এবার ‘ফ্যাক্ট চেকারদের’ ভিসা প্রত্যাখ্যানের নির্দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের

ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বাক্‌স্বাধীনতা সেন্সর করার সঙ্গে জড়িত বলে যাদের মনে করা হয়, তাদের ভিসা দেওয়ার ওপর কঠোর দমননীতি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করার পদক্ষেপ নিয়েছে।

এ সপ্তাহে বিদেশে অবস্থিত মিশনগুলোতে পাঠানো পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি স্মারকে এই পদক্ষেপের বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। স্মারকটি প্রথমে রয়টার্স এবং পরে এনপিআর প্রকাশ করে। এতে কনস্যুলার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে সুরক্ষিত মতপ্রকাশের ‘সেন্সরশিপ বা সেন্সরশিপের চেষ্টা’র জন্য যারা ‘দায়িত্বশীল বা জড়িত’, তাদের যেকোনো ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদেশটিতে আবেদনকারীদের ‘উন্নত পর্যায়ের যাচাই-বাছাই’ করার নির্দেশ রয়েছে, এটি দেখতে যে তারা আগে ‘ভুল তথ্য, বিভ্রান্তিকর তথ্য, কনটেন্ট মডারেশন, ফ্যাক্ট-চেকিং, কমপ্লায়েন্স ও অনলাইন নিরাপত্তা’-সহ বিভিন্ন কার্যক্রমে কাজ করেছেন কি না।

শুরুতে এটি এইচ-১বি ভিসা আবেদনকারীদের ওপর বেশি গুরুত্ব দেবে, যে ভিসা সাধারণত প্রযুক্তি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চদক্ষ বিদেশি কর্মীদের দেওয়া হয়, তবে এই নির্দেশনা সব ধরনের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে বলে সংবাদ সংস্থাটি যোগ করেছে।

এই নির্দেশনা কনস্যুলার পর্যায়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসন সীমিত করার লক্ষ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক একাধিক পদক্ষেপের সর্বশেষ সংযোজন। একই সঙ্গে এটি মে মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিওর দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতিকেও আরো কঠোর রূপ দিয়েছে, যেখানে তিনি বলেছিলেন, আমেরিকান জীবনধারার জন্য ‘অত্যাবশ্যক’ বাক্‌স্বাধীনতা দমনকারী হিসেবে যাদের মনে করা হবে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে।

সে সময় এক্সে দেওয়া এক পোস্টে রুবিও লিখেছিলেন, ‘যেসব বিদেশি আমেরিকানদের অধিকার দুর্বল করার জন্য কাজ করে, তাদের আমাদের দেশে ভ্রমণের বিশেষাধিকার ভোগ করা উচিত নয়। তারা লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ বা অন্য যেকোনো জায়গায় থাকুক না কেন, আমেরিকানদের অধিকার ক্ষুণ্নকারীদের প্রতি নীরব আচরণের দিন শেষ।’

এনপিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি স্টেশনগুলোতে পাঠানো ওই স্মারকে কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যারা ফ্যাক্ট-চেকিং, কনটেন্ট মডারেশন ‘বা অন্যান্য এমন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যেগুলোকে ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকানদের মতপ্রকাশের ‘সেন্সরশিপ’ হিসেবে বিবেচনা করে’, তাদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে।

আবেদনকারীদের কর্মজীবনের ইতিহাসের প্রমাণ খুঁটিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে তাদের লিংকডইন প্রোফাইল ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হিসাব পর্যালোচনা করা এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ‘ভুল তথ্য, বিভ্রান্তিকর তথ্য বা মিথ্যা বয়ান মোকাবিলা, কনটেন্ট মডারেশন, কমপ্লায়েন্স, ট্রাস্ট ও সেফটি’-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের উল্লেখ আছে কি না, তা খুঁজে দেখার কথা বলা হয়েছে।

স্মারকে বলা হয়, যাচাইকারী কর্মকর্তার কাছে যদি এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, যা নির্দেশ করে যে কোনো ব্যক্তি সেন্সরশিপ কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন, তাহলে ‘আপনাকে আবেদনকারীকে [ভিসার জন্য] অযোগ্য ঘোষণা করার সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে’।

এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, ‘অভিযোগ করা হচ্ছে, এমন ফাঁস হওয়া নথি নিয়ে আমরা মন্তব্য করি না। তবে এতে কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই, প্রশাসন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা আমেরিকানদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সেই বিদেশিদের হাত থেকে রক্ষা করে, যারা সেটি সেন্সর করতে চায়। আমেরিকানদের কণ্ঠরোধ করতে সেন্সর হিসেবে কাজ করার জন্য আমরা কোনো বিদেশির যুক্তরাষ্ট্রে আসাকে সমর্থন করি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘অতীতে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট নিজেও এই ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কম্পানিগুলো তার অ্যাকাউন্টগুলো লক করে দিয়েছিল।

তিনি চান না অন্যান্য আমেরিকানরাও এইভাবে ভুগুক। এই ধরনের সেন্সরশিপের নেতৃত্ব দিতে বিদেশিদের সুযোগ দেওয়া আমেরিকান জনগণকে একই সঙ্গে অপমানিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img

জামায়াত আমির

নির্বাচন এলে যারা তসবিহ হাতে ঘোরে তারাই ধর্ম ব্যবসায়ী Dec 09, 2025
img
শীতে এলার্জি সমস্যা ঠেকাতে কার্যকর ৫ উপায় Dec 09, 2025
img

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক

ভোট নির্বিঘ্ন করতে মাঠ প্রশাসন পুরোপুরি তৎপর থাকবে Dec 09, 2025
img
আরও কঠোর জবাব দেয়া হবে’, ভারতকে আসিম মুনিরের কড়া বার্তা Dec 09, 2025
img
জাপানে সুনামির সব ধরনের সতর্কতা তুলে নেওয়া হলো Dec 09, 2025
img
বাবা-ভাইসহ অভিনেত্রী মাসুমি গ্রেপ্তার Dec 09, 2025
img
এক্স-কে ১৪০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা, ক্ষুব্ধ ট্রাম্প Dec 09, 2025
img
একই গ্রামে ৩ এমপি প্রার্থী Dec 09, 2025
img
মিথ্যা ভ্রম নয়, বাস্তব সম্পর্কেই বিশ্বাস অনামিকার Dec 09, 2025
img
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ১৮৩৭ মামলা ডিএমপির Dec 09, 2025
img
চট্রগ্রামে এক সঙ্গে ৫ সন্তানের জন্ম দিলেন এক নারী Dec 09, 2025
img
বিজয় দিবসে বিনা টিকিটে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা দেখাবে প্রেক্ষাগৃহ Dec 09, 2025
img
খালেদা জিয়ার সুস্থতাই দেশবাসীর কামনা : টুকু Dec 09, 2025
img
বিজয় দিবসে টিকিট ছাড়াই ঘুরে দেখা যাবে জাদুঘর Dec 09, 2025
img
৬০ ঘণ্টা হ্যান্ডকাফ-শেকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র Dec 09, 2025
img
যশোরে মহিলা লীগ নেত্রী মহুয়া গ্রেপ্তার Dec 09, 2025
img
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় স্লিপার বাস, প্রাণ হারাল ১ Dec 09, 2025
img
এপিবিএন সদস্যের নিথর দেহ উদ্ধার Dec 09, 2025
img

উপদেষ্টা সাখাওয়াত

নির্বাচন দেওয়ার শর্ত ছিল না অন্তর্বর্তী সরকারের Dec 09, 2025
img
স্মৃতির কঠিন সময়ে পাশে জেমাইমা, বিগ ব্যাশ ছেড়ে দেশে রয়ে গেলেন Dec 09, 2025