অগ্রহায়ণ শেষে পৌষ শুরু হয়েছে! ঢাকা ও আশেপাশের এলাকাতেও শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। হালকা বাতাসের সঙ্গে কুয়াশা—রাজধানীবাসীও তাই শীতের আঁচ পাচ্ছে। কুয়াশা ভেদ করে উঠছে রোদও। ২০২৬ সালের এপ্রিলে টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফর করার কথা পাকিস্তানের। টেস্ট খেলার জন্য সাদমানের অপেক্ষাটা তাই কয়েক মাসের। অবসর সময়ে ঢাকার শীতটা বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তবে কুয়াশা ভেদ করা সেই রোদের মতো সাদমানের হতাশার সময়ে একটুখানি স্বস্তি কিংবা আলো এলো।
অন্যান্য দিনের মতো ঢাকার বাসায় বসেই সকালের শীত উপভোগ করছিলেন সাদমান। এমন সময় সিলেট থেকে ফোন করলেন নাফিস ইকবাল। কদিন আগেই চট্টগ্রাম রয়্যালসের ম্যানেজারের দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মালিকানাধীন দলের জন্য ক্রিকেটার জোগাড় করতে ব্যস্ত সময়ই পার করতে হচ্ছে তাকে। প্রথম ম্যাচে নোয়াখালী এক্সপ্রেসকে হারাতে পারলেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠার মতো দল যে চট্টগ্রাম হয়ে উঠতে পারেনি, সেটা তো স্পষ্টই।
টপ অর্ডারের শক্তি বাড়াতে সাদমানকে তাই দলের সঙ্গে যুক্ত করেছেন নাফিস, হাবিবুল বাশার সুমনরা। দলের সঙ্গে যোগ দিতে দ্রুতই সিলেটের বিমান ধরতে যাচ্ছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। নাফিসের একটা ফোন কলেই বছর ছয়েক পর বিপিএলে প্রত্যাবর্তন হচ্ছে তাঁর। ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে আলাপকালে সাদমান বলেন, ‘সকালে নাফিস ভাই আমাকে কল দিয়েছিলেন। তখন বাশার স্যারের সাথে কথা হয়েছে, তারপর পরশু দিন দলের সঙ্গে যোগ দিতে বলেছেন।’
কয়েক বছর ধরেই সাদমানের গায়ে সেঁটে আছে টেস্ট ব্যাটারের তকমা। সেই তকমা যেন কাল হয়েছে তাঁর জন্য। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সবশেষ আসরে অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে ১১ ম্যাচে ৪৬৯ রান করেছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। একটা সেঞ্চুরির সঙ্গে তিনটা হাফ সেঞ্চুরিও করেছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে হওয়া জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) টি-টোয়েন্টিতেও হেসেছে সাদমানের ব্যাট। ঢাকা মেট্রোর হয়ে করেছিলেন আসরের প্রথম সেঞ্চুরি।
বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে ৪টি ছক্কা ও ১১টি চারে খেলেছিলেন ৬১ বলে ১০১ রানের ইনিংস। সব মিলিয়ে ৬ ম্যাচে বাঁহাতি ওপেনার করেছিলেন ১৫১.১৮ স্ট্রাইক রেটে ১৯২ রান। এমন পারফরম্যান্সেও অবশ্য বিপিএলে কপাল খুলেনি সাদমানের। মুছে যায়নি গায়ে থেকে টেস্ট ক্রিকেটারের তকমাও। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের এমন অনাগ্রহে খানিকটা দুমড়ে-মুচড়ে যান সাদমান। জাতীয় দলের ব্যস্ততা নেই, বিপিএলেও খেলা নেই—হতাশা থেকে অনুশীলনেও মনোযোগ আসেনি বাঁহাতি ব্যাটারের।
গত কয়েক সপ্তাহে পর্যাপ্ত অনুশীলন করেননি সাদমান। বিপিএল শুরুর পর ডাক পাবেন, ভাবনায় ছিল না তাঁরও। চট্টগ্রামের হয়ে খেলতে সিলেট যাওয়ার আগে নিজের অনুভূতি বলতে গিয়ে সাদমান বলেন, ‘সত্যি বলতে নিলামের পর আমি অনুশীলনই করিনি ঠিক মতো। কারণ জানি কোন খেলা নেই, লম্বা একটা বিরতি। টেস্টও তো অনেক পরে।’
‘হঠাৎ করে ডাক পাব ভাবিনি। এখন তো অবশ্যই একটু ভালো লাগছে।’ নিয়মিত অনুশীলন না করলেও নিজেকে প্রস্তুত মনে করছেন না সাদমান। বাঁহাতি ব্যাটারের বিশ্বাস, কয়েক দিন অনুশীলন করলেই ভালো শেইপে চলে আসবেন। তিনি বলেন, ‘একেবারে অপ্রস্তুত না। আমি তো টুকটাক অনুশীলন করছিলাম। তবে ৩-৪ দিন যদি অনুশীলন করি তাহলে শেইপে চলে আসব, আশা করি।’
বিপিএলে দল পাওয়ায় খুশি হলেও পাহাড়সম হতাশা নিয়ে বসেছিলেন সাদমান। নিলামের পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন। দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এও জানিয়েছিলেন, কেউ ডাকলেও আর বিপিএল খেলবেন না। এমন অভিমান পরও সাদমান তাহলে চট্টগ্রামের হয়ে কেন বিপিএল খেলতে রাজি হয়েছেন, প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া গেছে বাঁহাতি ব্যাটারের কথাতেই।
সাদমান বলেন, ‘অভিমানের কথা যদি বলি... আমি যতটুকু জানি এটা বিসিবির দল। আগে তো ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলো ছিল। আমি তো বিসিবির অধীনেই সবসময় খেলি। উনারা আমাকে যখন ডাকবেন তখন তো আমাকে খেলতেই হবে। আমার জন্য ভালো হয়েছে এটা বিসিবির দল।’
২০১৯-২০ মৌসুমের পর বিপিএলে খেলা হয়নি। বছর ছয়েক পর বিপিএলে প্রত্যাবর্তনের আগে ৯ ম্যাচে ১৫১ রান করেছেন। খেলেছেন ঢাকা ডায়নামাইটস, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও রংপুর রেঞ্জার্সের হয়ে। টুর্নামেন্ট চলাকালীন দল পাওয়ায় সাদমানের জন্য চ্যালেঞ্জটাও বেশি। বাঁহাতি ব্যাটারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বিপিএল দিয়ে নিজের গায়ে সেঁটে যাওয়া টেস্ট ব্যাটারের তকমা ছেঁটে ফেলা।
সাদমান অবশ্য আপাতত মনোযোগ দিচ্ছেন ভালো খেলায়। বাংলাদেশের ব্যাটারের বিশ্বাস, ভালো করতে পারলে আপনাআপনি তকমা উঠে যাবে। তিনি বলেন, ‘সবসময় চেষ্টা করি ভালো খেলার। টি-টোয়েন্টি হোক কিংবা টেস্ট হোক, সব জায়গায় ভালো খেলতে চাই। আমাদের ক্রিকেটারদের লক্ষ্যই তো একটা।’
এসকে/এসএন