বাংলাদেশিদের সুইস ব্যাংক হিসাব, প্রতিবেদন ও বিতর্ক

২০২২ সালের ডিসেম্বরে মানবজমিনের সাংবাদিক জুলকার নাইন সাইর ও প্রতিবেদক শারীফ রুবেল, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি আট পরিবারের বিপুল পরিমাণ অর্থ জমার বিষয়টি নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। তবে, প্রায় ২ বছর পরে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পেছনে রয়েছে একাধিক প্রতিবন্ধকতা।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোকে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশে কিছুটা দ্বিধা ছিল। বিশেষ করে বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোও প্রথমে খুব আগ্রহ দেখায়নি, কারণ তারা মনে করেছিল, এটি শুধুমাত্র একটি দেশীয় প্রতিবেদন, যার আন্তর্জাতিক গুরুত্ব কম। এদিকে, বাংলাদেশি গণমাধ্যমের মধ্যেও একধরনের ভয় ও অনীহা ছিল, কারণ তারা অনুমান করেছিল, সাবেক সরকার প্রতিবেদনটির প্রকাশ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।

এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হলো সামদানি পরিবার, যাদের মধ্যে রাজীব সামদানি, তার স্ত্রী নাদিয়া সামদানি এবং তাদের ছোট ভাই মেহেদী সামদানি অন্যতম। তাদের ব্যাংক হিসাবে সুইস ফ্রাঁর পরিমাণ ৭৫৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে, মিরালী গ্রুপের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবেও কোটি কোটি টাকা জমা রয়েছে। এসব হিসাবগুলো বিভিন্ন সময়ে খোলা হলেও, কিছু হিসাব বন্ধও করা হয়।

প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর, ফেসবুকে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়। অনেক ব্যবহারকারী এই প্রতিবেদনটিকে মিথ্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, আবার অনেকেই এটিকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুর্নীতির বড় প্রমাণ হিসেবে দেখেছেন। দেশীয় আর্থিক খাতে দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরার এই ঘটনা অনেকের জন্য নতুন একটি দৃষ্টিকোণ তৈরি করেছে। বিশেষ করে, কিছু নেটিজেন সরকারের ওপর চাপ তৈরি করে বলেছেন, এধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সরকারের প্রতিনিধি বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এখনও প্রতিবেদনটির ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে, এই প্রতিবেদন প্রকাশে দেরি হওয়ার পেছনে অনেকেই মনে করছেন, এটি সরকারের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে ছিল। মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমানের এক বক্তব্যে বলেছেন, দেশে স্বৈরাচারের অবসানের পরেও গণমাধ্যমের ভীতি কাটেনি।

এফ পি/ এস এন

Share this news on: