কোভিড-১৯ এর মৃদু উপসর্গ দেখা দিলে কী করবেন

কোভিড-১৯ তে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিশ্বব্যাপী রোগটিতে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ১.৫ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে, অন্যদিকে সুস্থ হয়ে ওঠা লোকের সংখ্যা প্রায় পৌনে ছয় লক্ষ। শনিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজার ১৪৪ জন, এর মধ্যে মারা গেছেন ৮৪ জন।

এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে যাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়েছে, তাদের মধ্যে মৃদু উপসর্গ থেকে শুরু করে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দেয়া রোগী রয়েছেন। এই রোগটি বিশেষ করে বৃদ্ধ, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ও শ্বাসযন্ত্রের জটিলতায় ভোগা লোকদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের ফরোয়ার্ড হেলথ কেয়ার সার্ভিসের মেডিকেল লিডের এমএস ডা. নেট ফ্যাভিনি বলেন, “করোনভাইরাসের কারণে হওয়া কোভিড-১৯ রোগটির বিভিন্ন ধরণের উপসর্গ রয়েছে। জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হওয়া সাধারণ লক্ষণ। তবে আমরা মৃদু উপসর্গ থেকে শুরু করে গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যু সবকিছুই দেখতে পাচ্ছি।”

যাদের গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে, মৃত্যুর ঝুঁকি দেখা দিয়েছে, তাদের অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত। অন্যদিকে, মৃদু উপসর্গে ভোগা লোকদের ঘরে থেকেই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা। কারণ, মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্রই সবাই হাসপাতালে চলে এলে যারা গুরুতর অসুস্থ তাদের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

তাই নোভেল করোনার মৃদু উপসর্গ দেখা দিলে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরে স্ব-বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে ফোনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন অথবা রাষ্ট্রীয় কোভিড-১৯ সেবা নাম্বারে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতে পারেন।

স্ব-বিচ্ছিন্নতা
জরুরী সেবার সঙ্গে যারা যুক্ত নন, ভাইরাসটির অগ্রগতি কমিয়ে আনার জন্য তাদেরকে স্ব-বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করে ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও যাদের কোভিড-১৯ এর মৃদু উপসর্গ বা সর্দি-কাশি দেখা দিচ্ছে তাদেরকেও হোম কোয়ান্টোইন বা স্ব-বিচ্ছিন্নতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

যদিও হোম কোয়ারেন্টাইন অপরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ সীমাবদ্ধ করতে সহায়তা করে, কিন্তু অন্যদিকে বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্য বা রুমমেটদের সঙ্গে একত্রে কাটানো সময়ের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। এক্ষেত্রে পরিবারের কেউ একজন সংক্রমিত হলে বাকীদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি এড়ানো কঠিন।

এক্ষেত্রে ড. ফ্যাভিনি বলেন, “সর্বোত্তম পরামর্শ হলো- যদি আপনার উপসর্গগুলি কোভিড-১৯ এর মতো মনে হয় এবং আপনি পরীক্ষা করাতে না পারেন, তবে যাদের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ ঘটছে তাদের সতর্ক করা উচিত। যাতে তারাও ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে না পড়েন এবং এর ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়।”

স্ব-বিচ্ছিন্নতার সময় পরিবারের সদস্য বা কাছের মানুষদের থেকেও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

কখন স্ব-বিচ্ছিন্নতা শেষ করবেন?
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, উপসর্গ দেখা দেয়ার পর সাত দিন পরে এবং উপসর্গ শেষ হবার ৭২ ঘণ্টা পরে স্ব-বিচ্ছিন্নতা শেষ করা যেতে পারে।

লস অ্যাঞ্জেলসের সিটি অফ হোপ হাসপাতালের অনকোলজিস্ট ডা. জোশুয়া মনসুর বলেন, “যারা নিশ্চিতভাবে কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, কিন্তু লক্ষণগুলির বিকাশ ঘটেনি, তাদের জন্য আমরা উক্ত দিন থেকে ১৪ দিনের জন্য স্ব-পৃথকীকরণের পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ, আপনার এক্সপোজারের ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণগুলির বিকাশ ঘটতে পারে।”

তিনি সতর্ক করে বলে, “মনে রাখতে হবে যে, সিডিসির কাছ থেকে পাওয়া সেরা নির্দেশিকা এটি, তবে ঠিক কখন স্ব-বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ হবে তা আমরা নির্দিষ্ট করে এখনও জানি না।”

ডা. নির গোল্ডস্টিন, এফসিসিপি, একজন পালমোনোলজিস্ট এবং কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর প্রতিষ্ঠিত একটি বিশেষ হাসপাতালের পরিচালক। তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর কেউ আবারও সংক্রমিত হয়েছেন এমন তথ্য আমাদের কাছে আপাতত নেই। সাধারণত, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের কাছ থেকে ভাইরাস শেডিং (ছড়িয়ে পড়া) হ্রাস পায়। বর্তমানে আমরা কমপক্ষে ৭ দিন স্ব-বিচ্ছিন্নতায় থাকতে বলি, তবে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যেখানে সুস্থ হয়ে ওঠার এক মাস অবধি ভাইরাস শেডিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।”

তিনি আরও বলেন, “সুতরাং আপনার উচিত সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বজায় রাখা, এমনকি স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের এক-দুই সপ্তাহ পরেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।”

আপনার উপসর্গগুলি কীভাবে চিকিৎসা করবেন?
কোভিড-১৯ এর সর্বাধিক দেখা দেয়া সাধারণ লক্ষণ হলো গলা ব্যথা, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট। যথাযথ পরীক্ষা ব্যতীত, এই লক্ষণগুলি কোভিড-১৯ না অন্য কিছু নির্দেশ করে তা জানা মুশকিল। তবুও, তাদের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি একইরকম।

