রাতের অপূর্ণ ঘুমের পর এক কাপ কড়া কফি পান করলে সেটি আপনার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতাকে নষ্ট করে ফেলতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব বেথ (ইউকে) এর সেন্টার ফর নিউট্রেশন, এক্সারসাইজ এন্ড মেটাবোলিজমের একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্রিটিশ জার্নাল অব নিউট্রেশন প্রকাশিত গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, শরীরের বিপাকীয় মাত্রার ওপর কম ঘুম হওয়ার নির্দিষ্ট পরিমাণের প্রভাব পড়ে। কফি পান করলে তন্দ্রা ভাব কেটে গিয়ে প্রফুল্লতা আসে ঠিকই, কিন্তু এটি আপনার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্বজুড়ে কফির জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো পরিস্থিতির ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই নতুন এই গবেষণার ফলাফলের সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ গবেষণার জন্য ইউনিভার্সিটি অব বেথের মনোবিজ্ঞানীরা ২৯ জন সুস্থ নর-নারীকে পর্যায়ক্রমে তিনটি ধাপে পরীক্ষা করেছেন।
★ প্রথমবার, অংশগ্রহণকারীদের স্বাভাবিক নিয়মে রাতে ঘুমাতে বলা হয়েছিল এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে চিনিযুক্ত পানীয় পান করতে বলা হয়েছিল।
★ দ্বিতীয় বার, অংশগ্রহণকারীদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো হয়েছিল (গবেষকরা প্রতি ঘন্টায় ৫ মিনিটের জন্য তাদের কে জাগিয়ে দিতেন) এবং পরবর্তীতে তারা যখন জেগে ওঠে তাদেরকে সেই একই চিনিযুক্ত পানীয় পান করতে দেওয়া হয়েছিল।
★ শেষবার, অংশগ্রহণকারীদের আবারও ঘুমের বিঘ্ন ঘটানো হয়েছিল। কিন্তু এবার প্রথমে চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণের পূর্বে তাদেরকে এক কাপ কড়া কফি দেয়া হয়েছিল।
প্রতিটি পর্যায়ে চিনিযুক্ত পানীয় পানের পর অংশগ্রহণকারীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে শক্তির মাত্রা (ক্যালোরি) সাধারণ প্রাতরাশে গৃহিত শক্তির সাথে মিলিয়ে দেখা হয়।
এর ফলে জানা যায়, এক রাতের বিঘ্নিত ঘুম সকালের প্রাতঃরাশে আমাদের রক্তের গ্লুকোজ কিংবা ইনসুলিন এর প্রতিক্রিয়াকে খুব একটা প্রভাবিত করে না। অতীতের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এক বা একাধিক রাত ধরে অনেক ঘন্টা না ঘুমানোর নেতিবাচক বিপাকীয় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এ ব্যাপারে আশ্বস্ত হওয়া যায় যে, এক রাতের বিঘ্নিত (অনিদ্রা কিংবা আওয়াজের কারণে ভেঙে যাওয়া) ঘুমের প্রভাব একই রকম নয়।
গবেষণা থেকে আরও জানা যায়, প্রাতঃরাশের পূর্বে এক কাপ কড়া কফি পান করলে তা রক্তের গ্লুকোজের প্রতিক্রিয়াকে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি বৃদ্ধি করে। যদিও প্রান্তিক পর্যায়ের জরিপ থেকে জানা যায় কফির সাথে সুস্বাস্থ্যের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
অতীতের বিভিন্ন গবেষণায় আগে প্রমাণিত হয়েছিল যে ক্যাফেইন ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণ হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। এই নতুন গবেষণার ফলে জানা যাচ্ছে, রাতের বিঘ্নিত ঘুমের পর কফি পান করলে ঘুম ঘুম ভাব কেটে গেলেও তা প্রাতঃরাশে শর্করার মাত্রাকে সহ্য করার শারীরিক ক্ষমতাকে সীমিত করে দেয়।
সেন্টার ফর নিউট্রেশন, এক্সারসাইজ এন্ড মেটাবোলিজমের প্রফেসর জেমস বেট এই পর্যবেক্ষণটি পরিচালনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি প্রায় অর্ধেকের মতো মানুষ ঘুম থেকে ওঠার পর কোনো কিছু করার পূর্বে কফি পান করেন এবং যত বেশি ক্লান্তি আমরা অনুভব করি, ততো শক্তিশালী কফি আমরা গ্রহণ করি। এই গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ এবং এর সুদূরপ্রসারী স্বাস্থ্য প্রভাব রয়েছে। কারণ এখনো শারীরিক ক্রিয়াকলাপের ব্যাপারে আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘সহজ করে বললে, এর ফলে আমাদের শর্করা নিয়ন্ত্রণ ব্যহত হয়। তাই কফি পানের প্রয়োজন হলে সেটি খাবর গ্রহণের পর পান করতে হবে।’
উল্লেখ্য, কফি পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়। প্রতিদিন পৃথিবীতে প্রায় দুই বিলিয়ন কাপ কফি পান করা হয়। তথ্যসূত্র -সাইন্স ডেইলি
টাইমস/নওশাদ/এনজে/এসএন