২০ শতাংশ পরিবহন রেল-নৌপথে নেওয়ার পরামর্শ উপদেষ্টার

রেল ও সড়ক খাতে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, অপচয় আর অযৌক্তিক প্রকল্পের সমালোচনা করেছেন রেল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

তার মতে, শুধু সড়ক ৮ লেন থেকে ১০ লেন করলেই যানজট কমবে- এ ধারণা ভুল। সড়কের ওপর চাপ কমাতে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের অন্তত ২০ শতাংশ রেল ও নৌপথে নিতে হবে।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে সড়ক ভবনে সড়ক বিভাগ ও রেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেন, রেল খাতে ভয়ঙ্কর দুর্নীতি হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক পদ সৃষ্টি করে দুর্নীতির পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম–দোহাজারী রেলপথ প্রকল্পে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। পর্যাপ্ত লোকোমোটিভ বা কোচ নেই—কারণ এসব জায়গায় দুর্নীতিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সরকার বড় বড় রেললাইন নির্মাণ করেছে, কিন্তু সেগুলো কাজে আসেনি। সারাদিনে একটি ট্রেন চলে, আর যাত্রী হয় কেবল ১৫–২০ জন। শুধু সড়ক নয়, রেলপথ ও নদীপথকে একসঙ্গে বিবেচনায় এনে মাল্টিমডেল পরিবহনব্যবস্থা চালু করার প্রয়োজন রয়েছে।

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ব্যক্তিগত পছন্দ–অপছন্দ বা রাজনৈতিক নির্দেশনায় আর কোনো সড়ক হবে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ইটনা–মিঠামইন সড়কের কথা বলেন। ১০ হাজার কোটি টাকার এই সড়ক পরিবেশ, কৃষি ও মৎস্য সম্পদে ক্ষতি করেছে, কিন্তু গাড়ি চলে অতি সামান্য। তাঁর বক্তব্য, রাষ্ট্রের অর্থ দিয়ে এ ধরনের ফরমায়েশি সড়ক আর করা যাবে না।

সন্দ্বীপে তার নিজ এলাকায় রাস্তা করার দাবিও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। ‘নানার বাড়ি পিঠা খেতে যাওয়ার জন্য রাস্তা হবে না’ এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেকোনো প্রকল্পের অর্থনৈতিক ও সামাজিক যুক্তি থাকতে হবে।

পদ্মা সেতু ও যমুনা সেতুর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বড় প্রকল্প নিয়ে আশা তৈরি হলেও প্রত্যাশিত শিল্পায়ন হয়নি। মাতারবাড়িতে নেওয়া সড়ক প্রকল্পের প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ৪৭৬ কোটি টাকা—যা দেশের জন্য অস্বাভাবিকভাবে ব্যয়বহুল।

সীমান্ত সড়ক পরিদর্শনের কথা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, দেশের সম্পদ সীমিত। একই অর্থ দিয়ে হাসপাতাল বা রাস্তা কোনটি বেশি প্রয়োজন, তা বিবেচনা করতে হবে।

নতুন কালুরঘাট সেতুর কাজ চলমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, নদীর গতিপথ দ্রুত বদলায়, তাই পরিকল্পনা নিতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। অতীতে নিচ দিয়ে জাহাজ চলাচল করতে না পারায় অনেক সেতু পুনরায় ঠিক করতে হয়েছে। কালুরঘাট সেতু নদী শাসনের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ৩৭৫ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেছি। তাই এক-দুই হাজার কোটি টাকাকে ছোট করে দেখা যাবে না।’ জমির বহুমুখী ব্যবহার উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়কের জন্য জমি পাওয়া এখন সহজ নয়; তাই সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রয়োজন অনুযায়ী, হিসাব–নিকাশ করে।

সভায় তিনি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা কমানো এবং সময়মতো কাজ শেষ করার ওপর গুরুত্ব দেন।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আ. লীগ আমলে হিন্দুদের বাড়িঘর দখল হয়েছে : আমানউল্লাহ আমান Nov 28, 2025
img
রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করতে হবে : আদিল মুহাম্মদ খান Nov 28, 2025
img
কৌশলগত সুপারিশ বাদ দিয়ে দুদক অধ্যাদেশ চূড়ান্ত, টিআইবির ক্ষোভ Nov 28, 2025
img
পুলিশকে কামড়ে পালানো সেই ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার Nov 28, 2025
img
ক্ষমতায় এলে ঘুষবিহীন চাকরির নিশ্চয়তা দেবে বিএনপি : আবুল কালাম Nov 28, 2025
img
শিক্ষার চেয়ে বড় পৃথিবীতে আর কিছু নেই : শামা ওবায়েদ Nov 28, 2025
img
ইসলাম এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি : এ টি এম আজহারুল Nov 28, 2025
img
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অভিষেক কাল Nov 28, 2025
img
সাহেবকে ‘পথপ্রদর্শক’ বললেন অভিনেত্রী সুস্মিতা দে Nov 28, 2025
img
বিতর্কিত সিদ্ধান্তে জয় থেকে ৩ রান দূরত্বে থাকা ম্যাচ পরিত্যক্ত Nov 28, 2025
img
ধর্মের অপব্যাখ্যা করে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ দেওয়া হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা Nov 28, 2025
img
সাইফ হাসানকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পক্ষে নন নান্নু Nov 28, 2025
img
পেঁয়াজ নিয়ে এবার রপ্তানিকারকদের ‘কাঁদিয়ে ছাড়ছে’ বাংলাদেশ Nov 28, 2025
img
বিমানবন্দরে যাত্রীর লাগেজ চুরি, কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা Nov 28, 2025
img
কানাডায় কপিল শর্মার ক্যাফে হামলার মূল অভিযুক্ত গ্রেপ্তার Nov 28, 2025
img
ইউরোপে হামলা করবে না রাশিয়া- লিখিত নিশ্চয়তা দিতেও প্রস্তুত পুতিন Nov 28, 2025
img
শাহজাহান চৌধুরীর মন্তব্যে জামায়াতের নীলনকশা উন্মোচিত হয়েছে : আবুল হাশেম Nov 28, 2025
img
আগুন নিয়ে যারা খেলা করে তাদের পরিণতিও ভবিষ্যতে খারাপ হবে: শিবির সভাপতি Nov 28, 2025
img
নতুন করে শপথ নিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন জামায়াতে আমির Nov 28, 2025
img
কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর স্মরণসভায় অনুপস্থিত দুই মেয়ে Nov 28, 2025