নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদ্মায় অবাধে ইলিশ শিকার

শরীয়তপুরে পদ্মা নদীতে অবাধে ইলিশ ধরছেন অসাধু জেলেরা। মানছেনা সরকারি নিষেধাজ্ঞা। শিকারের পর সেই মাছ নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন মাছের বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।

জেলায় প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, নৌ পুলিশের অভিযান সত্ত্বেও জেলেরা এ অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরায় উৎপাদন বাড়ানোর সরকারি উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে না বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন নাগরিকরা।

শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলার ওপর দিয়ে ৭১ কিলোমিটার পদ্মা ও মেঘনা নদী প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা নদীর নড়িয়ার সাধুর বাজার এলাকা থেকে ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ঐ অভয়াশ্রমে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের জাল ফেলা নিষেধ। ঐ এলাকায় যাতে কোনো জেলে মাছ শিকার না করতে পারেন, তার জন্য মৎস্য বিভাগ থেকে জেলে পল্লিগুলোতে প্রচারণাও চালানো হয়েছে।

শরীয়তপুর জেলায় ২৫ হাজার ৫০০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। জেলেরা যাতে ঐ সময়ের মধ্যে জাটকা নিধন বন্ধ রাখেন ও অভয়াশ্রমে মাছ শিকার না করেন, তার জন্য ১৫ হাজার ৪৪৬ জন জেলেকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৪০ কেজি করে চাল দিচ্ছে মৎস্য বিভাগ। তার পরও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কিছু জেলে পদ্মা নদীর ইলিশের অভয়াশ্রমে মাছ শিকার করছেন। শিকার করা জাটকা নড়িয়ার সুরেশ্বর, সাধুর বাজার, ওয়াপদা বাজার, ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা, চরভাগা, স্টেশন বাজার, গৌরাঙ্গ বাজারসহ জেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।

সরেজমিনে নড়িয়ার সাধুর বাজার, চণ্ডিপুর ও সুরেশ্বর এলাকায় পদ্মা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, দিনে ও রাতে জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করছেন। অধিকাংশ জেলেই নদীতে ইলিশ শিকারের জাল ফেলছেন। জালে চার-ছয় ইঞ্চি সাইজের জাটকা ধরা পড়ছে। পরের দিন সকালে বিভিন্ন বাজারে দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা কেজি দরে এসব মাছ বিক্রি করা হচ্ছে।

সুরেশ্বর এলাকায় ছয় সদস্যর একটি দল নিয়ে নদীতে মাছ শিকার করেন নওপাড়া এলাকার এক জেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, 'নদীর মাছের ওপরই আমাদের জীবিকা নির্ভর করে। সংসারের অভাবের কারণে অনেক সময় আইন মানতে পারি না। নদীতে জাল ফেলি। যখন বাধার মুখে পড়ি, তখন নদী থেকে চলে যাই।' আরেক জেলে বলেন, 'সব সময় নদীতে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না। ইলিশ প্রজননের সময় ও বেড়ে ওঠার সময় ভাটি থেকে আমাদের অঞ্চলের দিকে আসে। আবার সাগরে ফিরে যায়। এই যাওয়া আসার মাধ্যেই আমরা কিছু মাছ শিকার করতে পারি। আমাদের সাগরের দিকে গিয়ে মাছ শিকার করার সক্ষমতা নেই। তাই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই নদীতে মাছ শিকার করতে হচ্ছে।'

শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, 'শরীয়তপুরের পদ্মা নদীতে ২০ কিলোমিটার এলাকা ইলিশের অভয়াশ্রম। ছোট ইলিশকে বড় হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য দুই মাস সেখানে কোনো ধরনের জাল ফেলা যাবেনা। ঐ স্থানে নির্বিঘ্নে ইলিশ বৃদ্ধি করার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। তার পরও কিছু অসাধু জেলে আমাদের অগোচরে নদীতে মাছ শিকার করছেন বলে তথ্য পেয়েছি। শিগগিরই আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।'

আরএ/এসএন

Share this news on: