ঢাকায় ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ৪০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে : রাজউক

টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্ট বা ফাটলরেখায় ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের ৪০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে। এতে দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা আছে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নিজেদের একটি সমীক্ষার বরাত দিয়ে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। যদিও রাজধানীর ভবনগুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী নির্মাণ নিশ্চিত করা এবং নগর পরিকল্পিত করার দায়িত্ব রাজউকের।

রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) ভবনে ‘ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাসে প্রস্তুতি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় রাজউকের পক্ষ থেকে সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করা হয়। ঢাকায় গত শুক্র ও শনিবার চার দফা ভূমিকম্পের পর গতকাল সোমবার দুপুরে এই সেমিনার আয়োজন করে রাজউক। এতে সরকারে দুজন উপদেষ্টা, রাজউকের চেয়ারম্যান, জরুরি সেবা প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধি, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ ভূমিকম্প ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজধানীর ভবনগুলোর ঝুঁকি মূল্যায়নের কাজ শুরু করার আহ্বান জানান।

এ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষকে যুক্ত করে ভবন মূল্যায়নের কাজ শুরুর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, অপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই।

রাজউক এবং সিটি করপোরেশনকে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, যেখানে ভাঙতেই হবে, সেখানে যেন আর কোনো রকম নমনীয়তা না দেখানো হয়, সেটা খুবই জরুরি। প্রয়োজনে রাজউককে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

সেমিনারে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, রাজউকের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খুব তাড়াতাড়ি ‘টাউন ইম্প্রুভমেন্ট অ্যাক্টের’ সংশোধন হচ্ছে।

ভূমিকম্প হলে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হবে, তা নিয়ে রাজউকের সমীক্ষাটি করা হয় ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের’ (২০১৫-২০২৪) রাজউক অংশের অর্থায়নে। ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

দেশে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৮৫ সালে। এই ভূমিকম্প হয়েছিল মধুপুর ফাটলরেখায় (ফল্ট)। এরপর ১৪০ বছর হতে চললেও এত বড় ভূমিকম্প ওই ফাটলরেখায় আর হয়নি।

রাজউকের সেমিনারে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মো. ওয়াহিদ সাদিক। তিনিই মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হলে কী ক্ষতি হতে পারে, তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মধুপুর ফাটলরেখায় ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯টি ভবন ধসে পড়তে পারে, যা মোট ভবনের ৪০ শতাংশের কিছু বেশি। এতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হতে পারে, যা প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার সমান। ভবনগুলো মেরামত অথবা পুনর্নির্মাণে ব্যয় হবে ৪ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার (৫ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা)।

ভূমিকম্পের এই ঝুঁকির কথা দেশে বহু বছর ধরেই বলা হচ্ছে। তারপরও ঢাকায় পুরোনো, ঝুঁকিপূর্ণ, নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা এবং অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ভবন নির্মাণের সময়ই আইনকানুন মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজউকের।

১৯৫৬ সালে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার উন্নয়ন ও পরিবর্ধনের বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে ‘ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি)’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ডিআইটি ১৯৮৭ সালে রূপ নেয় রাজউকে।

রাজউকের রূপকল্প হলো ‘আওতাধীন এলাকায় পরিকল্পিত ও টেকসই নগরায়ণ এবং বাসযোগ্য আবাসন নিশ্চিতকরণ।’ সংস্থাটির অভিলক্ষ্যে সবার জন্য নিরাপদ আবাসন এবং দুর্যোগ সহনশীল নগর বিনির্মাণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সংস্থাটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রবল। নগরকে পরিকল্পিত করার বদলে আবাসন প্রকল্প করার মাধ্যমে প্রভাবশালীদের প্লট দেওয়ার দিকে বেশি নজর দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে রাজউকের বিরুদ্ধে।

নগর–পরিকল্পনাবিদ এবং জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, রাজউকের তিনটি কাজ। পরিকল্পনা তৈরি করা, উন্নয়ন করা এবং উন্নয়নের নিয়ন্ত্রণ করা। উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তারা হতাশাজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, বড় ভূমিকম্পে ৪০ শতাংশ ভেঙে পড়বে বলা হচ্ছে, এর মূল দায় রাজউকের। ভবনমালিক এবং প্রকৌশলীরাও দায় এড়াতে পারেন না।

পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত ১ লাখ মানুষ, বলছে জার্মান গবেষণা Nov 25, 2025
img
কুমিল্লা বিভাগের দাবিতে ঢাকায় সমাবেশ ও মানববন্ধন Nov 25, 2025
img
‘পরিমার্জিত’ শান্তি পরিকল্পনায় একমত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন Nov 25, 2025
img
নেসকোর প্রিপেইড মিটার বাতিলের দাবিতে নাটোরে সড়ক অবরোধ Nov 25, 2025
img
১০ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকার জ্বালানি তেল কিনবে সরকার Nov 25, 2025
img
আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে ঢাকার আকাশ Nov 25, 2025
img
এভারটনের কাছে ১-০ গোলে হারল ম্যানইউ Nov 25, 2025
img
সিন্ধু অঞ্চলকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তানে নতুন উত্তেজনা Nov 25, 2025
img

চট্টগ্রাম বন্দর প্রসঙ্গে তারেক রহমান

দেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকারের দ্বারা নির্ধারিত হওয়া উচিত Nov 25, 2025
img
রপ্তানি সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালা Nov 25, 2025
img
কুয়ালালামপুরে শপিং সেন্টারে অভিযান, বাংলাদেশিসহ আটক ১২৪ Nov 25, 2025
img
দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান চতুর্থ Nov 25, 2025
img
হঠাৎ শি চিনপিং ও ট্রাম্পের ফোনালাপ Nov 25, 2025
img
বার্সেলোনা, ম্যানসিটির চ্যাম্পিয়নস লিগসহ আজকে যত খেলা Nov 25, 2025
img
ভূমিকম্পের আতঙ্ক থেকে জনগণকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব: প্রধান উপদেষ্টা Nov 25, 2025
img
চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে ৮ ধরনের খাবার Nov 25, 2025
img
ভাগ্যের চেয়ে প্রতিভাই বড় শক্তি: কৃতি শ্যানন Nov 25, 2025
img
১২ হাজার বছর পর জেগেছে ইথিওপিয়ার হাইলি গুবি আগ্নেয়গিরি Nov 25, 2025
img
২৫ নভেম্বর : ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা Nov 25, 2025
img
বিশ্বকাপ শুরুর আগেই অবসর নিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক Nov 25, 2025