ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নগরীর পরিবেশ সংরক্ষণ, নগর সবুজায়ন সম্প্রসারণ এবং নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ২৫ জন নারী উদ্যোক্তাকে নার্সারি স্থাপনের জন্য জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতিটি উদ্যোক্তার অনুকূলে ২০০ বর্গফুট করে অস্থায়ী জায়গা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে ডিএনসিসি নগর ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের হাতে বরাদ্দপত্র তুলে দেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
বরাদ্দপত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমান। প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ২৫ জন নারী উদ্যোক্তাকে এই সুবিধা দিচ্ছি কিন্তু পর্যায়ক্রমে ১০০ জন নারী উদ্যোক্তাকে আমরা ব্যবসা করার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেব।’
তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকায় উন্মুক্ত ও সবুজ জায়গার ভয়াবহ সংকট রয়েছে। পরিকল্পনাহীন নগরায়ন, জলাধার ও খাল-বিল ভরাটের ফলে শহর পরিবেশগত ঝুঁকিতে পড়েছে। নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে এবং বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে নগরকে পুনরায় সবুজের মধ্যে ফিরিয়ে আনা জরুরি।’
প্রশাসক বলেন, “উইম্যান-লেড গ্রিন স্পেস তৈরির লক্ষ্যেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে নগর গঠনের প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণের নতুন সুযোগ তৈরি হবে, জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং নিশ্চিত হবে। আমাদের শহরের অধিকাংশ পরিকল্পনা পুরুষতান্ত্রিক রাজনৈতিক অর্থনীতির ভিত্তিতে নির্মিত হয়েছে।
আমরা এই কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি ‘ফেমিনিস্ট পলিটিক্যাল ইকোনমিক সেন্স’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি।” এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘শহর গঠনের নানা নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ ঐতিহাসিকভাবে কম ছিল। কিন্তু টেকসই নগর ব্যবস্থাপনার জন্য নারী অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা নারী নেতৃত্বাধীন গ্রিন স্পেস ও ‘জেন্ডার সেন্ট্রিক গ্রিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। এটিকে আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক (ইনক্লুসিভ) নগর আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেখছি।
প্রশাসক জানান, ওয়ার্ডভিত্তিক কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে ধাপে ধাপে আরো সবুজায়ন কার্যক্রম চালু করা হবে। নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করা ও পরিবেশ সংরক্ষণ এই তিন লক্ষ্য একসঙ্গে অর্জন করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সুবিধাভোগী নারী উদ্যোক্তা সোনিয়া হক বলেন, ‘শহরে নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় আগে আমাদের প্রায়ই স্থান পরিবর্তন করে ব্যবসা চালাতে হতো। এখন নির্দিষ্ট জায়গা পাওয়ায় আমরা স্থায়ীভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারব। এতে একদিকে ব্যবসা টিকবে, অন্যদিকে নগরে সবুজ পরিবেশ গড়ে উঠবে এবং দূষণও কমবে।’
ডিএনসিসি আশা করেছে, নারী উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত এসব নার্সারি নগরে সবুজ অবকাঠামো গড়ে তুলবে, নাগরিক পরিবেশকে স্বাস্থ্যকর করবে এবং নারী অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নতুন দিগন্ত তৈরি করবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরীসহ অন্যান্য অতিথিরা।
এবি/টিকে