জ্বরের লক্ষণ নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ। “জ্বর যখন এটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছায় বা দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহত থাকে তখন তা বিপৎজ্জনক হতে পারে” বলে মন্তব্য করেন মনসুর। তিনি বলেন, “খুব বেশি জ্বর বা কম জ্বরে অস্বস্তি সৃষ্টি হলে চিকিৎসা করা উচিত।”

মনসুরের মতে, এক্ষেত্রে অ্যাসিটামিনোফেনের মতো ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিহাইড্রেশন এড়ানোর জন্য পানি বা তরল পান করার পরিমাণ বাড়াতে হবে। ঠাণ্ডা লাগলে কম্বল এবং শরীর গরম হয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি বা আইস প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে।

অন্যান্য লক্ষণগুলির দূর করতে অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠার কোনো শর্টকাট পদ্ধতি নেই। কেবল বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে এর তীব্রতা এবং সময়কাল হ্রাস করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, “এই ভাইরাসটির জন্য কোনো নির্দিষ্ট থেরাপি নেই। তাই আর্দ্র থাকা, পর্যাপ্ত ঘুমানো, ভালো খাওয়া এবং সক্রিয় থাকার মতো সাধারণ বিষয়গুলি অনুসরণ করা ছাড়া কোনো নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই।”

কখন হাসপাতালে যেতে হবে?
হাসপাতালগুলিতে অতিরিক্ত ভিড় হলে বেশিরভাগ লোকের জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া খুব কঠিন হয়ে দাড়ায়। তবে, এর অর্থ এই নয় যে প্রত্যেককেই তাদের লক্ষণগুলি একাই সামাল দিতে সক্ষম হবে।

ফ্যাভিনির মতে. যে কেউ অসুস্থ বোধ করলে তার উচিত টেলিফোনে বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা। এটি লক্ষণগুলি নির্ধারণে এবং কেস কতটা গুরুতর হতে পারে তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে।

মনসুর বলেন, “লক্ষণগুলি গুরুতর হলে আপনাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এসব লক্ষণগুলির মধ্যে শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ক্লান্তি, বুকে ব্যথা, ক্রমাগত জ্বর, দৃষ্টির পরিবর্তন প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত।”

গোল্ডস্টেইন এ বিষয়ে মন্তব্য করেন, “যারা বয়স্ক বা অন্তর্নিহিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের সম্ভবত চিকিৎসার সহায়তা নেয়া উচিত। অন্যদিকে, যারা স্বাস্থ্যবান এবং যাদের প্রধান লক্ষণগুলি হলো কাশি বা জ্বর, তারা সাধারণত বাড়িতে থাকতে পারেন। তবে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন পড়বে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা সহজলভ্য নয়, তাই মৃদু উপসর্গ দেখা দিলে ঘরে স্ব-বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করা সবচেয়ে ভালো উপায়। তথ্যসূত্র: হেলথলাইন.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সাদাপাথর লুটকাণ্ডে পদ হারানো বিএনপি নেতা র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার Sep 14, 2025
img
প্রয়োজনে আগামীকাল নির্বাচন দিন কিন্তু নতুন সংবিধান লাগবে: হাসানাত Sep 14, 2025
img
ভাঙ্গায় আবারও ৩ দিনের মহাসড়ক অবরোধ ঘোষণা Sep 14, 2025
img
জয়ে ফিরল আর্সেনাল Sep 14, 2025
img
এমবাপ্পে-গুলেরের নৈপুণ্যে ১০ জন নিয়েও রিয়ালের জয় Sep 14, 2025
img
বলিউড গানে বিশ্ব কাঁপানো ভাইরাল নাচের ঝড় Sep 14, 2025
img
আইসল্যান্ডে শুটিং করা একমাত্র বলিউড গান ‘গেরুয়া’ Sep 14, 2025
‘ফ্যাসিবাদ বিদায় হলেও দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান হচ্ছে’ Sep 14, 2025
ক্রীড়াঙ্গনকে নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনা করছেন তারেক রহমান Sep 14, 2025
তরুণ প্রজন্মকে খেলাধুলায় মনোনিবেশের ডাক রুহুল কবির রিজভীর Sep 14, 2025
img
রোববার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হবে ফরিদা পারভীনের মরদেহ Sep 14, 2025
জাকসুর ভিপি স্বতন্ত্র প্যানেলের জিতু, জিএস ছাত্রশিবিরের মাজহারুল Sep 14, 2025
img
অক্টোবরেই মুম্বাইয়ে শুরু হচ্ছে বলিউড মিউজিক প্রজেক্ট ২০২৫ Sep 14, 2025
img
নির্বাচনে একবারের জন্য আমাদের ক্ষমতায় এনে পরীক্ষা করুন: মুফতি ফয়জুল করীম Sep 14, 2025
img
জাকসু নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর শিবির সভাপতির কর্মসূচি ঘোষণা Sep 14, 2025
img
কাবুলে মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক Sep 14, 2025
img
ইনস্টাগ্রামে বলিউড গানে নতুন ধাঁধার খেলা Sep 14, 2025
img
সাবেক ডিআইজি নাহিদুল ইসলাম কারাগারে Sep 14, 2025
img
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে তারেক রহমান-মির্জা ফখরুলের শোক Sep 14, 2025
img
সুপার ফোরের আশা আছে, ট্রফি জিততেই এসেছি: জাকের Sep 14, 2025