আত্মপ্রকাশের পর যেসব কাজ করছে নতুন দল

কার্যালয়ের জন্য জায়গা খুঁজছে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি। এছাড়া দলটির নেতারা এখন দলের সাংগঠনিক কাঠামো, স্লোগান, ঘোষণাপত্র এবং গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করার কাজ চালাচ্ছেন। তারা বলছেন দলের এই মূল বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার কাজ চলছে এবং শিগগিরই সেগুলো ঘোষণা করা হবে

এনসিপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর তিনটি স্থান- ফার্মগেট, শাহবাগ ও পল্টনকে প্রাধান্য দিয়ে তারা এখন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য জায়গা খুঁজছেন।

এছাড়াও, এনসিপি নেতারা জোর দিয়ে বলেছেন যে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের দেওয়া সেদিনের বক্তব্য দলের ঘোষণাপত্র নয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের মুখে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে। দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এই স্লোগান অনেক নেতা ব্যবহার করায় কৌতূহল তৈরি হয়েছে যে, স্লোগানটি দলীয় স্লোগান কিনা।

আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অনেক নেতা ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানটি দিলেও দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সেটি ব্যবহার করেননি।

দলটির একজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, তাদের দলীয় স্লোগান ও মূলনীতি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আপাতত আত্মপ্রকাশ, কমিটি প্রকাশ আর ঘোষণাপত্র হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো সামনে চূড়ান্ত করা হবে’, বলেন তিনি।

ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান নিয়ে তিনি বলেন , জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানটি বেশ আলোচিত ছিল, তারই ধারাবাহিকতায় এখনো আমরা এই স্লোগানটি বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যবহার করছি।

দলটির নেতাদের প্রাথমিকভাবে ১৭টি শাখা গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে বিভিন্ন পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য একটি শাখা রয়েছে।

এছাড়া, এখনো কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির আকার ও সদস্য সংখ্যা চূড়ান্ত হয়নি। তবে, এটি ২০০-এর বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুক্রবার দলের আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নেতারা আংশিকভাবে ৬০ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন এবং জানান যে, কেন্দ্রীয় ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।

এনসিপি নেতারা বলেছেন, রমজানে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার দাবি তুলবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির একজন যুগ্ম আহ্বায়ক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমরা সবেমাত্র দলটি শুরু করেছি। দলীয় ফোরামে বেশ কয়েকটি সভা ও আলোচনার পর, আমরা কর্মসূচি চূড়ান্ত করব।

দলের নেতারা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সফর করবেন। তারা জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন এবং সাধারণ মানুষের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবেন।

দলের মুখ্য সংগঠক দক্ষিণ অঞ্চল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং মুখ্য সংগঠক উত্তর অঞ্চল সারজিস আলম তাদের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন যে তারা শিগগির এই দুই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে দেখা করবেন। 'স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের এই

জেলাগুলোর ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং বাংলাদেশপন্থি ছাত্রজনতার সঙ্গে অচিরেই দেখা হবে।'

সাংগঠনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি, এনসিপি একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদের নির্বাচনের জন্য চাপ অব্যাহত রাখবে।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী একটি ইংরেজি দৈনিককে সাক্ষাৎকারে এরই মধ্যে বলেছেন 'নতুন দল গণতান্ত্রিক নীতি এবং ন্যায়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশকে একটি রাজনৈতিক

রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়নি। আমরা এটিকে একটি নতুন রাজনৈতিক রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই।'

নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি। ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে

একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা এই দলের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য। তাঁরা বলেছেন, সেকেন্ড রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলা ও গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে তাঁদের রাজনীতির অগ্রাধিকার।


Share this news on:

সর্বশেষ