সৎ-পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ গণ মানুষের নেতা মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী

চির জীবনের জন্য বিদায় নিলেন সিলেট ৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। তিনি ছিলেন সাদা মনের অধিকারী দিলখোলা সজ্জন ব্যক্তি। মানুষের মৃত্যুর পর হয় কাজের প্রকৃত মূল্যায়ন। সৎ-পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ, গরীব-ধনী ও আত্মীয় স্বজনদের আপনজন এই মানুষটিকে আমরা হারালাম। তিনি মানুষের সত্যিকার ভালোবাসা পেয়েছেন। গণমানুষের অন্তরে তাঁর অবস্থান।

এই আপনজন ব্যক্তির করোনা আক্রান্তের খবর পেয়ে ব্যথিত হই। ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি টিকা নেন। ৭মার্চ করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। ১১মার্চ তিনি আনুমানিক দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাহি রাজিউন)।

এর কিছুক্ষণ পর জন নন্দিত এই রাজনীতিবিদ ও শিক্ষানুরাগী সাংসদের ছোট ভাই ইংল্যান্ড প্রবাসী আহমেদ উস সামাদ চৌধুরীর ফেইসবুকের একটি পোস্ট নজরে আসে। তিনি লিখেন ''ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাহি রাজিউন। অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আমার ভাই মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এইমাত্র দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন।"

তিনি ইতোপূর্বে তাঁর ভাইয়ের করোনা আক্রান্তের খবর জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছিলেন।

আমাদের পরিবারের সাথে তাঁদের পরিবারের আত্মীয়তার একটি যোগসূত্র আছে। ১৯৮০ সালে যার সূত্রপাত। তখন আমি ক্লাস সেভেনের ছাত্র। আমার চাচাতো ভাই সৈয়দ সালেহ আহমদ। তিনি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর আপন ভাগ্নি হাজেরা বেগম চৌধুরীকে (সাজু) বিয়ে করেন। আমার ভাবির বাড়িও ফেঞ্চুগঞ্জের নূরপুর।

তাঁর এক ভাই জুনেদ চৌধুরী আমেরিকার নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। সেখানকার বাঙালী কমিউনিটির নানা কাজে ভালো ভূমিকা রাখছেন। তিনি সাংসদের অনেক প্রিয় ভাগিনা ও বিশ্বস্ত পরামর্শক।

প্রিয় মামার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তিনি আমেরিকা থেকে দেশে আসার পর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে লাশের সাথে ঢাকা থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ আসেন। ১২ মার্চ আনুমানিক দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার ফেঞ্চুগঞ্জ শাহজালাল সার কারখানা মাঠে অবতরণ করে।

সাংসদের লাশ তাঁর নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। প্রিয় মানুষটিকে দেখার জন্য বাড়িতে ভীড় লেগে যায়। আমিও লাইনে দাঁড়িয়ে শেষ বারের মতো তাঁকে দেখি।

আমাদের সকলকে একদিন চলে যেতে হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছেঃ কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মউত (সূরা আল ইমরান আয়াত ১৮৫)। অর্থাৎ প্রত্যেক জীবিত প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।

করোনা মহামারী গত এক বছরে দেশে প্রায় আট হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে (সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন ১১মার্চ ২০২১)। এই মহামারী মোকাবিলায় বিশ্বের অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশের সাফল্য অনেক। মৃত্যুর হারও অনেক দেশের থেকে কম। তবু্ও এই মহামারীতে বেশ কজন কীর্তিমান মানুষকে হারিয়েছি যা দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। করোনা আক্রান্তদের সেবা করতে গিয়ে সম্মুখ যোদ্ধাদের মধ্যেও অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন।

মাত্র ৬৬ বছর বয়সে সুন্দর মনের অধিকারী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যু পরিবার-সমাজ-দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। সাংসদ ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত শাবি পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ স্যার ১১ মার্চ এক শোকবার্তায় প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

সাংসদের বাড়িতে গিয়ে অনেকের সাথে আমার দেখা হয়। প্রয়াত সংসদ সদস্যের ভাগ্নি জামাই ফজলুর রহমানের সাথে বেশ কিছু সময় আলাপ হয়। তিনি আমার পূর্ব পরিচিত ঘনিষ্ঠজন। তিনি আমাকে বাড়ি ঘুরে দেখান। নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাড়িটিও যেন তাদের প্রিয়জনকে হারিয়ে আজ অভিভাবক বিহীন। বাড়িতে আগের মতো সবই আছে কিন্তু প্রধান ব্যক্তিটি নেই। এ যেন বিরাট শূন্যতা যা কখনো পূরণ হবার নয়।

সাংসদের বাড়ির সামনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন জামে মসজিদ। তাঁর ইচ্ছে ছিল অবসর গ্রহণের পর মসজিদে নামাজ পড়বেন এবং তিনি পুকুর ঘাটে বসে এর দিকে থাকিয়ে থাকবেন। পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিটির অবসর নেওয়া আর হলো না। মসজিদের পাশে ফুলের বাগানে নিজের দেখানো জায়গায় তাকে কবর দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ২০০৮ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী এই মানুষটির জানাজার মাঠ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত লোকজনে পরিপূর্ণ। এতে নানা শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। বিকাল সোয়া ৫ টায় ফেঞ্চুগঞ্জ এর কাসিম আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা নামাজে ইমামতি করেন দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী জামে মসজিদের ইমাম হাফিজ মাওলানা মিছবাউর রহমান। জানাজার নামাজে বেশ কজন সাংসদ, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সহ সমাজের নানা শ্রেণি পেশার গণ্য মান্য মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

জানাজার পূর্বে পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সাংসদের বড়ভাই সাহিদ উস সামাদ চৌধুরী, ভাগ্নে জুনেদ চৌধুরী।

মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর ভালো কাজ কবুল করে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন, আমীন। প্রয়াত সাংসদের পরিবারসহ ঘনিষ্ঠজনদের জন্য রইল গভীর সমবেদনা।

লেখক পরিচিতি:
অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

Share this news on: