শিশুর দুধদাঁতের যত্ন নেবেন যেভাবে

শিশুর দাঁতের যত্ন নিতে হয় গর্ভকালীন প্রথম ছয় সপ্তাহ থেকে। এ সময়ে গর্ভের শিশুর দাঁত ও হাড় গঠনে গর্ভবতীর পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের অভাবে দাঁতের গঠন দুর্বল হয়ে যায়। পরে যত্ন নিলেও দাঁত সহজে নষ্ট হয়ে যায়। দাঁতের গঠন ও উজ্জ্বলতার জন্য গর্ভকালীন কোনো সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। এমনকি এ সময়ে অনেক চিকিৎসা গ্রহণ বিপজ্জনক হতে পারে। গর্ভকালীন মাড়ির রোগ বা দাঁতের ব্যথা পুষে রাখলে গর্ভের শিশুর ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে।

অনেকে মনে করেন, শিশুর দুধদাঁতের স্থায়ীত্বকাল কম বলে যত্নের প্রয়োজন নেই। গবেষণা বলছে, শিশুদের দুধদাঁতগুলো পড়ে যাওয়ার পরও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যত্ন নিতে হবে। কারণ-

* যথাযথ পুষ্টি পেতে : সুস্থ দাঁত খাদ্যকে উপযুক্ত চর্বণের মাধ্যমে হজমোপযোগী করে, খাবারের ইচ্ছা ও রুচিকে স্বাভাবিক রাখে।

* স্থায়ী দাঁতের ওপর বিরূপ প্রভাব : দুধদাঁতের শিকড়ের নিচে স্থায়ী দাঁতের গঠন শুরু হয়। দুধদাঁতের সংক্রমণ স্থায়ী দাঁতকে ক্ষতি করতে পারে। আবার স্থায়ী দাঁত এলোমেলো বা উঁচু-নিচু হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ দুধদাঁত আগে বা পরে পড়া।

* স্পষ্ট উচ্চারণ ও মুখমণ্ডলের আকৃতি : স্বাভাবিক কথা বলা, কবিতা আবৃত্তি বা গান গাওয়া, চোয়ালের গঠন ও মুখের আকৃতি ঠিক রাখতে দুধদাঁতের সুস্থতা জরুরি। স্থায়ী দাঁতকে ঠিক স্থানে আনার দিকনির্দেশনাও দেয় দুধদাঁত।

* মানসিক বিকাশ : শিশুর মানসিক বিকাশ, স্মৃতিশক্তি, আত্মবিশ্বাস, প্রাণচঞ্চলতা, লেখাপড়ায় মনোনিবেশসহ মানসিক বিকাশে অস্থায়ী দুধদাঁত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

* সার্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা : দীর্ঘ মেয়াদি দাঁতের সংক্রমণ রক্ত বাহিকায় মিশে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে, যেমন-হার্ট, মস্তিষ্ক, হাড়। অন্যদিকে চোয়ালের হাঁড়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
দাঁত ওঠার আগের সময়

সঠিক পরিচর্যার অভাবে ও অপুষ্ট শিশুর জিহ্বা, মাড়ি বা চোয়ালের অংশে ছত্রাক সংক্রমণ প্রায়ই দেখা যায়। এতে সাদা দইয়ের মতো প্রলেপ পড়ে, শিশু খেতে বিরক্ত করে ও কান্না করে। এ সমস্যা থেকে উপশম পেতে চিকিৎসকের পরামর্শে মুখ পরিষ্কার, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। দাঁত ওঠার আগে অনেক বাচ্চা ‘টিথিং’ নামে সাত-আট দিনের জটিলতায় ভোগে। লক্ষণ হিসাবে বিরক্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মাড়ির ফোলাভাব বা প্রদাহ, লালা ঝরানো, ক্ষুধা কমে যাওয়া, মুখের চারপাশে ফুসকুড়ি, হালকা তাপমাত্রা, ডায়রিয়া, কামড় বেড়ে যাওয়া বা মাড়ি ঘষা দেখা যায়। এ ধরনের সমস্যা হলে মাড়ি ম্যাসাজ, সতর্কতার সঙ্গে ঠান্ডা কোনো ফল বা শক্ত খাবার চিবানোসহ প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, শিশু যেন অপরিষ্কার কিছু মুখে না দেয় বা কিছু খেয়ে না ফেলে। অতিরিক্ত আঙুল চোষা রোধেও সচেতন থাকতে হবে। সাধারণভাবে ছয় মাসের দিকে, নিচের সামনের দাঁত ওঠা শুরু করলেও ক্ষেত্র বিশেষে বাচ্চা দাঁত নিয়ে জন্মাতে পারে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শে তা ফেলে দিতে হয়।

শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই, এতে মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় অতিজরুরি উপাদান আছে। যেসব মায়েদের নিরুপায় হয়ে ফিডারে খাওয়াতে হয় তাদের শিশুর মুখের যত্নে অধিক সচেতন হতে হবে। ফিডারে রাতে দুধ খাওয়ানোর সময় দুটি বোতল ব্যবহার করা উচিত। একটিতে দুধ ও অন্যটিতে পানি। কিছুক্ষণ পর পর দুধ ও পানি পরিবর্তন করে খাওয়ালে শিশুদের মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এমনিতেই মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন অণুজীব সুপ্ত অবস্থায় থাকে। অনুকূল পরিবেশ পেলে এরা সক্রিয় হয়ে নানা রোগের সৃষ্টি করে।

