মুড়ি মাখার সঙ্গে জিলাপি, হ্যাঁ নাকি না

বাংলাদেশে রমজান মাস আসে এক ভিন্ন পরিবেশ নিয়ে। পেঁয়াজু ভাজার সুমিষ্ট শব্দ, রাস্তার ধারে 'গরম জিলাপি' বিক্রির ডাক, এসব মিলিয়ে এক অনন্য অনুভূতি তৈরি হয়।

এই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার হলো মুড়ি মাখা, যা ইফতারের টেবিলে আলুর চপ, বেগুনি, পেঁয়াজুর সাথে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে। সরিষার তেল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ এবং ছোলার সংমিশ্রণে তৈরি এই খাবারটি সহজ ও সুস্বাদু। তবে, বিতর্কের বিষয় হলো, মুড়ি মাখায় জিলাপি মেশানো উচিত কি না।

মুড়ি মাখার ঐতিহ্য

প্রাচীনকাল থেকেই মুড়ি ছিল জনপ্রিয় একটি খাবার, কারণ এটি হালকা ও সহজপাচ্য। অপরদিকে, জিলাপি এসেছে মোঘল আমলে, পারস্যের ব্যবসায়ীদের হাত ধরে। পেঁয়াজু, বেগুনি ও আলুর চপও আমাদের খাবারের অংশ হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রভাবের মাধ্যমে। কিন্তু ইফতারের মুড়ি মাখার মধ্যে জিলাপি মেশানো নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

জিলাপিবিরোধীদের যুক্তি

জিলাপিবিরোধীরা বলেন, মুড়ি হালকা খাবার, আর জিলাপি চিনির বোমা। দুটো মেশালে স্বাদের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাদের মতে, জিলাপির আঠালো ভাব মুড়িকে নরম করে ফেলে, যা অনেকের পছন্দ নয়। তাদের এই যুক্তির পক্ষে আছে বিজ্ঞান। মুড়ি স্বভাবতই মচমচে। কিন্তু এর মধ্যে ভেজা-আঠালো জিলাপি মেশালে খুব দ্রুত মুড়ি মাখা খাবারটিতে মুড়িই নরম হয়ে গোটা জিনিসটা জগাখিচুড়িতে পরিণত হয়। এটা অনেকটা চায়ের মধ্যে দীর্ঘসময় বিস্কুট ডুবিয়ে রাখার মতো। মুড়ির এই নরম হয়ে যাওয়া অনেকেই মেনে নিতে পারেন না।

অন্যদিকে অনেকে ঐতিহ্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আগে মুড়ি মানেই লবণ, পেঁয়াজ, সরিষার তেল। এখন জিলাপি, পরে হয়তো চকলেট সিরাপও মেশাবে। ঝালমুড়িকে ডিকনস্ট্রাকচার্ড পাফড রাইস বলে পরিচয় দিয়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি করবে।

কেউ কেউ এতটাই অভ্যস্ত সাধারণ মুড়ি মাখায় যে এই মুড়ির সাথে জিলাপির সংমিশ্রণ একদমই হজম করতে পারেন না।
আবার কেউ কেউ মনে করেন ঝাল মুড়ির ভিতরে মিষ্টান্ন (জিলাপি, বুন্দিয়া) মিক্স করে খাওয়া একটা স্বৈরাচারি পদ্ধতি।
জিলাপি ছাড়াই যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্যবাহী মুড়ি মাখানো টিকে আছে। তাদের মতে, এটা অনেকটা বিরিয়ানির ওপর শরবত ঢালার মতো অযৌক্তিক বিষয়। কিছু জিনিস একটি আরেকটি সঙ্গে মেশানোর জন্য তৈরি হয় না।

জিলাপিপ্রেমীদের যুক্তি
কেউ কেউ মনে করেন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আইসক্রিমে ডুবিয়ে খাওয়া গেলে মুড়িতে জিলাপি মেশানো যাবে না কেন? তাদের মতে, মিষ্টি ও নোনতার সংমিশ্রণ নতুন স্বাদ তৈরি করে, যা অনেকেই উপভোগ করেন।

আবার কেউ বলেন ইফতারে এত খাবার থাকলে মুড়ির সঙ্গে জিলাপি মিশিয়ে দেওয়া তো সময় বাঁচানোর একটা উপায়। কে বলে মুড়ি মাখানোর নির্দিষ্ট নিয়ম আছে?

