আধুনিক পৃথিবীর জটিল সমাজ ব্যবস্থায় আমরা দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরণের মানসিক চাপ ও উদ্বেগের সম্মুখীন হয়ে থাকি। নিউ নরমাল বা কোভিড-১৯ মহামারির কালে জীবনযাপনের জটিলতা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে মানসিক চাপের মাত্রা।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগের কারণে আমাদের স্বাস্থ্য নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত হয়। ব্যাহত হয় আমাদের প্রাত্যহিক নানা কর্মকাণ্ড। তবে আশার কথা হলো, খুব সহজে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডাক্তারের সহায়তা ছাড়াই মানসিক চাপ থেকে দুরে থাকা সম্ভব।
আসুন মানসিক চাপ ও উদ্বেগ মোকাবেলার বেশকিছু কৌশল সম্পর্কে জেনে নিই-
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দুর করার সব থেকে ভালো উপায় হচ্ছে, প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তোলা। এর ফলে আমাদের মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা এবং হিপোক্যাম্পাস অঞ্চলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। আর এই অঞ্চল দুইটি আমাদের মেজাজ, অনুপ্রেরণা এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এছাড়াও এর ফলে দেহে অ্যান্ডোরফিন নামক এক প্রকার হরমোন নিঃসরিত হয়, যা সুখানুভূতির সৃষ্টি করে।
ঘুমের ব্যাপারে সচেতন থাকুন
নিয়মিত শরীরচর্চার ফলে ঘুম ভাল হয়। ভাল ঘুম আমাদের মানসিক চাপ বা স্ট্রেস মোকাবেলা করতে সহায়তা করে এবং হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। তবে দীর্ঘ সময় ঘুমানো গুরুত্বপূর্ণ নয়, ঘুমের নির্দিষ্ট চক্র সম্পন্ন করাটা বেশি কার্যকরি। এ চক্রটি হচ্ছে হালকা ঘুম থেকে গভীর ঘুম এবং আবারও ফিরে আসা।
ঘুম ভাল করতে নিয়মিত রুটিন মাফিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া উচিত। এছাড়াও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে এমন খাবার-পানীয় (অ্যালকোহল-ক্যাফেইন) পরিহার করতে হবে। অন্ধকার ও অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা স্থানে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।
শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
মাঝে মধ্যে সাধারণ শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভাল ফল পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস টেনে নিতে হয়, তারপর অপেক্ষাকৃত আরেকটু ধীর গতিতে শ্বাস ছেড়ে দিতে হয়।
এ বিষয়ে আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব স্ট্রেস কর্তৃক প্রকাশিত কন্টেন্টমেন্ট ম্যাগাজিনের সম্পাদক ড. সিনথিয়া আক্রিল বলেন, ‘যখন আপনি আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া ধীর করে আনেন, তখন আপনার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতার অনুভূতি ফিরে আসে। এই বিরতি আপনাকে অনুভব করতে সাহায্য করে যে, আপনি এবং আপনার সাথে যা ঘটছে তা এক নয়। আপনি অন্ধ প্রতিক্রিয়া দেখানোর পরিবর্তে ঠাণ্ডা মাথায় সে সম্পর্কে ভাবতে পারেন।’
যোগ ব্যায়াম করুন
যোগ ব্যায়ামও এক ধরণের শরীরচর্চা। তবে যোগ ব্যায়াম চর্চা করলে অ্যান্ডোরফিন নিঃসরণের পাশাপাশি দেহের স্ট্রেস রেসপন্স সিস্টেম হিসেবে পরিচিত হাইপোথ্যালামিক-পিটুইটারি-অ্যাড্রেনাল ত্রয়ী নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ঘুমের উন্নতি ঘটে।
মাইন্ডফুলনেশ ও মেডিটেশন
মাইন্ডফুলনেশ ও মেডিটেশন মানসিক চাপ ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণের দুইটি অন্যতম উপায়। ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন এন্ড মেডিসনের সেন্টার ফর হেলদি মাইন্ডস কর্তৃপক্ষের করা এক গবেষণা থেকে এ বিষয়ে আশ্চর্যজনক ফলাফল পাওয়া গেছে।
গবেষকরা দেখেছেন নিয়মিত মেডিটেশনের মধ্য দিয়ে বুদ্ধ মঙ্কদের (সন্ন্যাসীদের) মস্তিষ্কের গঠন স্থায়ী রূপে পরিবর্তিত হয়। গবেষণায় একজন ৪১ বছর বয়স্ক সন্ন্যাসীর মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এটি ৩৩ বছর বয়সীদের মতই সজীব।
সেন্টার ফর হেলদি মাইন্ডস এর প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ডেভিডসন বলেন, ‘ফলাফল পেতে হলে আপনাকে সন্ন্যাসীদের মতো আপনার সারা জীবন উৎসর্গ করতে হবে না। পরিমিত অনুশীলনের মধ্য দিয়েই আপনি মানসিক চাপ ও উদ্বেগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফল পারেন।’
ডেভিডসন আরও বলেন, ‘আপনি প্রতিদিন সকালে ও বিকালে মাত্র ১ মিনিট করে অনুশীলন করতে পারেন। মস্তিষ্কের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে শরীরচর্চার মতই নিয়মিত মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করা প্রয়োজন।’
তথ্যসূত্র: সিএনএন
টাইমস/এনজে/এসএন