ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকার ছাত্রশিবিরের : বিদায়ী সভাপতি

তিনি বলেছেন, জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান তরুণ সমাজের মধ্যে যে আদর্শিক জাগরণ সৃষ্টি করেছে, তা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে।

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর চীন-মৈত্রী সন্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পরও দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হয়নি। বিশেষ করে ১৯৭১-৭৫ সময়ে একদলীয় শাসন, ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংকট গভীর হয়। সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরু হয়।

তিনি বলেন, আজাদির সংগ্রামে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এবং ১৯৭১ থেকে ২০২৪— প্রতিটি পর্যায়ে রাজনৈতিক পরিবর্তন এলেও অর্থনৈতিক বৈষম্য, দুর্নীতি ও জবাবদিহির অভাবে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ফ্যাসিস্ট শাসনামলে শেখ হাসিনা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দেন, নির্বাচনকে কারচুপির উৎসবে পরিণত করা হয় এবং তরুণদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ৭১-এর চেতনাকে ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় মাফিয়াতন্ত্র, ব্যাংক লুট, গুম-খুন ও দমন-পীড়নের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে; ভিন্নমত ও প্রতিবাদ দমনে জেল-জুলুম ও বিচারিক হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর নির্যাতন করা হয়।

ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি বলেন, পরিকল্পিতভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে মানবিক সত্তাহীন হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয় এবং ‘শিবির মানেই হত্যাযোগ্য’— এমন ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি করা হয়। ‘ছাত্রশিবির’ ট্যাগ দিয়ে বহু সাধারণ শিক্ষার্থী নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন। ২০১৩ সালে শাহবাগকে কেন্দ্র করে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে ফ্যাসিবাদ আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়; হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ওপর চালানো হয় দমন-পীড়ন এবং দাড়ি-টুপিকে জঙ্গিবাদের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে প্রশাসন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত ইসলাম ও ধর্মীয় মূল্যবোধ দমন করা হয়। এসবের প্রতিবাদেই ২০২৪ সালের জুলাইয়ে গণআন্দোলন বিস্ফোরিত হয় এবং শেখ হাসিনার শাসনের পতন ঘটে। তরুণদের আত্মত্যাগ নতুন আদর্শিক জাগরণ সৃষ্টি করে, যা ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দেয়।

তিনি বলেন, এমন এক সময়ে এই আয়োজন হচ্ছে যখন ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলায় প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ মানুষ। এ পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় দুই লাখ মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের বড় অংশ নারী ও শিশু। একই সঙ্গে অবরোধ ও খাদ্যসংকটে হাজার হাজার মানুষ অনাহারের মুখে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন। শহীদদের আত্মত্যাগের ফলেই আজ উন্মুক্ত দাওয়াতি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তাদের রেখে যাওয়া দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করতে পারলে এর জবাবদিহি করতে হবে। তাই সব বাধা অতিক্রম করে আন্দোলনের গতি আরও জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছি। মজলুম মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ মুনতাসির রহমান আলিফের বাবা সৈয়দ গাজিউর রহমান। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ছাত্রসংগঠনের নেতা, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী প্রতিনিধি, সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতারা এবং দেশি-বিদেশি অতিথিরা অংশ নেন।

টিজে/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কলকাতায় বাংলাদেশি উপ-দূতাবাসের সামনে ফের বিক্ষোভ Dec 26, 2025
img
সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় জামায়াতে ইসলামী Dec 26, 2025
img
ঝিনাইদহে রাশেদ খানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিক্ষোভ Dec 26, 2025
যে কারণে বৃদ্ধার ওপর রাগলেন মহিলা! Dec 26, 2025
img
গুলিস্তানে বাণিজ্যিক ভবনের গোডাউনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে Dec 26, 2025
img
ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শনিবার, আসনপ্রতি লড়াই ৬১ জনের Dec 26, 2025
img
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন রোববার Dec 26, 2025
img
শিবিরের নবনির্বাচিত সভাপতি-সেক্রেটারিকে নিয়ে জামায়াত আমিরের মন্তব্য Dec 26, 2025
img
হাদির ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন সিবিউন ও সঞ্জয়’ Dec 26, 2025
img
বিচারের দাবিতে শাহবাগে রাতভর অবস্থানের ঘোষণা ইনকিলাব মঞ্চের Dec 26, 2025
img
তারেক রহমানের আগমনের মধ্য দিয়ে সব ষড়যন্ত্রের সমাপ্তি ঘটেছে : গয়েশ্বর Dec 26, 2025
img
নাজিব রাজাক দুর্নীতির আরেক মামলায় দোষী সাব্যস্ত Dec 26, 2025
img
কিংসকে হারিয়ে জয় অব্যাহত রাখলো পুলিশ Dec 26, 2025
ভোলার চরফ্যাশনে মালচিং পদ্ধতিতে আগাম তরমুজ চাষে সাফল্য Dec 26, 2025
img
জাতীয় স্মৃতিসৌধে তারেক রহমানের অপেক্ষায় লাখো নেতাকর্মী Dec 26, 2025
img

নারায়ণগঞ্জ

লঞ্চের ধাক্কায় বাল্কহেড ডুবে নিখোঁজ ২ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার Dec 26, 2025
img
ঢাকা-৮ আসনে লড়তে চান শহীদ ওসমান হাদির বোন মাসুমা হাদি Dec 26, 2025
img
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের বার্তা Dec 26, 2025
img
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাকে মারধরের অভিযোগ Dec 26, 2025
img
উত্তর কোরিয়ার সংবাদপত্রের প্রবেশাধিকার সহজ করবে সিউল Dec 26, 2025