পদ্মা সেতুর কার্পেটিংয়ে কত খরচ?

'পিচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি/ তার সাথে এই মনটারে বেঁধে নিয়েছি'- প্রশস্ত মসৃণ সড়কে বের হলে ষাটের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই গানটি অনেকেই এখনো আনমনে গেয়ে থাকেন। আর মাত্র কয়েকদিন পর এমনই এক দীর্ঘ প্রশস্ত পথের দেখা পাওয়া যাবে পদ্মা সেতুতে। ৯ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ এই পদ্মা সেতুর পিচ ঢালাইয়ের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। যার শুরুটা হয়েছে গত ১০ নভেম্বর সকালে।

ঐদিন সেতুর ৩৯ নম্বর স্প্যানের ওপর কার্পেটিং বা পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। তবে একদিন বা দুইদিনের কাজ তো নয়, দীর্ঘ প্রায় তিন মাসের মতো সময় লাগবে পুরো পদ্মা সেতুর কার্পেটিংয়ের কাজটি করতে।  


কিন্তু কত টাকা খরচ পড়বে পদ্মা সেতুর পুরো কার্পেটিং এর কাজ করতে? প্রতি বর্গমিটার কার্পেটিংয়েই বা কত টাকা লাগবে? 

সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন ভায়াডাক্ট সহ পদ্মা সেতুর ১ লাখ ৫২ হাজার ৯ বর্গমিটার পথ কার্পেটিং করতে হবে । এরমধ্যে মূল সেতুতে রয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার বর্গমিটার কার্পেটিং করা হবে। 
পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন আনুষঙ্গিক ব্যয়সহ সেতুর ১ লাখ ৫২ হাজার ৯ বর্গমিটার কার্পেটিং খরচ পড়বে প্রায় কোটি টাকা। সেই হিসেবে প্রতি বর্গমিটার কার্পেটিংয়ে লাগবে ৪ হাজার ৬৫০ টাকা। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে এই কার্পেটিং করা হবে?পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলীরা জানান, কার্পেটিং করার আগে চারটি স্তরের নিরোধক প্রলেপ সেতুর সড়কপথের ওপর দেয়া হবে। এসব তরল প্রলেপ বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। এরমধ্যে সাদা, তারপর হলুদ, কমলা এবং সর্বশেষ কালো রঙের পানি নিরোধক প্রলেপ দেয়ার কাজ হবে। এরপরে করা হবে পিচ ঢালাইয়ের কাজ।  

পদ্মা সেতুর এই কার্পেটিং এর কাজটি করছে প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড বা পিডিএল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। পিডি এলের প্রকৌশলীরা জানান, ১০০ মিলিমিটার পুরু পিচ ঢালাই করা হবে। এর মধ্যে প্রথমে ৬০ মিলি মিটার বাউন্ডারি কোর্স এবং সবশেষে ৪০ মিলিমিটার ওয়ারিং করা হবে।  

পিডিএল সূত্রে জানা গেছে, তারা পদ্মা সেতুর কার্পেটিং করার আগে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ে, পায়রা সেতুর কার্পেটিং করেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তারা প্রতিদিন ৯০০ মিটার কার্পেটিং করতে পারবে। কিন্তু কার্পেটিংয়ের এর জায়গা বা পথ আগে বুঝিয়ে দিতে হবে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলে তাহলে জানুয়ারির মধ্যেই পুরো পদ্মা সেতুর কার্পেটিং তারা শেষ করতে পারবে।  

এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্র জানায় সূত্রে জানা গেছে, মূল সেতুর ৭৮৫৪ টি প্যারাপেট ওয়ালের মধ্যে ৭২৫টি বসানোর এরই মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। এ মাসেই বাকি প্যারাপেট ওয়াল বসানো সম্ভব হবে। এছাড়া সড়ক বিভাজনের বেষ্টনীর কাজটিও প্রায় শেষের পথে।  

এছাড়া পুরো পদ্মা সেতুতে ৪১৬ টি ল্যাম্পপোস্ট বসবে। এর মধ্যে মূল সেতুতে থাকবে ৩৬৮ টি ল্যাম্পপোস্ট। সেতুর প্রতি ৩৬ মিটার পর পর একটি করে ল্যাম্পপোস্ট বসানো হবে। এই নভেম্বর মাসেই ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শুরু হবে বলে সেতু কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ টাইমসকে জানিয়েছে। তারা জানায়, ৯৫টি ল্যাম্পপোস্ট প্রকল্প এলাকায় চলে এসেছে। ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো হবে এলইডি। প্রতিটি বাতি ১৭৫ ওয়াট আলো ছড়াবে, যেগুলো তৈরি করেছে চীন।

Share this news on:

সর্বশেষ