শিশুরা খেতে না চাইলে কি করবেন?

বেশিরভাগ মায়েরই অভিযোগ—বাচ্চা খেতে চায় না। কিছু কিছু রোগের কারণে শিশুদের রুচি কমে যেতে পারে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অত জটিল কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রেই এ বিষয়ে মা-বাবার উৎকণ্ঠা থাকে।

শিশুর আসলে কোনো রোগ নেই, সমস্যাটা তার মনে। বয়স অনুযায়ী মানসিক ও শারীরিক বিকাশ অন্য বাচ্চাদের মতো হলে শিশুর খাওয়া নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।

তবে কিছু বাচ্চা আছে যারা, সত্যি সত্যি খায় না। বৃদ্ধিটাও ঠিকমতো হয় না। তাহলে দেখতে হবে যে বাচ্চাটি অপুষ্টির শিকার হচ্ছে কি না বা তার রক্তশূন্যতা হয়েছে কি না? না কি বাচ্চার ঘন ঘন কোনো সংক্রমণ হচ্ছে, যার জন্য খাওয়ায় রুচি কমে যাচ্ছে। যদি শিশুটির রক্তশূন্যতা থাকে, অপুষ্টি থাকে—বাচ্চাটি বসে থাকবে, খুব বেশি সচল থাকবে না। তাহলে এগুলো দেখতে হবে।

শিশুর পেছনে খাবারের থালা নিয়ে বহু অভিভাবককে রীতিমতো দৌড়াতে হয়। অভিযোগ, তাঁদের বাচ্চা একেবারেই খেতে চায় না। কেন শিশু খেতে চায় না, কী করলে সে ঠিকমতো খাবে, কিভাবে তাকে খাওয়ানো দরকার।

শিশু খেতে চায় না কেন?

আসলে খাওয়ার ব্যাপারে যত অনিয়মই শিশুর না খেতে চাওয়ার অন্যতম কারণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের অনিয়ম অভিভাবকরা করেন না জেনে। কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চার আবদার মেটাতে গিয়েও কিছু বিপত্তি ঘটে। বাইরের লোভনীয় খাবারে শিশুকে অভ্যস্ত করে তুলেও কেউ কেউ শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নষ্ট করেন।

অনেক অভিভাবক খাওয়ার মাঝে শিশুকে বিস্কুট, ফল, লজেন্স, আইসক্রিম ইত্যাদি খেতে দেন। অনেকে আবার সময় ধরে খাওয়ান—লক্ষ করেন না শিশুর পেটে ক্ষুধা আছে কি নেই। অনেকে শিশুর কান্না শুনলেই মনে করেন, তার বুঝি ক্ষুধা পেয়েছে। অথচ শিশু কাঁদতে পারে অন্য অনেক কারণেই। কেউ কেউ তার শিশু একবেলা ঠিকমতো খায়নি বলেই অস্থির হয়ে যান। আবার সকাল ৭টায় পেট ভরে খায়নি বলে সকাল ৮টায় আবার খাওয়ানোর জন্য পীড়াপীড়ি করেন। এসব অভ্যাসই শিশুর জন্য ক্ষতিকর।


আসুন জেনে নেই শিশুরা কেন খেতে চায় না।

পূর্ণভাবে খিদে

পরিপূর্ণভাবে খিদে না লাগলে শিশুরা খেতে চায় না।এছাড়া জোড় করে খাওয়ানো ভালোভালে খুদা লাগেনি বলে প্লেটের খাবার সে শেষ করতে পারবে না।


যখন-তখন খাবার

শিশুদের রুটিন মাফিক খাওয়ালে ভালো। যখন-তখন খাবার দেওয়ার কারণে যথাসময়ে তার খিদে লাগবে না। আর সে খেতে পারবে না। অনেক শিশু স্কুল থেকে ফিরেই বিস্কুট, ফল বা ফলের রস ইত্যাদি খায়। তার এক ঘণ্টা পর হয়তো দুপুরের খাবারের সময়। তখন সে ঠিকমতো খেতে চাইবে না, কারণ ইতিমধ্যেই তার খিদে নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেক শিশু সারা দিন ইচ্ছামতো যখন-তখন বিস্কুট, ফল, লজেন্স, আইসক্রিম ইত্যাদি খেয়ে পেট ভর্তি করে রাখে। কিন্তু মূল খাবারের সময় তেমন কিছুই খায় না।

খাবারের স্বাদ

শিশুর পছন্দসই খাবার রান্না করুন। শিশু খাবারের যথাযথ স্বাদ অনুভব করতে পারবে না। খেতে পারছে না বলে ওই খাবারের প্রতি তার এক ধরনের বিরক্তি তৈরি হবে।

সময়সূচি অনুযায়ী খেতে দিন

বয়সভেদে শিশুর ক্ষুধা লাগার সময়ে কিছুটা পার্থক্য আছে। আপনার শিশুকে সব সময় নিয়ম বা সময়সূচি অনুযায়ী খেতে অভ্যস্ত করে তুলুন। কী খাওয়াচ্ছেন, তার চেয়ে বড় কথা হলো, কখন খাওয়াচ্ছেন। শিশু খেতে চাইছে না বা খাচ্ছে না—এ অজুহাতে তাকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় খাবার দেবেন না। শিশু একেবারেই খেতে না চাইলে প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। যখন-তখন খাবার দিয়ে তার খিদে নষ্ট করবেন না।

