স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে শিগগিরিই ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী সপ্তাহেই এই কমিশন গঠন হতে পারে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
সোমবার রাজধানীর চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের উদ্যোগে সংবাদপত্রের সম্পাদক, প্রকাশক ও অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, আশা করি আগামী সপ্তাহেই হয়তো গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ঘোষণাটি দিতে পারবো। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরলেই হয়তো এ ঘোষণাটি আসবে।
এসময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নামে ফ্যাসিস্টদের উদ্দেশ্য হাসিল করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম।
চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন দৈনিক মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, ইংরেজি ডেইলি স্টারের হেড অব অপারেশন মিজানুর রহমান, বিটিভির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুল আলম, দেশ রূপান্তর সম্পাদক মোস্তফা মামুন, আজকের পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কামরুল ইসলাম, ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক অশোক কুমার সিংহ, মানবকণ্ঠ সম্পাদক এস এম ফারুক, দৈনিক সংগ্রামের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক নুরুল আমিন, ডেইলি সান সম্পাদক রেজাউল করীম, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি শামসুল হক জাহিদ, ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক ফাহিমা বাহাউদ্দীন শামা, দৈনিক সংবাদের চিফ রিপোর্টার সালাম জোবায়ের, অনলাইন পোর্টাল ঢাকা মেইলের হেড অব নিউজ হারুন জামিল, চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালিক, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব সভাপতি জাফর, ঝালকাঠির দৈনিক শতকণ্ঠ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মঞ্জু, বগুড়ার উত্তরকোণ সম্পাদক হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আমাদের বাংলা সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী, দৈনিক জনতা সম্পাদক শাহজাহান আলী, নওরোজ সম্পাদক শামসুল হক দূররানী প্রমুখ।
মতবিনিময়ে সম্পাদক-প্রকাশক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও অন্যান্য অংশীজনরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট, সীমাবদ্ধতা, প্রয়োজনীতা এবং স্বাধীনতার নামে অপসাংবাদিকতার কথাও তুলে ধরেন।
বক্তারা এসময় ডিএফপির মিডিয়া তালিকায় স্বচ্ছতা আনার দাবি জানান। তারা এনবিআর রিটার্ন তালিকা এবং ডিএফপি তালিকা সমন্বয় করার ওপর জোর। এছাড়া ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নে বেতন প্রদানের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সরকারি বিজ্ঞাপনের বকেয়া, রেট বাড়ানো, জেলা অঞ্চল ভিত্তিক বিজ্ঞাপন বৈষম্য নিরসন, ভূমিদস্যু, খুনি, লুটেরাদের পত্রপত্রিকা বন্ধ, অডিটের সময় ছয় মাস থেকে বাড়িয়ে একবছর করার দাবি জানান।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই অবশ্যই। কিন্তু আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে যেতে চাই, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সীমা কতটুকু? আমরা জানি, স্বাধীনতা মানে স্বাধীনতাই, এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ চলে না। কিন্তু স্বাধীনতার কথা বলে বা স্বাধীনতার মাধ্যমে ফ্যাসিস্টদের প্রচারণা করা যাবে কি না। স্বাধীনতার কথা বলে ফ্যাসিস্টদের পারপাস সার্ভ (উদ্দেশ্য সাধন) করা যাবে কি না। সে বিষয়টি আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।’
নাহিদ ইসলাম আরেও বলেন, ‘আমাদের এই যে অভ্যুত্থান, সেটিকে প্রাধান্য রেখে, মানদণ্ড রেখে সব স্বাধীনতা কিন্তু নিশ্চিত করতে চাই। আর অভ্যুত্থানের সময় ফ্যাসিবাদের পক্ষে যারা কাজ করেছেন, তিনি সাংবাদিক বা কবি হলেও বিচারের আওতায় আনা হবে।’
এসময় বাংলাদেশ প্রতিদিন, ঢাকা প্রতিদিন, সকালের সময়, সময়ের আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রপত্রিকার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।