তাদের যুক্তিও বাস্তবসম্মত ধরে নেওয়া যায়। ইফতারের সময় কত কাজ থাকে, কত প্লেট ভর্তি করে খাবার দিতে হয়, কতকিছুর দিকে নজর রাখতে হয়। মুড়ি মাখার মধ্যে জিলাপি দিলেই তো কাজ সহজ হয়ে যায়, তাহলে এটা করতে সমস্যা কোথায়।

জিলাপি মেশানো হবে কি না, তা একান্তই ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। কেউ বৈচিত্র্য পছন্দ করেন, কেউ ঐতিহ্য রক্ষা করতে চান। তবে ইফতারের আসল সৌন্দর্য মিলেমিশে খাওয়ায়। তাই, কারো অনুমতি ছাড়া তার মুড়ি মাখায় জিলাপি মেশানোর আগে দুবার ভাববেন। নয়তো খাবার নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ বেধে যেতে পারে।

এমআর/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কানাডায় গ্ল্যামারাস লুকে নুসরাত! Dec 26, 2025
img
দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর আগে জীবনে ঘটে যাওয়া নাটকীয় ঘটনা Dec 26, 2025
img
আসিফ মাহমুদের ফেসবুক পেজ রিমুভ, জানালেন কারণ Dec 26, 2025
img
জাতির ওপর থেকে এখনও কালো ছায়া যায়নি: জামায়াত আমির Dec 26, 2025
img
বিয়ের অনুষ্ঠানে দুই ছেলে ও হৃতিক, ছড়ালেন খুশির ছোঁয়া Dec 26, 2025
img
নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে কারাগারে ২ জন Dec 26, 2025
img
২১ দিনে আয়ের রেকর্ড গড়ল ‘ধুরন্ধর’ Dec 26, 2025
img
মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের ভোটার পোস্টাল ব্যালটের নিবন্ধন ছাড়াল ৪১ হাজার Dec 26, 2025
img
তারেক রহমানের ভোটার হতে আইনি কোন বাধা নেই: ইসি মাছউদ Dec 26, 2025
img
আত্মপ্রকাশ করেছে রাজনৈতিক দল জাতীয় মুসলিম জোট Dec 26, 2025
img
চমকের ‘চুড়ি ছাম ছাম’ লুকে মুগ্ধ দর্শকমহল! Dec 26, 2025
img
বিরোধী দল ছেড়ে শাসকদলে যোগ দিচ্ছেন অভিনেত্রী পার্নো মিত্র! Dec 26, 2025
img
বিশ্ববাজারে স্বর্ণ-রুপা ও প্লাটিনামের দামে নতুন রেকর্ড, নেপথ্যে কী? Dec 26, 2025
img
‘আমরা এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাই, যেখানে অস্ত্র, মাদক ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই’ Dec 26, 2025
img
অসুস্থতার মধ্যেও শেষ শুটিং করেছিলেন ইরফান খান! Dec 26, 2025
img
ওসমান হাদি হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন অটোরিকশা চালক Dec 26, 2025
img
১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে কি না, সে সংশয় আর নেই: শফিকুল আলম Dec 26, 2025
img
অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ হারালেন আসিফ মাহমুদ Dec 26, 2025
img
আজ থেকে বিপিএল ২০২৬ শুরু, একনজরে পূর্ণাঙ্গ ম্যাচ সূচি Dec 26, 2025
img
বড় পদক্ষেপ নিলেন কিম জং উন Dec 26, 2025