অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে হ্যাংওভার হয় সেটা অনেকেই জানেন। কিন্তু আপনি কি জানেন অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের কারণেও এটি হতে পারে? এর ফলে দেখা দিতে পারে ক্লান্তি, মাথাব্যথা, বুকজ্বালা, অস্বস্তি, অবসন্নতা এবং অলসতার মতো প্রচলিত হ্যাংওভারের লক্ষণগুলো।
এর কারণ কী?
অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলে সাধারণত এটি হয়ে থাকে। কুকিজ, ব্রাউনিজ, মিষ্টি জাতীয় পানীয়, মাফিনস, এমনকি চিপস, প্যানকেকস বা পাস্তা জাতীয় পরিশোধিত ময়দা দিয়ে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করলেও এসব খাবার থেকে প্রচুর পরিশোধিত চিনি আমাদের দেহে প্রবেশ করে।
অতিরিক্ত চিনি আমাদের দেহে ডোপামিন ও সেরোটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। ডোপামিন হরমোন আনন্দের সাথে সম্পর্কিত এবং সেরোটোনিন হরমোন সুখের সাথে সম্পর্কিত।
আপনি যখন চিনি গ্রহণ করেন, ডোপামিন এবং সেরোটোনিন নিঃসরণ তৎক্ষণাত আনন্দ এবং আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি এবং হ্রাসের ফলে হ্যাংওভার দেখা যায় এবং ডোপামিন-সেরোটোনিনের হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে অলসতা-বিষণ্নতা প্রভৃতি দেখা দেয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমূহ
সাধারণ চিনি গ্রহণের ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় এবং এর ফলে ইনসুলিন হরমোন নিঃসৃত হয় যা চিনিকে বিপাক করতে সহায়তা করে। সময়ের সাথে সাথে বারবার চিনি গ্রহণের ফলে ইনসুলিন রক্তে বিদ্যমান চিনির প্রতি কম সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এটি ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’ নামক একটি অবস্থার দিকে পরিচালিত করে, যা শেষ পর্যন্ত ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
এছাড়াও চিনির কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রভাবিত হতে পারে। চিনি গ্রহণের পরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কোষের কর্মক্ষমতা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায় এবং ৫ ঘণ্টাব্যাপী তা স্থায়ী হতে পারে।
চিনির কারণে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ ঘটতে পারে। এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস এবং বিপাকীয় ব্যাধি সমূহের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
কীভাবে চিনির হ্যাংওভার কাটিয়ে উঠবেন?
১. চিনির হ্যাংওভার কাটিয়ে ওঠার সেরা উপায় হলো চিনি গ্রহণ এড়িয়ে যাওয়া। মিষ্টির প্রতি বেশি আগ্রহ থাকলে খেজুর, ডুমুর, গুড় বা টাটকা ফলের মতো স্বাস্থ্যকর বিকল্প গ্রহণের চেষ্টা করুন।
২. আগের রাতে বেশি চিনি গ্রহণ করে থাকলে ৩০ মিনিটের জন্য শরীরচর্চা করতে পারেন।
৩. মৃদু উষ্ণ লেবুপানি গ্রহণ করুন। লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি রক্তে শর্করার মাত্রা ধরে রাখতে উপকারী।
৪. দারুচিনি গ্রহণ করুন, এটি রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৫. ফাইবার সমৃদ্ধ সালাদ খান। গাজর, ব্রুকলি, পালং শাক, ক্যাল বা লেটুস জাতীয় সবজি থেকে প্রাপ্ত দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবার চিনির শোষণকে ধীর করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা উন্নত করতে সহায়তা করে।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি।
টাইমস/এনজে