রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা, বেড়েছে গোয়েন্দা নজরদারি

ঈদকে কেন্দ্র করে আশ্রয়শিবিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে টহল ও তল্লাশি বাড়িয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন।মূলত সম্প্রতি আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ গ্রেফতারের পর থেকে ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৮ হাজার একর বনভূমিতে রয়েছে ৩৩টি আশ্রয়শিবির। যেখানে বসবাস করছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, আশ্রয়শিবিরগুলোতে রয়েছে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। যারা আধিপত্য বিস্তার, অপহরণ কিংবা মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হত্যাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে। যার বেশিভাগই দায়ী করা হয় আরসা এবং আরএসওকে। কিন্তু গত ১৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ জুনুনীসহ ৬ সহযোগীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর প্রেক্ষিতে এখন আশ্রয়শিবিরে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে শঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
 
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলো নিয়ন্ত্রণ করে মূলত আরসা এবং আরএসও। এই দুই গ্রুপই আশ্রয়শিবিরে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড করে থাকে। আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ গ্রেফতারে এক পক্ষ খুশি হয়েছে, কিন্তু আরেকটি পক্ষ নারাজ। সুতরাং এর হয়তো কোনো প্রতিফলন আশ্রয়শিবিরে ঘটতে পারে। তাই আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়ানো দরকার রয়েছে।’

আশ্রয়শিবিরগুলোর নিরাপত্তায় এপিবিএনের ৩টি ব্যাটালিয়ন থাকলেও তাদের পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়িয়েছে জেলা পুলিশ বলে জানান কক্সবাজারের উখিয়াস্থ ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কায়সার রিজভী কোরায়েশী।

তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের পর থেকে আশ্রয়শিবিরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা তৎপরতাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশ্রয়শিবিরগুলোতে টহল তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি চেকপোস্টে তল্লাশি তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। আরসাপ্রধানকে গ্রেফতারের পর আশ্রয়শিবিরে যে কথাগুলো কথিত রয়েছে সে ধরণের কোনো শঙ্কা নজরে আসেনি। কিন্তু আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার স্বার্থে সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
 
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আরসার নেতৃত্ব দিতেন আতাউল্লাহ জুনুনী। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। আরসা এবং আরএসও’র মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এই গ্রেফতারের ঘটনায় আশ্রয়শিবিরে যেন কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা না হয় তার জন্য গোয়েন্দা সংস্থা, জেলা পুলিশ ও এপিবিএন কাজ করছে। আশা করি, আশ্রয়শিবিরে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে না।

এ বিষয়ে কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘আশ্রয়শিবিরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। আরসাপ্রধান গ্রেফতারের পর অনেক কিছু গুজব ছড়িয়ে ছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। সব কিছুর অংশ হিসেবে আশ্রয়শিবিরে নিয়মিত টহল চলছে এবং প্রত্যেক ঈদের ন্যায় এবারও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আলাদাভাবে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।

পুলিশ, র‌্যাব ও রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্যমতে, গত সাড়ে ৭ বছরে আশ্রয়শিবিরগুলোতে খুন হয়েছেন ২৫২ রোহিঙ্গা।


এমআর/এসএন


Share this news on:

সর্বশেষ

“ঈদ আনন্দ সবার মনে, থিম পার্কে দর্শনার্থীর ভিড়” Apr 03, 2025
দেশে কোনো জ'ঙ্গি'বা'দের উ'ত্থা'ন হয়নি- দাবি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার Apr 03, 2025
বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে মাহফুজ আনামের বিশ্লেষণ Apr 03, 2025
রাশিয়ার ইতিহাসে বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ শুরু করেছেন পুতিন Apr 03, 2025
প্রেমিকার ইচ্ছায় ছুটন্ত খাট বানিয়ে তাক লাগালেন ডোমকলের নবাব! Apr 03, 2025
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতকে ঘিরে ফেলার জন্য চীনকে আহ্বানের অভিযোগ কংগ্রেসের Apr 03, 2025
সিনেপ্লেক্স থেকে নামানো হলো সাকিবের অন্তরাত্মা! Apr 03, 2025
চাওয়ার মতো চাইলেই সব পাওয়া যায়, বললেন আফরান নিশো! Apr 03, 2025
নিজেকে বুড়ি, মোটা বললেও শাকিব খান এখনও তরুণ নারী ভক্তের চোখে! Apr 03, 2025
৩০০-র বেশি সিনেমা করেও কেন ভিক্ষা করতে হয়েছে এই অভিনেতাকে ? Apr 03, 2025