ডেমেনসিয়া একটি মস্তিষ্কের রোগ। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি, ভাষাগত দক্ষতা, কর্মক্ষমতা, চিন্তাশক্তি প্রভৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫ কোটি লোক এই রোগে আক্রান্ত। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ৩ গুণ বেড়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অবসর সময়ের শরীরচর্চা, প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা, সাইক্লিং, সাঁতার প্রভৃতি পরবর্তী জীবনে ডেমেনসিয়া আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কম করে।
তবে সম্প্রতি একটি গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত পরিশ্রম বা কঠোর কায়িকশ্রমের ফলে ডেমেনসিয়ায় আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অর্থাৎ পরিমিত কায়িকশ্রম এ রোগটিতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমালেও কঠোর কায়িকশ্রমের প্রভাব একেবারেই উল্টো।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বেশির ভাগ সময় কায়িকশ্রমের ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একটি বিশেষ দেহভঙ্গিতে অনেকক্ষণ স্থির থাকার প্রয়োজন পড়ে। ভারী ওজন বহন করতে হয়। পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ করতে হয় বা অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে অবস্থান প্রয়োজনীয়। এই সব কাজ খুব দ্রুত করে যেতে হয় এবং মধ্যবর্তী সময়ে শরীর নিজেকে পুনরুদ্ধারের অবসর পায় না।
অন্যদিকে অবসর সময়ে করা শরীরচর্চার মধ্যবর্তী সময় শরীর নিজেকে পুনরুদ্ধারের জন্য যথেষ্ট বিরতি পায়। শরীরচর্চা বা প্রতিযোগিতামূলক ক্রিয়ার সময় দেহভঙ্গিতেও বৈচিত্র আসে। এর ফলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে এবং রক্তে প্রদাহ হ্রাস ঘটে। একই সাথে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি ঘটে, স্নায়ু সতেজ থাকে এবং মস্তিষ্কের যে অঞ্চলে স্মৃতি সুরক্ষিত থাকে তা সংরক্ষিত হয়। ফলস্বরূপ ডেমেনসিয়া রোগটিতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমে।
অন্যদিকে, কায়িকশ্রম রক্তে প্রদাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, কঠোর কায়িকশ্রমের সাথে হৃদরোগ ও মৃত্যুঝুঁকি বৃদ্ধির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কায়িকশ্রমের সাথে যুক্ত লোকেদের হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা দেখা দেয়ার ফলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ সীমিত হয়ে যায়। এর মধ্যদিয়ে ডেমেনসিয়া রোগটিতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক নাবে নীলসন বলেন, ‘শরীরচর্চা এবং কায়িকশ্রমের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে তা আমাদের গবেষণায় প্রমাণিত। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উচিত এই দুটির মধ্যে পার্থক্য করা, কারণ স্বাস্থ্যের ওপর এদের প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন।’
ডেনমার্কের কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। তথ্যসূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে
টাইমস/এনজে/এসএন