ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেছেন, ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। এজন্য জরুরিভাবে রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করতে হবে।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) ভার্চুয়ালি আইপিডি আয়োজিত "ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ডে বিপর্যস্ত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ঢাকার পরিকল্পনাগত সংকট ও করণীয়" শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকাকে টেকসই ও নিরাপদ করতে হলে ভূমি ব্যবহার জোনিং, বিল্ডিং কোড, মাটির ভূতাত্ত্বিক পরীক্ষা, কাঠামোগত মূল্যায়ন, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং কমিউনিটির প্রস্তুতি সমন্বিতভাবে এগিয়ে নিতে হবে। নয়তো বড় ভূমিকম্প বা অগ্নিকাণ্ড বা বড় দুর্যোগ রাজধানীর ওপর বিপর্যয় নেমে আনতে পারে।
আইপিডি পরিচালক বলেন, কঠোরভাবে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড ও নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করতে হবে। বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি (বিবিআরএ) গঠন করে দ্রুত বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সিসমিক মাইক্রো জোনেশন ম্যাপ অনুযায়ী নগরায়ণ করতে হবে। জলাধার, জলাভূমি ভরাট করে কোনো সরকারি-বেসরকারি উন্নয়নই অনুমোদন করা যাবে না।
তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় কমিউনিটিকে প্রস্তুত করতে প্রশিক্ষণ, ড্রিল ও গণসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। স্বল্প আয়ের লোকদের নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসন এর জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি আবাসন ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। ভবন সংশ্লিষ্ট অনিয়মে যুক্ত কর্মকর্তা, সংস্থা বা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
এদিকে আইপিডি পক্ষ থেকে বলা হয়, এখনই ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে বিভাগীয় ও জেলা শহরে পরিকল্পিত নগরায়ণ, নিরাপদ আবাসন, পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা এবং কর্মসংস্থানের সমান্তরাল নীতি নেওয়া যায়– তাহলে আগামী ১৫-২০ বছরে আমরা ঢাকাকে কিছুটা চাপমুক্ত করতে পারব।
সভায় আইপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্প ও শহরের বাসযোগ্যতা বিবেচনায় না নিয়েই ব্যবসায়ীদের চাপে ড্যাপ পরিবর্তনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই সব পরিবর্তনে বিবেচনায় নেয়া হয়নি মাটির ভূতাত্ত্বিক গঠন, মাটির ভার বহন ক্ষমতা ও ঢাকার সিসমিক মাইক্রোজোনেশন ম্যাপ। ফলে ঢাকাকে বাঁচাতে ড্যাপ পরিবর্তনের মাধ্যমে অযাচিতভাবে এফএআর ও জনঘনত্ব পরিবর্তন করতে গ্যাজেট প্রকাশের উদ্যোগ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। মাটির ভূতাত্ত্বিক গঠন, ভূমির শ্রেণিবিন্যাস ও শহরের ভারবহন ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে শহরের বিশদ পরিকল্পনা করতে হবে। বিএনবিসি কার্যকর করতে বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি (বিবিআরএ) অতিদ্রুত গঠন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইপিডি উপদেষ্টা অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক ও আইপিডির রিসার্চ ফেলো কে এম আসিফ ইকবাল আকাশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী ড. ফরহাদুর রেজা, একিউমেন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ তাহের, শেলটেক কনসালট্যান্টের পুর প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ সজীব, আইপিডি গবেষণা সহকারী জিনিয়াস জান্নাত কাজী তাসনিয়া তাবাসসুম প্রমুখ।
আরপি/টিকে