শিশুদের রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তোলার উপায়

ঈমানদারের কর্তব্য হলো, প্রথমত নিজের জীবনকে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত করা। পাশাপাশি নিজের পরিবার, সমাজ ও প্রতিবেশীদের হিদায়াতের পথে পরিচালিত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। বিশেষত, নিজের পরিবার ও অধীনস্থ লোকেরা যাতে জান্নাতের পথে চলতে পারে, পরিবারপ্রধানের উচিত সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি নিবদ্ধ করা। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো (জাহান্নামের) আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর...।
’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)

বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো শিশুর ওপর রোজা রাখা ফরজ নয়। তবে শিশুর শারীরিক দুর্বলতা বা খুব বেশি কষ্ট না হলে ছোটবেলা থেকেই রোজার জন্য অনুশীলন করানো যায়। শিশুদের রোজার অভ্যাস গড়ে তোলার ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে : রুবাই বিনতে মুআব্বিজ (রা.) বলেন, আশুরার সকালে আল্লাহর রাসুল (সা.) আনসারদের সব পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি সাওম পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যার সাওম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সাওম পূর্ণ করে। রুবায়্যি (রা.) বলেন, পরবর্তী সময় আমরা ওই দিন সাওম পালন করতাম এবং আমাদের শিশুদের সাওম পালন করাতাম।আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ওই খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত। (বুখারি, হাদিস : ১৯৬০)

ইমাম বুখারি (রহ.) সহিহ বুখারি শরিফে একটি অনুচ্ছেদের নামকরণ করেছেন ‘সাওমুস সিবয়ান’ বা ‘শিশুদের রোজা’।এ অনুচ্ছেদের অধীনে তিনি ওমর (রা.)-এর একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ওমর (রা.) রমজান মাসে এক নেশাগ্রস্ত লোককে বলেছিলেন, ‘তোমার জন্য আফসোস! আমাদের ছোট শিশুরা পর্যন্ত রোজাদার! (অথচ তুমি রোজা রাখো না)।’ এরপর ওমর (রা.) তাকে প্রহার করেন। এর ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) লিখেছেন, ইবনে সিরিন, ইমাম জুহুরি ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.)সহ পূর্ববর্তী বহু মনীষী শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করানোকে মুস্তাহাব ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মতে, নামাজের মতো সাত থেকে ১০ বছরের শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করানো যায়।(ফাতহুল বারি : ৫/৩)

আলেমদের কেউ কেউ এ সময়কে ১০ বছর বয়স থেকে নির্ধারণ করেছেন। তবে এর কম বয়সী বা একেবারে ছোট শিশুদের রোজা রাখানো উচিত নয়। কেননা একেবারে ছোট শিশুরা ইসলামের বিধি-বিধানের আওতাধীন নয়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিন ধরনের লোকের ওপর থেকে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে (ইসলামের বিধান স্থগিত করা হয়েছে)। (১) পাগল, যতক্ষণ না সুস্থ হয়; (২) নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয় এবং (৩) নাবালগ শিশু, যতক্ষণ না বালেগ হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩৯৯)

তবে সময় ভেঙে ভেঙেও শিশুদের রোজা রাখানো যায়। যেমন—প্রথমে কিছুদিন ঠিক দুপুরে পানাহার, পরে মাগরিবের সময় ইফতার। এভাবে শিশুরা রোজা পালনে অভ্যস্ত হয়। মনে রাখতে হবে, রোজা রেখে কোনো শিশু যদি একেবারে কাতর বা দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে দেরি না করে তার রোজা ভেঙে ফেলাও বৈধ। কেননা মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘...তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কোরো না...।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৯৫)

অন্তত একটি-দুটি করে অভ্যাস করাতে হবে। তাহলে আগামী রমজানে এর চেয়েও বেশি রাখার অভ্যাস গড়ে উঠবে। এমনিভাবে ইবাদত করার অভ্যাস হয়ে যাবে। আর এটাই ইসলামের কাম্য। বাচ্চারা কচি বৃক্ষের মতো, যেদিকেই প্রথমে মোড় দেবে (অভ্যাস করাবে) বড় হলে সেদিকেই অগ্রসর হবে।

শিশুদের রোজা ও রমজান বিষয়ে নিম্নে কিছু মাসআলা বর্ণনা করা হলো—

মাসআলা : যদি কেউ সূর্যাস্তের আগে বালেগ হয় আর তখন পর্যন্ত কিছু পানাহার না করে থাকে এবং যদি নফল রোজার নিয়ত করে থাকে, তার রোজা হয়ে যাবে। (আলমগিরি : ২/৩২)

মাসআলা : যখন বাচ্চার মধ্যে রোজা রাখার ক্ষমতা হয়, তখন তাকে রোজা রাখার নির্দেশ দেবে। এ নির্দেশ ওই সময় দেবে যখন বাচ্চারা রোজা রাখলে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। আর যদি ক্ষতি হয় তখন রোজা রাখার নির্দেশ দেবে না। যদি রোজা রাখার নির্দেশ দাও আর সে রোজা না রাখে, তখন তার ওপর কাজা ওয়াজিব হবে না। (আলমগিরি : ২/৩৬)
নাবালেগ বাচ্চার রোজা ভেঙে দেওয়া

প্রশ্ন : নাবালেগ বাচ্চা যদি রোজা ভেঙে ফেলে অথবা তার পিতা সোহাগ করে রোজা ভাঙিয়ে ফেলে, তাহলে কি তার ওপর কাজা কাফফারা ওয়াজিব হবে?

