আমরা অনেকেই হয়তো বিষয়টা স্বীকার করতে চাই না যে মহিলারা কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হন। তবে প্রতিটি কর্মজীবী মহিলা কোনো না কোনোভাবে অফিসের রাজনীতি, যৌনতাবাদ ও অন্যান্য অনেক সমস্যা মোকাবেলা করে।
তাদের মধ্যে অল্প কিছু নারীই এ অসুবিধাগুলো মোকাবেলা করে শীর্ষে পৌঁছাতে পারে। পুরুষ প্রভাবিত এ সমাজে অধিকাংশ নারীই শুধু টিকে থাকার লড়াই করে যায়।
এ কারণে কর্মক্ষেত্রে নারীদের কাজের অভিজ্ঞতাকে আরও সুখকর এবং সহজ করে তুলতে নারী সহকর্মীদের পরস্পরের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন।
কাজের ক্ষেত্রে কীভাবে একে অন্যকে সাহায্য করতে পারেন?
কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে একে অন্যের সহায়তায় এগিয়ে আসা সম্ভব। আসুন এমন কয়েকটি উদাহরণ দেখে নিই।
যোগাযোগ বা সংযোগ স্থাপন
যোগাযোগ প্রত্যেক পেশার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে সংযোগ স্থাপন করুন। কারণ তারাই আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য গড়ে তুলবে।
তবে এটি সত্যি যে বেশীরভাগ শীর্ষ পদগুলো এখনও পুরুষদের দখলে। তাই অফিসের পুরুষ সহকর্মীদের সাথেও অফিসিয়াল সংযোগের পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে অন্যান্য মহিলা সহকর্মীর সাথে যোগাযোগ বাড়ানোটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
এমনকি আপনি কেবলমাত্র মহিলাদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি করতে পারেন, যেখানে আপনি এবং অন্যরা ক্যারিয়ারের অগ্রগতি এবং কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিরোধের কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করবেন।
ঘরোয়া কাজে কিছুটা দৃষ্টি আকর্ষণ করা
খেয়াল করুন কে কফি বানায়, কে জন্মদিনে কেক আয়োজন করে, উপহারের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে বা মাসিক সভায় খাবার ওর্ডার করে। এগুলোকে “অফিসের গৃহকর্ম” বলা হয়। মহিলারা কেবল এই জাতীয় কাজের জন্য স্বেচ্ছাসেবকই নন, তাদেরকে অনেক সময় এসব কাজের জন্য চাপও দেওয়া হয়।
এসব কাজ পালা করে পুরুষ সহকর্মীদের সাথেও ভাগ করে নিন। এগুলো লিঙ্গ-ভিত্তিক কাজ নয় এবং একা মহিলাদের এ কাজের দায়িত্ব নেওয়া উচিত নয়। এর মধ্য দিয়ে পুরুষ সহকর্মীর মধ্যেও লিঙ্গ বৈষম্যমূলক মনোভাব হ্রাস পাবে।
গল্পগুজবের পাল্লায় না পড়া
মানুষ গসিপ করতে পছন্দ করে। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের মাঝে বন্ধন তৈরি করে এবং একটি আলাদা গোষ্ঠী তৈরি করে।
আপনি যদি পুরুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ অফিসের একজন মহিলা হন তবে এমন কোনও কথোপকথনে ঝাঁপিয়ে না পড়াই ভাল যেখানে পুরুষরা অন্য মহিলাদের নিয়ে গসিপ করছেন।
তারা এই গসিপগুলোতে আবেগ, চাহিদা, রাজরাণী ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে নেতৃত্বের লক্ষ্যে পুরুষরা নারীদের পছন্দ করবে না। সুতরাং গসিপ দলের অংশ হওয়ার পরিবর্তে আপনার উচিত অন্যান্য মহিলাদের সাথে আরও দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করা।
সিগন্যাল-বুস্টিং
প্রায়শই কর্মক্ষেত্রে দেখা যায় যে, যখনই কোনও মহিলা সভায় কোনও কিছু ব্যাখ্যা করতে শুরু করেন, একজন পুরুষ তাকে বাধা দিতে চেষ্টা করেন এবং তার কথা শেষ করতে দিতে চান না।
তাই যখনই কোনও মহিলা কোনও সভায় বক্তব্য রাখেন, তখন অন্য মহিলাদের উচিত এটি সমর্থন করা। আবার অনেক সময় দেখা যায় যে, কোনও মহিলা যখন প্রস্তাব দেয় তখন তা কোনও কারণ ছাড়াই অগ্রাহ্য করা হয়। এক্ষেত্রে অন্য মহিলারা তা পর্যালোচনার দায়িত্ব নিতে পারেন বা আলোচনা শুরু করতে পারেন।
পৃষ্ঠপোষকতা
আপনার ক্যারিয়ার বিকশিত হয়ে গেলে আপনি অন্যান্য মহিলাদের সহায়তা করার সুযোগ পাবেন। তবে এমন কিছু লোক থাকবে যারা নিজস্ব গোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক হবে।
যাইহোক, আপনার চারপাশের সংস্কৃতির পরিবর্তন করে আপনার কর্মক্ষেত্রকে মহিলাদের জন্য আরও উন্নত করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে মহিলারা যাতে অন্যায়ের শিকার না হয় এবং তাদের প্রতিভা বিকাশের সম্পূর্ণ সুযোগ পায় সেরকম পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
টাইমস/তরী/এনজে