শিশুদের দাঁত ওঠার আগে টুথপেস্টের পরিবর্তে পরিষ্কার সুতি কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে আঙুলে পেঁচিয়ে মাড়ি ও জিহ্বা নিয়মিত সকালে ও রাতে খাবার পর ভালোভাবে মুছে দিতে হবে।

দাঁত ওঠার পর
বাচ্চাদের স্বভাব মিষ্টি খাবারের প্রতি দুর্বলতা। এ জাতীয় খাবারে অভ্যস্থ করা, অভিভাবকের অবহেলা সব মিলিয়ে দুধদাঁতে ক্যারিজ বা ক্ষয় রোগ খুব সাধারণ। র‌্যাম্পেন্ট বা নার্সিং বটল ক্যারিজ থেকে চিকিৎসার অভাবে সংক্রমণ দাঁতের গোড়াতে পৌঁছে দাঁতের গোড়া এমনকি মুখসহ ফুলে যাওয়ার ঘটনা দেখা যায়।

বেবি টুথপেস্টের গুণগত মান নিশ্চিত না হয়ে বা খেয়ে ফেলার আশঙ্কা থাকলে পেস্ট না দিয়ে নরম বেবি টুথব্রাশ পানিতে ভিজিয়ে দাঁত পরিষ্কার করে দিতে হবে।

বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়, তাই অভিভাবকরা তাদের সামনেই ব্রাশ করবে। এতে বাচ্চারাও দাঁতের যত্নের প্রতি আকৃষ্ট হবে। বাইরের খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে তাজা ফলমূলের জুস, শাকসবজি, সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ক্ষতিকর ফাস্টফুড, চিপস্, কোমল পানীয়, কৃত্রিম জুস, ক্যান্ডি ইত্যাদি চিনি জাতীয় খাদ্য থেকে শিশুদের বিরত রাখতে হবে। যেসব শিশুর দীর্ঘ সময় আঙুল চোষা অভ্যাস আছে, সেটাও বন্ধ করতে হবে।

দুধদাঁতের চিকিৎসা

কাঁদলে, জিদ করলে বা না খেলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব; বলে ছোটকাল থেকে শিশুদের ডাক্তার ভীতি তৈরি করেন অনেক অভিভাবক। এটা শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দুধদাঁত আক্রান্ত হলে এটি পড়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রক্ষা করার সর্বাধুনিক নিরাপদ চিকিৎসা এখন দেশের অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসকরা নিয়মিত দিচ্ছেন। তবে রোগের শুরুতে চিকিৎসা নিলে পদ্ধতি হয় সহজ ও অল্প সময়ে। শিশুরা সহযোগিতা না করলেও আছে নানা কার্যকর চিকিৎসাব্যবস্থা। অযথা ভয়ে রোগকে পুষে রেখে বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ দিয়ে জটিলতা বাড়ানো যাবে না। এক্ষেত্রে বেশকিছু নীরবে বেড়ে ওঠা রোগের উপসর্গ মুখ গহ্বরে প্রকাশ পেতে পারে, যেমন-জন্মগত হৃদরোগ, অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা, ডায়াবেটিস টাইপ-১ ও শ্বাসকষ্ট।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কবে শুটিং শুরু ‘খাদান ২’-এর? Dec 28, 2025
img
তোমার বাবা কিংবা বলি তারকা কাউকেই ভয় পাই না, জাহ্নবী বিতর্কে উত্তর ধ্রুব রাঠির! Dec 28, 2025
img
মানবিক হলেই অনেক কিছু বদলে যেতে পারে: পিয়া জান্নাতুল Dec 28, 2025
img
জামায়াতের ৩ জানুয়ারির মহাসমাবেশ স্থগিত Dec 28, 2025
img
বন্ধুর মেয়ের জন্মদিনে উরুগুয়েতে মেসি Dec 28, 2025
img
বিভাগীয় শহরে রাত ৮টায় অবরোধ সমাপ্তের ঘোষণা ইনকিলাব মঞ্চের Dec 28, 2025
img
নিষিদ্ধ দলকে অর্থায়নের অভিযোগে ইতালিতে গ্রেপ্তার ৯ Dec 28, 2025
img
বিপিএলে পারফর্ম করে পাকিস্তানে পরিচিতি পেয়েছি: খাজা নাফে Dec 28, 2025
img

রুমিন ফারহানা

সবাই যেহেতু হাঁস চাচ্ছে, তাই আমারও আপত্তি নেই Dec 28, 2025
img
বিএনপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে কী বললেন তাসনিম জারা? Dec 28, 2025
img

জকসু নির্বাচন

শিক্ষার্থীদের টাকা দেওয়ার অভিযোগ ছাত্রদলের বিরুদ্ধে Dec 28, 2025
img
'কারও সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করানো যাবে না' Dec 28, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন কবির আহমেদ ভুইয়া Dec 28, 2025
img

জাপা কো-চেয়ারম্যান মোস্তফা

‘কমপক্ষে ১০০ আসনে জয়ের লক্ষ্যে কাজ করছে জাতীয় পার্টি’ Dec 28, 2025
img
জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এনসিপি Dec 28, 2025
img
ডিসেম্বরের প্রথম ২৭ দিনে প্রবাসী আয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা Dec 28, 2025
img
সিলেট টাইটান্সে যোগ দিলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই Dec 28, 2025
img
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, নিরাপত্তা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডসহ ৮ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি Dec 28, 2025
img
নুরের গণ অধিকার পরিষদে যোগ দিলেন মেঘনা আলম Dec 28, 2025
img
শহীদ ওসমান হাদির আসনে এনসিপির হয়ে লড়বেন কে? Dec 28, 2025