ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ভূমি মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক স্থিতিশীলতার অন্যতম প্রধান ভিত্তি। এ জন্য দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজন ভূমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।
এ লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় জনবান্ধব অটোমেটেড ভূমিসেবা নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অটোমেটেড মিউটেশন সিস্টেম ২.১ চালুর মাধ্যমে ভূমিসেবায় হিউম্যাস টাচ আরো কমিয়ে ফেলা হয়েছে।
নামজারির জন্য নাগরিকদের মাত্র একবার উপজেলা ভূমি অফিসে আসতে হবে। এর মাধ্যমে জালিয়াতি করে নামজারি ও ভূমি হস্তান্তর প্রতিরোধ করা যাবে। ভূমিসেবায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে ‘ভূমি’ অ্যাপ, হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা।
ভূমি অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান ও দাখিলা সংগ্রহ, নামজারির ফি প্রদান, ডিসিআর ও খতিয়ান সংগ্রহ এবং খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপি ও মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ করতে পারবেন।
পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ভূমিসেবা ‘ভূমি’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
আজ সোমবার রাজধানীর ভূমি ভবনের সেমিনার হলে ‘অটোমেটেড মিউটেশন সিস্টেম ২.১ ও ভূমিসেবার ইন্টিগ্রেটেড মোবাইল অ্যাপ ‘ভূমি’-এর শুভ উদ্বোধন’ এবং ভূমিসেবা সিস্টেমে জয়পুরহাট জেলার শতভাগ খতিয়ান ও হোল্ডিংয়ের নির্ভুল তথ্য উন্মুক্তকরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাদের ভূমিসেবার বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার ২০২৫ প্রদান করা হয়।
ভূমি উপদেষ্টা বলেন, প্রযুক্তির মধ্যে আমরা নিজেদের যত বেশি সম্পৃক্ত করব আমাদের ভোগান্তি তত কমবে। অন্যদিকে ভূমিসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভরতা অনেক হ্রাস পাবে।
অটোমেটেড মিউটেশন সিস্টেম ২.১ ব্যবস্থায় নামজারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ববর্তী মালিকের খতিয়ান থেকে জমি কর্তন হয়ে নতুন মালিকের খতিয়ানে চলে যাবে। এর ফলে তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে একই জমি একাধিকবার বিক্রয় করার সুযোগ বন্ধ হবে।
এ ছাড়া নামজারির সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হোল্ডিং তৈরি হয়ে যাবে এবং ভূমি মালিক অ্যাপসের মাধ্যমে ঘরে বসে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারবেন। এতে দুর্নীতি ও জন-হয়রানি অনেক কমে যাবে। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যন্ত্রের পেছনের মানুষটার মানসিকতা। সেই মানুষটার উন্নত মানসিকতাই নিশ্চিত করবে জনবান্ধব ভূমিসেবা। সারা দেশে ভূমিসেবা সিস্টেমে শতভাগ খতিয়ান ও হোল্ডিং এন্ট্রি করা এবং ভুল সংশোধনের জন্য ইউএনডিপি, বাংলাদেশ-এর মাধ্যমে কাজ শুরু করা হয়েছে। এ বছরের ১৩ আগস্ট ফেনী জেলায় এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। বর্তমানে ৮টি জেলায় পাইলটিং প্রায় শেষ পর্যায়ে।
পর্যায়ক্রমে শতভাগ খতিয়ান ও হোল্ডিং এন্ট্রি এবং ভুল সংশোধনের এ কার্যক্রম সারা দেশে বাস্তবায়িত হবে। এর মাধ্যমে ভূমিসেবা সিস্টেম আরো সহজ, জনবান্ধব ও স্বয়ংক্রিয় হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘ভূমি’ অ্যাপ নিজে ব্যবহার করার পাশাপাশি জনগণকে ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় জনগণকে ঝামেলাহীন সেবা প্রদানে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি ভূমি সেবার জন্য যে সফ্টওয়্যার তৈরি করা হবে, তা যেন নাগরিকদের ব্যবহারবান্ধব হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ভূমি সেবার ইন্টিগ্রেটেড মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের সময় সার্ভার অবশ্যই নিরাপদ রাখতে হবে, যাতে ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। দিনশেষে পেপারলেস ভূমি ব্যবস্থাপনার স্বপ্ন দেখেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভূমিসেবায় কর্মকৃতি-ভিত্তিক মূল্যায়ন করে আট বিভাগের ৮ জন শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, ৮ জন সার্ভেয়ার, ৭ জন কানুনগো, ৯ জন সহকারী কমিশনার (ভূমি), ৮ জন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, ৮ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), ৮ জন জেলা প্রশাসক ও ২ জন বিভাগীয় কমিশনারকে সনদ ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এ. জেড এম সালাহউদ্দিন নাগরী এবং ইউএিনডিপি-বাংলাদেশ-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম আ্যাডভাইজার-গভর্নেন্স ড্রাগান পপোভিচ।