মাইকেল জ্যাকসন: কিং অব পপ

মাইকেল জ্যাকসন। একজন মার্কিন গায়ক, গীতিকার ও নৃত্য শিল্পী। তাকে বলা হয় ‘কিং অব পপ’ বা পপ জগতের সম্রাট। তিনি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সর্বকালের সেরা বিনোদনকর্মীদের একজন। গত পাঁচ দশক ধরে সংস্কৃতি জগতে এককভাবে রাজত্ব করেছেন এই কিংবদন্তি শিল্পী।

মাইকেল জ্যাকসন ১৯৫৮ সালের ২৫ আগস্ট আমেরিকার ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের গ্যারি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জোসেফ জ্যাকসন ছিলেন একজন গিটারিস্ট। তার অনুপ্রেরণা থেকেই সংগীত জগতে মাইকেল জ্যাকসনের পদচারণা।

১৯৬০ সালের দিকে মাইকেলের তিন ভাই মিলে একটি ব্যান্ড দল গঠন করেন। ১৯৬৪ সালে মাইকেল ও তার আরেক ভাই এই দলে যোগ দেন। এসময় তাদের দলের নাম হয় ‘জ্যাকসন ৫’।

১৯৬৯ সালের দিকে এই দল একের পর এক গান গেয়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম এক অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। তাই ১৯৭১ সালের দিকে দলের পাশাপাশি এককভাবে গান গাওয়া শুরু করেন তিনি।

এসময় ‘গো টু বি দেয়্যার’ নামে প্রথম একক অ্যালবাম বের করেন মাইকেল। ১৯৭৯ সালে বের হয় তার পঞ্চম অ্যালবাম ‘অফ দ্য ওয়াল’, যা গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছিল।

১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয় তার ষষ্ঠ অ্যালবাম ‘থ্রিলার’। এটা ছিল সংগীত জগতের সর্বাধিক বিক্রিত অ্যালবামের একটি। ওই সময়ে বিলবোর্ডের সেরা দশটি গানের রেকর্ড সাতটিই ছিল তার এই একটি অ্যালবামের। বাণিজ্যিক সাফল্যের পাশাপাশি এটি ১২টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছিল এবং আটটিতে পুরস্কার পেয়েছিল।

এরপর থেকে তিনি একের পর এক একক অ্যালবাম প্রকাশ করেন, যার প্রত্যেকটিই বাণিজ্যিকভাবে সফল হয় এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তার প্রকাশিত বিখ্যাত অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে- উই আর দ্য ওয়ার্ল্ড, ব্যাড, ডেঞ্জারাস, ইনভিন্সিবল, মাইকেল, এক্সস্ক্যাপ ইত্যাদি।

১৯৮৪ সালে পেপসিকোর একটি বাণিজ্যিক শুটিং চলাকালে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। তার মুখ ও মাথার বেশ কিছু অংশ পুড়ে গিয়েছিল। অবশেষে প্লাস্টিক সার্জারি করে এক নতুন চেহারায় আবির্ভূত হন তিনি।

১৯৯৩ সালে তার বিরুদ্ধে শিশু যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালেও পরে আদালতের বাইরেই এর মীমাংসা হয়।

১৯৯৪ সালে তিনি রক আইকন অ্যালভিস প্রিসলের মেয়ে লিসা ম্যারি প্রিসলেকে বিয়ে করেন। ১৯৯৬ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। পরে একই বছর তিনি নার্স ডেবি রাওকে বিয়ে করেন। কিন্তু তার এই সংসারও বেশি দিন টিকেনি। ১৯৯৯ সালেই তাদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদের আগে এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম দেন এই দম্পতি।

শুধু একক অ্যালবামই নয়, বিভিন্ন কনসার্ট ও স্টেজ প্রোগ্রামে মাইকেল জ্যাকসন ছিলেন অতুলনীয়। বিশেষ করে মনোমুগ্ধকর গানের সঙ্গে তার স্বতন্ত্র অঙ্গভঙ্গি ও দৃষ্টিনন্দন নাচ তাকে নিয়ে গিয়েছিল খ্যাতির শীর্ষে। ফলে একসময় মাইকেল জ্যাকসন কেবল একটি নামই থাকেনি। এটি হয়ে যায় সংগীত ও বিনোদন জগতের একটি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান।

