রোজার প্রথম কয়েকদিনের দুর্বলতা কাটবে যেভাবে

রোজার দিনগুলো ক্লান্তিকর হতে পারে, তবে এটি কাটিয়ে ওঠার উপায় রয়েছে। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা, শরীরে জলীয় খাবারের অভাব এবং রোজার সঙ্গে সম্পর্কিত শারীরিক পরিবর্তনের ফলে রমজানের শুরুর দিনগুলোতে দুর্বলতা বেশি অনুভূত হয়।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করলে এই দুর্বলতা সহজেই দূর করা সম্ভব।

রোজায় দুর্বলতার কারণ

রোজার প্রথম কয়েকদিনে দুর্বলতার অনুভূতি বেশ সাধারণ একটি ব্যাপার। দিনের বেশিরভাগ সময় পানির অভাব এবং খাবারের অভাবে শরীরের শক্তির স্তর কমে যায়। তাছাড়া, শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে রোজা রাখার জন্য অভ্যস্ত হতে থাকে, যা কিছুটা সময় নেওয়ার বিষয়।

প্রথমে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও শর্করা বের হয়ে যাওয়াতে অনেকেই মাথা ঘোরা, দুর্বলতা ও ক্লান্তি বোধ করেন। যেহেতু রমজানের শুরুতে হঠাৎ করে শরীর নতুন একটি রুটিনে আসে, দেহঘড়ির পরিবর্তন হয়- ফলে এ ধরনের দুর্বলতা তৈরি হয়।

যদিও এতে ভয়ের কারণ দেখছেন না পারসোনা হেল্থ’য়ের পুষ্টিবিদ শওকত আরা সৈয়দা লোপা।

গণমাধ্যমকে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, “ঘুমের অভাবে শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশ্রামের অভাবে শরীর ব্যথাও হতে পারে। তাই সময় পরিবর্তন হলেও ঘুম যেন কম না হয় সে দিকে নজর দিতে হবে।” “রোজার শুরুতেই কোনোভাবে সেহেরি বাদ দেওয়া যাবে না। শুধুমাত্র ইফতার ও রাতের খাবার খেয়ে রোজা রাখা স্বাস্থ্যকর নয়”- বলেন এই পুষ্টিবিদ।

ইফতারে সরল কার্বোহাইড্রেইটস এবং সেহেরিতে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেইটস বা আঁশ সমৃদ্ধ খাবার রাখার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ। পাশাপাশি খাবারের ধরন ও জীবনযাত্রার বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

খাবারের পরামর্শ

রোজার প্রথম সপ্তাহে দুর্বলতা কাটানোর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সেহেরি

সেহরিতে এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত, যা শরীরকে দীর্ঘসময় শক্তি প্রদান করবে। সেহরিতে পূর্ণ শস্য, প্রোটিন এবং আঁশ সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ওটস, ডাল, সেদ্ধ ডিম এবং ফলমূল খাওয়া ভালো। এ ধরনের খাবার হজম হতে সময় নেয় এবং ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে।

ইফতার

ইফতারের সময় শরীরকে দ্রুত শক্তি প্রদান করার জন্য সরল শর্করা (যেমন- খেজুর, ফল, স্যুপ) উৎকৃষ্ট। তবে অতিরিক্ত মিষ্টি এবং তেলতেলে খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত।

কারণ এসব খাবার শরীরকে দ্রুত ক্লান্ত করে ফেলতে পারে। ইফতার থেকে সেহরির সময় পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে যাতে শরীর পানিশূন্যতায় না ভোগে।

পানির পরিমাণ

রোজা রাখা মানেই অতিরিক্ত পানি নয়। অনেকেই সেহেরিতে একসাথে অনেক পানি গ্রহণ করেন। এতে শরীরে বরং চাপ তৈরি হয়।

পুষ্টিবিদ শওকত আরা সৈয়দা লোপা বলেন, “যতটুকু প্রয়োজন পানি খেতে হবে। পানির মাপ ঠিক রাখতে বোতল ব্যবহার করা যেতে পারে। সেহরি থেকে ইফতার মধ্যের সময়ে ভাগে ভাগে পানির ঘাটতি কমাতে হবে।”

ইফতারে তরল খাবার যেমন- ডাবের পানি, খেজুর, স্মুদি, ফল রাখলে উপকার পাওয়া যাবে।

আদর্শ খাবার

পূর্ণশষ্যের আটার রুটি, বাদামি চালের ভাত, ওটমিল, ফল, সবজি, দুধ, দই, ডিম, মুরগির মাংস, বাদাম, অলিভ অয়েল, কলা, আপেল, পিনাটবাটার, সবজির স্যুপ, ফলের সালাদ শরীরের দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করবে।

