপন্থি অংশেও অস্বস্তি তৈরি করছে।
এদিকে, শাবানা মাহমুদের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা। তিনি বলেছেন, শাবানা মাহমুদ ‘‘জনপ্রিয়ধারার অতি ডানপন্থি’’ এবং ‘‘জাতিগত স্টেরিওটাইপ’’ বক্তব্য রেখে চলেছেন।

সম্প্রতি শাবানা মাহমুদ বলেছেন, ৭০০ আলবেনীয় পরিবার করদাতাদের অর্থে পরিচালিত আবাসনে বসবাস করছেন, কিন্তু তাদের আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হয়েছে। মূলত এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এমন মন্তব্য করেছেন এডি রামা। ইনফোমাইগ্রেন্টস।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আমার মুখ নাকি প্রেমে ব্যর্থ একটা মানুষের মতো : ধানুশ Nov 23, 2025
img
শুটিং করতে গিয়ে ফাতিমার খিঁচুনি, উদ্বিগ্ন বিজয় Nov 23, 2025
img
নির্বাচনী হলফনামায় বিদেশি সম্পদের বিবরণীও দিতে হবে: দুদক চেয়ারম্যান Nov 23, 2025
img
পেরুর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেতসি চাভেসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা Nov 23, 2025
img
২ দিনে টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি ২৪ কোটি টাকা! Nov 23, 2025
img
‘চিরদিনই তুমি যে আমার’- এর সেটে ফিরলেন জিতু কমল Nov 23, 2025
img
নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ চিত্রনায়িকা পপির Nov 23, 2025
img
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে তাইজুলের ২৫০ উইকেট Nov 23, 2025
img
আমার বাবা ও মা অসমের বড় সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন: পাপন Nov 23, 2025
img
বায়োপিক একেবারেই পছন্দ করি না: আবির চ্যাটার্জি Nov 23, 2025
img
রৌমারী শুল্ক স্থলবন্দরে পাথরবোঝাই ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ Nov 23, 2025
img
একসময় বাড়ি ভাড়া চোকানোর মতো ক্ষমতাও আমার ছিল না: কার্তিক আরিয়ান Nov 23, 2025
img
সাবেক এমপি এসএ খালেকের ছেলে সাজুকে বিএনপির শোকজ Nov 23, 2025
img
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এনসিপি নেতাদের সাক্ষাৎ Nov 23, 2025
img
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্লট জালিয়াতির মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন আজ Nov 23, 2025
img
ত্রিদেশীয় সিরিজে মাঠে নামছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল Nov 23, 2025
img
তাইজুলের মাইলফলকে উচ্ছ্বসিত সাকিব আল হাসান, শুভকামনায় ৪০০ উইকেট Nov 23, 2025
img
সশরীরে নয়, গুমের মামলায় ভার্চুয়ালি হাজিরা দিতে চান সেনা কর্মকর্তারা Nov 23, 2025
img

মন্ত্রী স্টিভেন সিম

‘শ্রমিক শোষণের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি’ Nov 23, 2025
img
দেবের সঙ্গে রোম্যান্স হবে, ভাবতেও পারিনি: জ্যোতির্ময়ী Nov 23, 2025