সংগীত জগতে অসামান্য অবদান রাখায় ১৯৮৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান তাকে ‘হোয়াইট হাউস মেডেল’ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের বাঁধার কারণে তা হয়নি। পরে মানবকল্যাণে সরকারি প্রচারণায় অবদান রাখায় তাকে প্রেসিডেন্সিয়াল হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান।

সংগীত জগতের পাশাপাশি মানবসেবামূলক কাজেও অবদান রেখেছেন এই কিংবদন্তি। শিশুদের কল্যাণে তিনি ‘হিল দ্য কিডস’ নামে এক বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন। মানবসেবার লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং তহবিল সংগ্রহে ভূমিকা রেখেছেন। অন্যান্য বিনোদনকর্মীদের তুলনায় মাইকেল সর্বাধিক মানবসেবামূলক কাজ করায় ২০০০ সালে তাকে স্বীকৃতি দেয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড।

১৩টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড ও ২৬টি আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন এই কিংবদন্তি। এছাড়া ফিস্ক ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন তিনি।

কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে অবশেষে ২০০৯ সালের ২৫ জুন না ফেরার দেশে চলে যান কিংবদন্তি পপ শিল্পী মাইকেল জ্যাকসন। পরবর্তীতে লস এঞ্জেলস কাউন্টি করোনার এক আদেশে বলা হয়, দায়িত্বে অবহেলা ও অতিরিক্ত ওষুধ দেয়ার মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ অভিযোগে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সাজা হয়।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
উপদেষ্টা হওয়ার আগে আমি নিজেও বাধ্য হয়ে ঘুষ দিয়েছি : অর্থ উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
ঢাকায় শুরু হচ্ছে সার্ক দেশগুলোর পণ্য নিয়ে বৃহৎ বাণিজ্য মেলা Sep 14, 2025
img
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লুৎফুজ্জামান বাবর Sep 14, 2025
img
এবার আইটেম গানে চমক দিলেন সামিরা খান মাহি! Sep 14, 2025
img
চাকসু নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু, ৭ জনের মনোনয়ন ফরম গ্রহণ Sep 14, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরও ৩ জনের, হাসপাতালে ভর্তি ৬৮৫ Sep 14, 2025
img
বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে তিস্তা ও দুধকুমার নদী, প্লাবিত হতে পারে উত্তরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল Sep 14, 2025
img
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো সভাপতির আসনে সৌরভ গাঙ্গুলি! Sep 14, 2025
img
সাদিক কায়েমের ফেসবুকে সাইবার হামলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে অভিযোগ Sep 14, 2025
img
ফেব্রুয়ারির ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে মহোৎসবের : প্রধান উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ ফিলিপাইনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের Sep 14, 2025
img
লা লিগায় ইয়ামালবিহীন বার্সার হতাশাজনক রেকর্ড Sep 14, 2025
img
বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন অভিনেত্রী মধুমিতা, কে হচ্ছেন জীবনসঙ্গী? Sep 14, 2025
img
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরেকটি ছায়া মওদুদীবাদী দল প্রয়োজন নেই : মাহফুজ আলম Sep 14, 2025
img
অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলেন চমক Sep 14, 2025
img
নেপালে বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭২ Sep 14, 2025
img
ভালো শেয়ারের দরপতনে নড়বড়ে শেয়ারবাজার Sep 14, 2025
img
সেনাপ্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন মালদ্বীপ ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স প্রধান Sep 14, 2025
img
শিল্পীদের এত পাপী ভাববেন না : কনকচাঁপা Sep 14, 2025
জাকসু নির্বাচনে বিজয়ীদের অভিনন্দন ডাকসু জিএস এস এম ফরহাদের Sep 14, 2025