খাবারের বিরতি

সাধারণত দুই থেকে তিন বছর বয়সী বাচ্চাদের প্রতিবেলা খাবারের মাঝে দুই থেতে তিন ঘণ্টা বিরতি থাকা উচিত। বিরতির এই সময়ে যদি অন্য কোনো খাবার সে না খায়, তবে যথাসময়ে তার ক্ষুধা লাগার কথা।

তিন থেকে চার বছর বয়সীদের জন্য তিন থেকে চার ঘণ্টা বিরতিতে খাবার দেওয়া উচিত। এভাবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কিশোর বয়স পর্যন্ত প্রতিবেলা খাবারের মাঝের বিরতি একটু করে বাড়বে। এরপর বড়দের সঙ্গে তিন বেলা খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

অযথা জোর করবেন না

শিশুকে কখনো জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। তাকে একবার জোর করে খাওয়ালে পরে যখনই তাকে খাওয়াতে চাইবেন, তখনই সে ভয় পাবে। খাবারের প্রতি তার আগ্রহ কমে যাবে। একসময় খাবারের প্রতি তার বিতৃষ্ণা জন্মাতে পারে।

খাওয়ার সময় টিভি বা কার্টুন দেখা নয়

শিশুদের টিভি বা কার্টুন দেখিয়ে খাবার খাওয়ালে এগুলোতে সে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। এমনিতেই বেশি সময় টিভি দেখা শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। টিভি দেখার সময় খাওয়ালে শিশুর বদহজম হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কারণ এ সময় টিভিতে মনোযোগ থাকার কারণে পাকস্থলী থেকে প্রয়োজনীয় পাচক রস নিঃসৃত হয় না।

খাবারে ভিন্নতা আনুন

প্রতিদিন এক ধরনের খাবার না দিয়ে খাবারে ভিন্নতা আনুন। যদি তার মনের ভাব সে প্রকাশ করতে পারে, তবে সে যা খেতে চায় তা জেনে নিন। তার পছন্দমতো খাবার স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করে খেতে দিন। বাইরের খাবরের অপকারিতা সম্পর্কে তাকে বলুন।

বাইরের খাবার

বাইরের খাবার যে একেবারেই দেবেন না তা নয়। যখন বড়দের সঙ্গে কোথাও পার্টিতে যাবে বা পরিবারের সবার সঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাবে, নিশ্চয়ই বাইরের খাবার সে খেতে পারবে। তবে তার জন্য আলাদা করে প্রতিদিন বাইরের খাবার ঘরে আনবেন না বা তাকে বাইরে খেতে নিয়ে যাবেন না।

ডা. মানিককুমার তালুকদার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সুনামগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ গেল ১ জনের, আহত ১০ Sep 19, 2025
img
ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী জুবিন গর্গ আর নেই Sep 19, 2025
img
বছরের শেষ সূর্যগ্রহণ রোববার, বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে না Sep 19, 2025
আঙুলে হীরের আংটি, রোম্যান্টিক ক্যাপশন বাগদান সারলেন হুমা কোরেশি? Sep 19, 2025
কেন বারবার উঠে আসছে পিআর ভোটের দাবি? Sep 19, 2025
img
বাংলাদেশে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী জ্বালানি সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার জোর Sep 19, 2025
অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প থেকে সাশ্রয় হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা Sep 19, 2025
৬ মাসে দেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ৮৪০ কোটি ডলার Sep 19, 2025
মঞ্চ ছাড়াও জনপ্রিয়তা! আবিদের গানে নতুন স্বাদ Sep 19, 2025
img
ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে ২১ কিমি ম্যারাথন জয় তৌসিফ মাহবুবের Sep 19, 2025
img
সালমান এফ রহমানসহ ২৭ আন্তর্জাতিক গেটওয়ের বিরুদ্ধে বিটিআরসি’র মামলা Sep 19, 2025
img
পদ্মা সেতুতে ৬.০৩ মেগাওয়াট রুফটপ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষর Sep 19, 2025
img
দলীয় নির্দেশনা মানছেন না বিএনপি নেতা মিন্টু Sep 19, 2025
img
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনীর যৌথ মহড়া সমাপ্ত Sep 19, 2025
img
পাকিস্তানে পৃথক বিস্ফোরণে প্রাণ গেল অন্তত ১১ জনের Sep 19, 2025
img
সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের ৩ কর্মকর্তা বরখাস্ত Sep 19, 2025
img
রাজধানীতে ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশ শুরু Sep 19, 2025
img
সাবেক সংসদ সদস্য ডা. কামারুজ্জামান মারা গেছেন Sep 19, 2025
img
ভেল্লালেগের বাবার মৃত্যুর খবর শুনে স্তম্ভিত নবি, বললেন ‘শক্ত থাকো ভাই’ Sep 19, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার আরও ১৮৪৯ Sep 19, 2025