মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী জন্মগত নাগরিকত্বের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে কি না, এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানিতে সম্মত হয়েছে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট।
রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই একটি নির্বাহী আদেশে অবৈধভাবে দেশে বসবাসকারী পিতামাতার সন্তানদের জন্মগত নাগরিকত্বের অধিকার বাতিলের নির্দেশ জারি করেছিলেন। তবে একাধিক নিম্ন আদালত সেই নির্দেশ স্থগিত করে দেয়।
সুপ্রিম কোর্ট এখনো মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেনি এবং রায় ঘোষণার জন্যও আরো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।
আদালতের সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, তা ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি এবং মার্কিন নাগরিকত্বের ধারণার ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী প্রায় ১৬০ বছর ধরে বলে আসছে, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম নিলেই সে হবে মার্কিন নাগরিক। তবে কূটনীতিক বা বিদেশি সেনাসদস্যদের সন্তান ছাড়া।
কিন্তু ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে আছেন বা অস্থায়ী ভিসায় এসেছেন, তাদের সন্তান আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাবে না।
প্রশাসন বলছে, এটি অভিবাসনব্যবস্থার সংস্কার এবং জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি কমানোর বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ।
হোয়াইট হাউসের দাবি, ১৪তম সংশোধনী কেবল সেই শিশুদের নাগরিকত্ব নিশ্চয়তা দেয়, যাদের বাবা-মা স্থায়ী বা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এ নিয়ে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (আকলু) জাতীয় আইনি পরিচালক সিসিলিয়া ওয়াং বলেন, কোনো প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নেই ১৪তম সংশোধনীর জন্মগত নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা পরিবর্তন করার।
১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে এটি আইন ও ঐতিহ্য, দেশে জন্ম নিলেই সে নাগরিক।
এখন সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষা চলছে।
বিশ্বে প্রায় ৩০টি দেশ (মূলত আমেরিকা মহাদেশ) জন্মসূত্রে স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব দেয়। ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে মামলা হলে একাধিক ফেডারেল আদালত রায় দেন, এই আদেশ সংবিধানবিরোধী। দুইটি ফেডারেল সার্কিট কোর্টও সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে। এরপর ট্রাম্প এ নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান।
সুপ্রিম কোর্ট জুনে জানান, নিম্ন আদালতগুলোর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তাদের এখতিয়ারের বাইরে ছিল। তবে জন্মগত নাগরিকত্ব বৈধ কি না, এ বিষয়ে আদালত তখন কোনো মন্তব্য করেনি। গৃহযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে মুক্ত আফ্রিকান-আমেরিকানদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে ১৪তম সংশোধনী পাস করা হয়েছিল।
মার্কিন সলিসিটর জেনারেল ডি জন সাওয়ার বলেন, এই সংশোধনীর উদ্দেশ্য ছিল মুক্ত দাস ও তাদের সন্তানদের নাগরিকত্ব দেওয়া। অস্থায়ীভাবে থাকা বিদেশি বা অবৈধভাবে থাকা ব্যক্তিদের সন্তানদের নয়। তার মতে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে প্রচলিত ব্যাখ্যা ভুল এবং এর বিধ্বংসী প্রভাব দেখা দিয়েছে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অননুমোদিত অভিবাসী বাবা-মায়ের প্রায় আড়াই লাখ সন্তান জন্ম নেয়। ২০২২ সালে এমন বাবা-মায়ের নাগরিকসন্তান সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ লাখ। মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট ও পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিল হলে ২০৪৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অননুমোদিত জনসংখ্যা আরো ২৭ লাখ এবং ২০৭৫ সালের মধ্যে ৫৪ লাখ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
সূত্র: বিবিসি
পিএ/এসএন