‘প্রশাসনকে আমরা বললে উঠবে, বসবে, মামলা দেবে’ এমন মন্তব্যের সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতে জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীর আরেকটি বক্তব্য সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই বক্তব্যে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘এক বছর কাজ করার জন্য ড. ইউনূস ঘোষণা করেছেন শাহজাহান চৌধুরী গার্ডিয়ান অব চিটাগাং।’
এদিকে জামায়াত নেতার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাকে এ রকম কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এ রকম কিছু হলে আমরা জানার কথা। একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় অফিস আদেশের মধ্য দিয়ে হয়ে থাকবে। মৌখিকভাবেও আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ নভেম্বর রাতে জামায়াতের সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিনি এই বক্তব্য দেন। সম্প্রতি বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
৩ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ওই বক্তব্যে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমি দুইবারের এমপি, চারবার পার্লামেন্ট নির্বাচন করেছি। ৪২ বছর সাতকানিয়া, লোহাগাড়ার জনসাধারণকে বুকে নিয়ে আমি বারবার আপনাদের কাছে এসেছি। আপনারা আমাকে সম্মানিত করেছেন। ১৯৯১-তে এমপি বানিয়েছেন, ২০০১ সালে নির্বাচিত করেছেন। আজকে বাংলার সাতকানিয়া-লোহাগাড়া নয়, পুরো চট্টগ্রামে এক বছর ধরে কাজ করার জন্য ড. ইউনূস ঘোষণা করেছেন, শাহজাহান চৌধুরী গার্ডিয়ান অব চিটাগাং। চট্টগ্রামের অভিভাবক হচ্ছেন শাহজাহান চৌধুরী।’
শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমি এমপিগিরি রাজনীতির মাধ্যমে কোনো ধান্দাবাজি করিনি। তাই আজকে আপনাদের দুয়ারে এসেছি। আগামী নির্বাচনে আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ, আসুন শুধুমাত্র কাঞ্চনা নয়, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া নয়, চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে সেকেন্ড সিঙ্গাপুর করার স্বপ্ন নিয়ে আজকে চট্টগ্রামে রাজনীতি করছি। তাই আমার কাছে কোনো জামায়াতে ইসলামী নয়, কোনো রাজনীতি নয়, জাতি, ধর্ম-বর্ণ নয়, আমি মানুষকে ভালোবাসি। মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করেছি। ৫৪ বছর ধরে রাজনীতি করে ৪২ বছর সাতকানিয়া লোহাগাড়ার নির্যাতিত, নিপীড়িত, অসহায়, নিরন্ন মানুষের খেদমত করেছি। আজকে সাতকানিয়া লোহাগাড়ার কী অবস্থা। রাস্তা নেই, ঘাট নেই, ব্রিজ নেই, কালভার্ট নেই।’
এ বিষয়ে কথা বলতে জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম জোনাল হেড মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি অবান্তর কথাবার্তা। এ ধরনের কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তা ছাড়া দেশ চালাচ্ছে এখন অন্তর্বর্তী সরকার। শাহজাহান চৌধুরী একজন রাজনীতিবিদ। তাকে কেন এই দায়িত্ব দেওয়া হবে।’
‘প্রশাসন আমাদের কথায় উঠবে, বসবে’—শাহজাহান চৌধুরীর মন্তব্য নিয়ে যা বলল জামায়াত
এর আগে গত শনিবার নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে জামায়াতের নির্বাচনী দায়িত্বশীলদের সমাবেশে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘যার যার নির্বাচনী এলাকায়, প্রশাসনে যারা আছে, তাদের অবশ্যই আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।’
শাহজাহান চৌধুরী আরও বলেন, ‘প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারকে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। পুলিশকে আপনার পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে। ওসি সাহেব আপনার কী প্রোগ্রাম সকাল বেলায় জেনে নেবে, আর আপনাকে প্রটোকল দেবে। টিএনও (ইউএনও) সাহেব যা উন্নয়ন এসেছে, সমস্ত উন্নয়নের হিসেব যিনি নমিনি (জামায়াতের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী), তার থেকে খুঁজে বের করতে হবে।’ তাঁর এ বক্তব্য প্রচারের পর সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এসএন