টিভি ব্যক্তিত্ব অপরাহ উইনফ্রের সাফল্যগাঁথা

অপরাহ উইনফ্রে। একজন প্রভাবশালী মার্কিন টক শো উপস্থাপক। একই সঙ্গে তিনি একজন লেখক, সমাজকর্মী, অভিনেত্রী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

আধুনিক আমেরিকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উদার নৈতিক চিন্তার উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন টক শো ও লেখনীর মাধ্যমে মার্কিন নারী সমাজের নানা প্রতিকূলতা তুলে ধরেছেন তিনি।

অনেক অদৃশ্য বাধা জয় করে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নারীদের কাছে হয়েছেন এক অনুকরণীয় প্রতীক। অপরাহ উইনফ্রে ১৯৫৪ সালে ২৯ জানুয়ারি আমেরিকার মিসিসিপি শহরের জন্মগ্রহণ করেন।

জন্মের আগেই তার বাবা-মা আলাদা হয়ে যান। তাই তার শৈশব ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মায়ের সঙ্গে তার শৈশবের দিনগুলো কেটেছিল চরম দরিদ্রতায়। কাপড়ের অভাবে অনেক দিন আলুর বস্তার তৈরি গাউন পরে স্কুলে গিয়েছেন। এ নিয়ে তার সহপাঠীরা অনেক উপহাস করেছিল।

১৪ বছর বয়সে তিনি চলে যান বাবার কাছে। এই অল্প বয়সেই তাকে বিভিন্ন পুরুষের কাছে তুলে দিয়েছিলেন তার নিষ্ঠুর বাবা। ফলে অল্প বয়সেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি।

শুধু তাই নয়, ১৪ বছর বয়সেই তিনি গর্ভবর্তী হয়েছিলেন। যদিও পরে তার নবজাতকটি মারা যায়। তবুও থেমে যাননি। এসব বাধাকে শক্তিতে পরিণত করে তিনি স্বপ্ন জয়ে এগিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তুমি তোমার ব্যথাগুলোকে জ্ঞানে পরিণত কর’।

অনেক চেষ্টার পর ১৯ বছর বয়সে তিনি একটি রেডিও চ্যানেলে সান্ধ্যকালীন সংবাদ উপস্থাপনার সুযোগ পান। সেখানে তার আবেগময় সংবাদ উপস্থাপনা সবার নজর কাড়ে।

ফলস্বরূপ, তিনি দিবাকালীন টক শো উপস্থাপনার সুযোগ পান। ধীরে ধীরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। একপর্যায়ে টক শো বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি নিজ উদ্যোগে ‘দ্য অপরাহ উইনফ্রে শো’ নামে টিভি প্রোগ্রাম চালু করেন। প্রোগ্রামটি সর্বকালের সবচেয়ে সফল এবং সর্বাধিক দেখা টিভি শো হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর মাধ্যমে তিনি সমকামী সমস্যা এবং বর্ণবাদসহ আমেরিকার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিকূলতা তুলে ধরেছেন।

বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান নারীদের জন্য তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এছাড়া তার এই শো মানুষকে ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও আত্মনির্ভরশীল হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

তাই তার এই মিডিয়া কার্যক্রম আমেরিকা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে অপরাহ তার ওজন অনেক কমিয়েছিলেন। ডায়েট নিয়ে তিনি অনেকগুলো বই লিখেছেন যা লক্ষ লিক্ষ কপি বিক্রি হয়েছিল।

এছাড়া, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়েও তিনি অনেক বই লিখেছেন, যা মানুষকে নিজের দায়িত্ব নিতে শিখিয়েছে। কিভাবে পরিবেশকে পরিবর্তন না করে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে সফল হওয়া যায় তা তিনি দেখিয়েছেন।

প্রকাশনা ও মিডিয়া কার্যক্রমের মাধ্যমে খুব শিগগিরই তিনি হয়ে যান বিশ্বের শীর্ষ ধনী নারীদের একজন। ফোর্বসের মতে, ২০০৪-২০০৬ সময়ে তিনিই ছিলেন একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ বিলিয়নিয়ার। আর বিশ্বের ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী বিলিয়নিয়ার।

তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ‘অপরাহ উইনফ্রে বুক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন।

‘অ্যা কালার পার্পেল’ নামে একটি মুভিতে অভিনয় করেছিলেন অপরাহ। এটি অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল। এ মুভিতে ‘সোফিয়া’ ভূমিকায় তার অভিনয় বিশ্বজুড়ে খুব প্রশংসিত হয়েছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির একজন কঠোর সমালোচক অপরাহ। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি যা করেছি বা যা করিনি তা নিয়ে আমার কোনো সংকোচ নেই এবং এ ব্যাপারে আমার পূর্ণ আত্মবিশ্বাস রয়েছে।’

তিনি বারাক ওবামার কঠোর সমর্থক ছিলেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বারাক ওবামার পক্ষে লক্ষ লক্ষ ভোট পেতে ভূমিকা রেখেছিলেন অপরাহ।

অপরাহ উইনফ্রে সম্পর্কে বলা হয়, পোপ ব্যতীত অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি, রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় ব্যক্তির থেকেও মার্কিন সংস্কৃতিতে তার প্রভাব বেশি।

শুধু তাই নয়, বিশ শতাব্দীর শীর্ষ প্রভাবশালী নারীদের একজন অপরাহ উইনফ্রে।

 

ইন্টারনেট অবলম্বনে লিখেছেন এনামুল হক।

Share this news on: