করোনায় বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিতে আসবে স্থায়ী পরিবর্তন

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব পরবর্তী সময়ে বিশ্ব ব্যবস্থার স্থায়ী পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে আমাদের চিরচেনা সরকার, সম্প্রদায়, নির্বাচন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, অর্থনীতিসহ আরও অনেক কিছুতেই স্থায়ী পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলার পরেও বিশ্ব ব্যবস্থা অনেকটা এভাবেই বদলে গিয়েছিল।

বৈশ্বিক ভাইরাসটি ইতিমধ্যে আমাদেরকে দীর্ঘদিনের জন্য গৃহবন্দী করে রাখতে শুরু করেছে। এর মধ্য দিয়ে বাইরের পৃথিবী, সরকার এমনকি একে অপরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বদলে যাবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর নির্ভরশীলতা বাড়বে, সেই সঙ্গে বদলে যাবে প্রচলিত প্রযুক্তিগুলি।

অনলাইনের বিভিন্ন বাধা কমে আসবে
লেখক: রিজন ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ক্যাথরিন মঙ্গু-ওয়ার্ড

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব পরবর্তী সময়ে আমাদের জীবন আরও বেশি অনলাইনমুখী করতে অনলাইনের বেশিরভাগ কৃত্রিম বাধাগুলি সরিয়ে নেয়া হবে। তবে এটা ঠিক যে সবকিছু ভার্চুয়াল হয়ে যেতে পারে না।

আমাদের জীবনে সত্যিকারের কার্যকর অনলাইন সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক নিয়ন্ত্রণ ছিল। বেশিরভাগর ক্ষেত্রেই আমাদের নির্দেশে অনলাইনের উপর এসব নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।

টেলিমেডিসিনের জন্য বিলিংয়ের অনুমতি দেয়া চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন। যেমনটা হেলথ ইনস্যুরেন্স পোর্টাবিলিটি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যাক্টে চিকিৎসা প্রদানকারীদের স্কাইপ, ফেসটাইম ও ইমেলের মতো সরঞ্জাম ব্যবহারের অনুমতি পুনর্বিবেচনা করার ফলে হয়েছিল। এই সঙ্কট সৃষ্টি না হলে আরও অনেক বছর ধরে নিয়ন্ত্রক আমলারা এটি ঝুলিয়ে রাখতে পারতেন।

এই মহামারীর ফলে বাচ্চাদের আংশিক হোমস্কুলিং বা অনলাইনে পড়াশুনার বিপক্ষে শিক্ষক ইউনিয়ন ও রাজনীতিবিদরা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। একবার শুরু হয়ে গেলে সেটা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা অনেকটাই অসম্ভব, কারণ অনেক পরিবার আংশিক হোমস্কুলিং বা অনলাইন হোমওয়ার্ক পছন্দ করে। অনেক কলেজ শিক্ষার্থীও ক্যাম্পাসের একটি ব্যয়বহুল ছাত্রাবাসে ফিরে আসতে পছন্দ করবেন না। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এখন অভিসম্ভাবী এবং প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করতে চলেছে।

যদিও সব কাজ দূরে বসে করা যায় না, তবে অনেক কাজ করা সম্ভব। এই সংকটের ফলে অনেকেই জেনে গেছেন তাদের অফিসের কাজগুলি ঘরে বসেই করা সম্ভব, তার জন্য প্রয়োজন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি আর কয়েকটি অ্যাপস ডাউনলোড করা।

যখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলি অনলাইনে তাদের কর্মীদের দ্বারা কাজ করানো শিখে যাবে, তখন প্রতিষ্ঠানগুলিও এদিকে ঝুঁকে পড়বে, কারণ অফিসে বসিয়ে কাজ করানো বেশি ব্যয়বহুল।

অন্য কথায়, এই ভয়াবহ মহামারী এটি প্রমাণ করে দিয়েছে যে, একটি লম্বা মিটিংয়ের কাজ (ডাক্তারদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও ক্লাস) সত্যিই একটি ইমেল দ্বারাও হতে পারে। সুতরাং এখন তারা সেটি করতে থাকবেন।

একটি স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল জীবনধারা
লেখক: শেরি টার্কল, এমআইটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সামাজিক অধ্যয়নের অধ্যাপক

আমরা আমাদের ডিভাইসগুলির সঙ্গে আমাদের সময়ের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারি এবং এগুলির মাধ্যমে যে ধরণের সম্প্রদায় তৈরি করা যেতে পারে, তা পুনর্বিবেচনা করতে পারি। করোনার ফলে আমাদের সামাজিক দূরত্বের প্রথম দিনগুলিতে, আমরা তার অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণগুলি দেখেছি।

সেলো মাস্টার ইয়ো-ইয়ো মা প্রতিদিন একটি গানের লাইভ কনসার্ট পোস্ট করেন, যা তাকে ব্যস্ত থাকতে সাহায্য করতো। ব্রডওয়ে ডিভা লরা বেনান্তি অলস সময় কাটানো হাইস্কুলের সংগীত দলগুলিকে তাদের পারফরম্যান্স রেকর্ড করে তার কাছে পাঠানো অনুরোধ করেন এবং তিনি সেগুলি দেখার প্রতিশ্রুতি দেন। যোগা ইন্সট্রাক্টররা বিনামূল্যে অনলাইন ক্লাস অফার করেন।

এটি ভিডিও গেমের দুনিয়ায় অন্যের অবতার নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার থেকে অনেক আলাদা একটি বিষয়। যা মানুষের উদারতা ও সহানুভূতির অন্য একটি মাধ্যম উন্মুক্ত করছে। মানুষ প্রতিনিয়ত সন্ধান করে চলেছে- “আমি নিজস্বভাবে কী অফার করতে পারি? আমার একটা জীবন আছে, একটি ইতিহাস আছে। অন্য মানুষের কী প্রয়োজন আমি মেটাতে পারি?”

যদি আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারি, যদি আমরা আমাদের সর্বাধিক মানবীয় প্রবৃত্তিগুলি আমাদের ডিভাইসে প্রয়োগ করি, এটি কোভিড-১৯ এর একটি শক্তিশালী উত্তরাধিকার হয়ে থাকবে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি জন্য একটি বর
লেখক: এলিজাবেথ ব্র্যাডলি, ভাসার কলেজের সভাপতি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য বিষয়ক একজন পণ্ডিত

আমাদের এই বিচ্ছিন্ন বা একা থাকার সময়টাতে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি আমাদেরকে চাহিদা অনুযায়ী অভিজ্ঞতা দিতে পারে। সম্ভবত এটিই পরবর্তী প্রাদুর্ভাবে আমাদের মানিয়ে নিতে এবং সুরক্ষিত থাকতে সহায়তা করবে।

আমি এমন একটি ভিআর প্রোগ্রাম দেখতে পছন্দ করবো, যা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন লোকদের সামাজিকীকরণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আলোকপাত করে। ভাবুন আপনি একটি চশমা পড়লেন এবং হঠাৎ করেই একটি শ্রেণীকক্ষে বা অন্য কোনও সামাজিক পেক্ষাপটে পৌঁছে গেলেন। তথ্যসূত্র: পলিটিকো.কম

 

টাইমস/এনজে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কুমিল্লায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৪৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ Nov 16, 2025
img
পুলিশকে কামড়ে পালিয়েছেন ছাত্রদল নেতা Nov 16, 2025
img
শেখ হাসিনার রায় আগামীকাল, সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি Nov 16, 2025
img

বাংলাদেশ দূতাবাস, মানামা

বাহরাইন প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সচেতনতামূলক মোবাইল কনস্যুলার ক্যাম্পের আয়োজন Nov 16, 2025
img
ভোটারদের কেন্দ্রে আনা ও নিরাপদ নির্বাচনি পরিবেশের জন্য দলগুলোর সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ: সিইসি Nov 16, 2025
img
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে সবুজায়ন করবে ডিএনসিসি Nov 16, 2025
img
১৫০ কিমি গতিতে বোলিং করতে পারি: শাহীন আফ্রিদি Nov 16, 2025
img
বাংলাদেশ এক পা এগোলে, পাকিস্তান দুই পা এগিয়ে আসবে: মাওলানা ফজলুর Nov 16, 2025
img
যুক্তরাজ্যে স্থায়ী নাগরিকত্ব পেতে সময় লাগবে ২০ বছর! Nov 16, 2025
img
যারা একসময় মজলুম ছিল, তারা এখন জালিম সাজছে: তথ্য উপদেষ্টা Nov 16, 2025
img
মিঠুনদা আমার বাবার মতো: দেব Nov 16, 2025
img
নিজের প্রতি বিশ্বাসই শাহরুখকে কিং করেছে: শিল্পা শেট্টি Nov 16, 2025
img
ইরান ভয়াবহ সংকটে, মসজিদে দোয়া Nov 16, 2025
img
রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ককটেল বিস্ফোরণে পথচারী আহত Nov 16, 2025
img
অনিয়মের প্রমাণ পায়নি বিসিবি Nov 16, 2025
img
বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ: সেলিমা রহমান Nov 16, 2025
img

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬টি দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ শুরু Nov 16, 2025
img

মো. ফখরুল ইসলাম

‘তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হলে নোয়াখালী হবে সিঙ্গাপুর’ Nov 16, 2025
img
সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে মধ্যরাতে আগুন Nov 16, 2025
img
স্কুলের গুরুত্ব তখনই বোঝা যায়, যখন আমরা স্কুল থেকে বেরিয়ে আসি: সোনাক্ষী সিনহা Nov 16, 2025