উত্তর : যদি নাবালেগ বাচ্চা রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তাকে কাজা রাখানোর প্রয়োজন নেই। যদি নামাজের নিয়ত করে নামাজ ভেঙে দেয়, তাহলে দ্বিতীয়বার পড়ানো (যখন বুঝমান হয়) ওয়াজিব। যদি সাত বছরের হয় তাহলে আদর ও স্নেহের দ্বারা বলবে, আর যদি ১০ বছরের হয় তাহলে মেরে নামাজ পড়াবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৩০; রাদ্দুল মুহতার ২/১১৭)

মাসআলা : নাবালেগ শিশুদের বিধান রোজার ব্যাপারে নামাজের মতোই। অর্থাৎ সাত বছর বয়সে নামাজ এবং রোজার নির্দেশ দেবে। আর ১০ বছর বয়সে পিটিয়ে নামাজ-রোজা করাবে। সুতরাং রমজান মাসে বাচ্চাদের দ্বারা ইলমের ব্যাপারে কম মেহনত করাবে। এ কারণে মাদরাসাগুলো রমজান মাসে বন্ধ থাকে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৯১, রাদ্দুল মুহতার : ২/৩২৬)

মাসআলা : যদি কেউ রমজানে দিনের বেলায় মুসলমান হয় অথবা নতুন বালেগ হয়, তাহলে দিনের বেলায় খানাপিনা জায়েজ নেই। যদি কিছু খেয়ে ফেলে, তাহলে ওই রোজার কাজা এই নওমুসলিম এবং নতুন বালেগের জন্য ওয়াজিব নয়। (বেহেশতি জেওর : ৩/১৯, হেদায়াহ : ১/৩০৩)


এমআর/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মনে আছে আলিফ লায়লার জনপ্রিয় নাবিক সিন্দাবাদের কথা? Jul 08, 2025
img
রাউজানে বোরকা পড়ে যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যা Jul 08, 2025
img
২৬টি সাপের বিষকে হার মানাবে উটের চোখের জল Jul 08, 2025
img
সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্তে স্বাধীন নন দেশের ৭৭ শতাংশ নারী Jul 08, 2025
img
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক পদে জাহাঙ্গীর কবির Jul 08, 2025
img
প্রথম পছন্দ ছিলেন নানি, শেষমেশ থাম্মুডু গেল নিথিনের হাতে Jul 08, 2025
img
পরিচালকের চেয়ার ছেড়ে অভিনয়ে অভিষান জীবিন্ত Jul 08, 2025
img
আনসার বাহিনীর দুই পরিচালক পদে রদবদল Jul 08, 2025
img
সাবেক গোয়েন্দা প্রধানের ব্যাংক হিসাব জব্দ Jul 08, 2025
img
নয় ঘণ্টা ঘুমিয়ে নয় লাখ টাকা জিতলেন তরুণী Jul 07, 2025
img
নীল ছবির জগৎ ছেড়ে ইসলাম ধর্মে জাপানের অভিনেত্রী Jul 07, 2025
img
মিরপুরে আ. লীগের ফ্যাসিস্ট বলে ২০ লাখ টাকা দাবি, গ্রেফতার ৪ Jul 07, 2025
img
ইয়েমেনি গোষ্ঠীর হামলায় লোহিত সাগরে জাহাজডুবির দাবি Jul 07, 2025
img
আসছে ‘রাতসাসান টু’, নিশ্চিত করলেন অভিনেতা বিষ্ণু বিশাল Jul 07, 2025
img
এনসিপিকে আমি সরকারি দলই বলি : মাসুদ কামাল Jul 07, 2025
১০ মিনিটে বাংলাদেশের আলোচিত সব খবর। Jul 07, 2025
img
সারাদেশে বৃষ্টি থাকবে, কমবে দিনের তাপমাত্রা Jul 07, 2025
img
৩৬৭ রানে ইনিংস ঘোষণা, লারার রেকর্ড না ভাঙার কারণ জানালেন মুল্ডার Jul 07, 2025
img
রাজনীতির হিসাব বদলে যাচ্ছে : রনি Jul 07, 2025
img
কক্সবাজারে টানা বৃষ্টিতে লাখো মানুষ পানিবন্দী Jul 07, 2025