দশ মিনিটের মধ্যে গোল হজমের ধাক্কা সামলে উঠতে একটু যেন সময় লাগল রিয়াল মাদ্রিদের। আগের তিন ম্যাচে জয়হীন দলের ভার কাঁধে তুলে নিলেন কিলিয়ান এমবাপে। একাই করলেন চার গোল। তবে অলিম্পিয়াকোসের হার না মানসিকতায় লড়াই হলো জমজমাট। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ন্যূনতম ব্যবধানে জয় পেল শাবি আলোন্সোর দল।
প্রতিপক্ষের মাঠে বুধবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচটি ৪-৩ গোলে জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। স্বাগতিকদের তিন গোলদাতা চিকিনিয়ো, মেহদি তারেমি ও এল কাবি।
ইউরোপ সেরার মঞ্চে অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে এর আগে দুই লেগের লড়াই হিসেবে মোট আটবার দেখা হয় রিয়ালের। ঘরের মাঠে প্রতিবারই হাসিমুখে মাঠ ছাড়ে তারা; কিন্তু অ্যাওয়ে ম্যাচে তাদের জয় ছিল না একটিও। সেই গেরো এবার কাটল মাদ্রিদের দলটির।
পাঁচ ম্যাচে চার জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে প্রাথমিক পর্বের টেবিলে পঞ্চম স্থানে উঠল প্রতিযোগিতাটির সফলতম ক্লাবটি। আসরে এখন পর্যন্ত জয়ের স্বাদ না পাওয়া অলিম্পিয়াকোস ২ পয়েন্ট নিয়ে আছে ৩৩ নম্বরে।
ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই দারুণ আক্রমণ শাণায় রিয়াল। ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শট নেন ভিনিসিউস জুনিয়র, একহাত দিয়ে বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠান গোলরক্ষক। এর পাঁচ মিনিট পর লক্ষ্যে প্রথম শট নিয়েই এগিয়ে যায় অলিম্পিয়াকোস। ডি-বক্সের বাইরে নিজেদের মধ্যে দারুণভাবে বল দেওয়া-নেওয়া করে, জোরাল নিচু শটে পোস্ট ঘেঁষে গোলটি করেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার চিকিনিয়ো।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই গত রাউন্ডে লিভারপুলের বিপক্ষে হারের পর, লা লিগায় গত দুই রাউন্ডে হোঁচট খায় রেয়াল। হতাশাময় পথচলায় এখানেও শুরুতে গোল হজম করায় নতুন শঙ্কা জাগে। রক্ষণের দুর্বলতায় ১৯তম মিনিটে আবার গোল হজম করতে বসেছিল তারা; চিকিনিয়োর জোরাল শটটি ঝাঁপিয়ে রুখে দেন আন্দ্রি লুনিন।
২২তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে উঠে সমতা টানেন এমবাপে। ভিনিসিউসের থ্রু পাস ধরে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নিচু শটে বল জালে পাঠান ফরাসি ফরোয়ার্ড। তিন ম্যাচ পর গোল পেলেন তিনি। এরপর, পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে আরও দুবার জালে বল জড়িয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন এমবাপে।
২৪তম মিনিটে ডান দিক থেকে আর্দা গিলেরের ক্রসে হেডে দলকে এগিয়ে নেন সাবেক পিএসজি তারকা। এরপর এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার পাস পেয়ে, অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে, কোনাকুনি শটে ব্যবধান বাড়ান বিশ্বকাপ জয়ী ফরোয়ার্ড। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করলেন এমবাপে, প্রথমটি করেছিলেন কয়রাত আলমাতির বিপক্ষে।
হ্যাটট্রিক করতে এমবাপের সময় লাগে ৬ মিনিট ৪২ সেকেন্ড, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে যা দ্বিতীয় দ্রুততম। রেকর্ডটি মোহামেদ সালাহর দখলে, ২০২২ সালে রেঞ্জার্সের বিপক্ষে ৬ মিনিট ১৩ সেকেন্ডে হ্যাটট্রিক করেছিলেন লিভারপুল তারকা।
৩৬তম মিনিটে ব্যবধান বাড়তে পারতো; তবে অঁহেলিয়া চুয়ামেনির শট ক্রসবার কাঁপায়। আর বিরতির আগে দুর্দান্ত সেভ করে দুই গোলের ব্যবধান ধরে রাখেন লুনিন। এল কাবির জোরাল হেড দারুণ ক্ষীপ্রতায় ঝাঁপিয়ে আটকান ইউক্রেইনের গোলরক্ষক। প্রথমার্ধে জালে বল পাঠিয়েও অফসাইডের কারণে গোল না পাওয়া ভিনিসিউস ৪৮তম মিনিটে জোরাল শট নেন, কিন্তু পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায় বল।
এর চার মিনিট পর ব্যবধান কমিয়ে লড়াইয়ে নতুন করে নাটকীয়তা ফেরান মেহদি তারেমি। হেডে গোলটি করেন ইরানের ফরোয়ার্ড। এই গোলে গ্যালারিতেও যেন প্রাণ ফেরে।
৫৯তম মিনিটে চতুর্থ গোলটি করেন এমবাপে এবং জয়ের পথে এগিয়ে যায় রিয়াল। এই গোলে দারুণ অবদান ভিনিসিউসের। সতীর্থের উঁচু করে বাড়ানো থ্রু বল ধরে, একজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে ছয় গজ বক্সের মুখে কাটব্যাক করেন তিনি আর আলতো শটে ব্যবধান ফের দুই গোলের করেন এমবাপে।
পাঁচ ম্যাচে ৯ গোল করে এখন আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। রিয়ালের জার্সিতে এই মৌসুমে তার মোট গোল হলো ২২টি। তবে এই গ্রিক দলটি শেষের আগে যে হাল ছাড়তে রাজি নয়, তার প্রমাণ আরেকবার মেলে ৮১তম মিনিটে। বাঁ দিক থেকে সতীর্থের ক্রসে হেডে স্কোরলাইন ৪-৩ করেন মরক্কোর ফরোয়ার্ড এল কাবি।
এরপর রক্ষণে বাড়তি মনোযোগ দেয় রিয়াল। অলিম্পিয়াকোসও চাপ বাড়ায়। শেষ সময়ে কয়েকটি সুযোগও তৈরি করে তারা; কিন্তু আর কোনো সাফল্য পায়নি দলটি।
প্রথমবার অলিম্পিয়াকোসের মাঠ থেকে বিজয়ীর বেশে ফিরল রিয়াল মাদ্রিদ।
এমআর/টিএ