জীবনযাপনের পরামর্শ

রোজার সময় জীবনযাপনে কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন আনা দুর্বলতা কাটাতে সহায়ক হতে পারে।

ঘুম

যারা দেরিতে ঘুমান রমজানে অবশ্যই তাদের আগে ঘুমের অভ্যাস করতে হবে। কাজ থাকলে প্রয়োজনে আগে ঘুমিয়ে সকালে সময়টা কাজের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে সেহেরি পর্যন্ত ভালো একটা ঘুম হয়ে যায় এবং শরীর অনেকটাই ভারসাম্য রক্ষা পায়।

আর রাতে দেরি করে ঘুমালে অবশ্যই সকালের দিকে ঘুমিয়ে নিতে হবে যেন শরীরে বাজে প্রভাব না পড়ে।

বিশ্রাম
রোজা রাখার সময় শরীরের শক্তি কমে যায়, তাই দিনের বেলা অতিরিক্ত কাজ বা পরিশ্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে শরীরের শক্তি ফিরে পারে।

ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হওয়া

রোজার প্রথম কয়েকদিনে দুর্বলতা অনুভব করা স্বাভাবিক। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে শরীর অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। তাই প্রথমে নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রেখে কাজ করা উচিত।

হালকা হাঁটাচলা

শরীরচর্চার অভ্যাস না থাকলে শরীরে চাপ দিয়ে বেশি হাঁটাচলা না করাই ভালো। ইফতারের পর ও নামাজের আগে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট হালকা হাঁটাচলা করলে শরীরের দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করবে।

মনোযোগ এবং ধৈর্য্য

রোজার সময় শরীরের পাশাপাশি মনকেও প্রশান্ত রাখতে হবে। প্রার্থনা, ধ্যান বা শান্তিপূর্ণ সময় কাটালে শরীরে শক্তির যোগান পাওয়া যাবে।

এস এস / এস এন



Share this news on:

সর্বশেষ

img
তারেক রহমানের নিরাপত্তার স্বার্থে জিয়া উদ্যান ও স্মৃতিসৌধের আশপাশে বিজিবি মোতায়েন Dec 26, 2025
img
কানাডায় গ্ল্যামারাস লুকে নুসরাত! Dec 26, 2025
img
দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর আগে জীবনে ঘটে যাওয়া নাটকীয় ঘটনা Dec 26, 2025
img
আসিফ মাহমুদের ফেসবুক পেজ রিমুভ, জানালেন কারণ Dec 26, 2025
img
জাতির ওপর থেকে এখনও কালো ছায়া যায়নি: জামায়াত আমির Dec 26, 2025
img
বিয়ের অনুষ্ঠানে দুই ছেলে ও হৃতিক, ছড়ালেন খুশির ছোঁয়া Dec 26, 2025
img
নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে কারাগারে ২ জন Dec 26, 2025
img
২১ দিনে আয়ের রেকর্ড গড়ল ‘ধুরন্ধর’ Dec 26, 2025
img
মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের ভোটার পোস্টাল ব্যালটের নিবন্ধন ছাড়াল ৪১ হাজার Dec 26, 2025
img
তারেক রহমানের ভোটার হতে আইনি কোন বাধা নেই: ইসি মাছউদ Dec 26, 2025
img
আত্মপ্রকাশ করেছে রাজনৈতিক দল জাতীয় মুসলিম জোট Dec 26, 2025
img
চমকের ‘চুড়ি ছাম ছাম’ লুকে মুগ্ধ দর্শকমহল! Dec 26, 2025
img
বিরোধী দল ছেড়ে শাসকদলে যোগ দিচ্ছেন অভিনেত্রী পার্নো মিত্র! Dec 26, 2025
img
বিশ্ববাজারে স্বর্ণ-রুপা ও প্লাটিনামের দামে নতুন রেকর্ড, নেপথ্যে কী? Dec 26, 2025
img
‘আমরা এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাই, যেখানে অস্ত্র, মাদক ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই’ Dec 26, 2025
img
অসুস্থতার মধ্যেও শেষ শুটিং করেছিলেন ইরফান খান! Dec 26, 2025
img
ওসমান হাদি হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন অটোরিকশা চালক Dec 26, 2025
img
১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে কি না, সে সংশয় আর নেই: শফিকুল আলম Dec 26, 2025
img
অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ হারালেন আসিফ মাহমুদ Dec 26, 2025
img
আজ থেকে বিপিএল ২০২৬ শুরু, একনজরে পূর্ণাঙ্গ ম্যাচ সূচি Dec 26, 2025