‘২০২৩ সালে বাংলাদেশে ১ লাখের বেশি শিশুর মৃত্যু’

বাংলাদেশে ২০২৩ সালে এক লাখের বেশি শিশুর মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে শিশুদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

জন্মের পর থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এসব শিশু মারা গেছে বলে ‘ইউনাইটেড নেশনস ইন্টার-এজেন্সি গ্রুপ ফর চাইল্ড মরটালিটি এস্টিমেশনের’ (ইউএন আইজিএমই) প্রতিবেদনের তথ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরেছে সংস্থাটি দুটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এক লাখের বেশি শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনের আগেই মারা গেছে। এর মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিশু ২৮ দিন বয়সের আগে মারা গেছে।

ইউএন আইজিএমই এর আরেকটি প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে বছরে ৬৩ হাজারের বেশি মৃত শিশু ভূমিষ্ট হচ্ছে। প্রতি ৪১ শিশুর একটি মৃত অবস্থায় ভূমিষ্ট হচ্ছে। মৃত সন্তান প্রসবের এই হার ‘দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ’।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৯০ সাল থেকে অগ্রগতি অর্জন করলেও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে মৃত সন্তান প্রসবের হার ‘সর্বোচ্চ’। এসডিজি সম্পর্কিত লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রতি বছর অতিরিক্ত ২৮ হাজার নবজাতককে বাঁচাতে হবে। ফলে মা ও নবজাতকের উন্নত যত্নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

নবজাতকের মৃত্যু ও মৃত সন্তান প্রসবের কারণ হিসেবে বলা হয়, ‘৩০ শতাংশ’ শিশুর ঘরে জন্ম, আকারে ছোট ও অসুস্থ নবজাতকের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ নেই। দক্ষ সেবাদাতা/ধাত্রীর ঘাটতি, উপজেলা পর্যায়ে ২৪/৭ ঘণ্টা মানসম্পন্ন সেবার অভাব, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পর্যায়ে প্রসবের পর অপর্যাপ্ত সেবা এবং অনিয়ন্ত্রিত বেসরকারি খাতের কারণে ‘এসফেকশিয়া’ (জন্মকালীন শ্বাসরুদ্ধতা), অপরিণত বয়স ও সংক্রমণজনিত মৃত্যু ঘটে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের ওআইসি প্রতিনিধি ফারুক আদ্রিয়ান দুমুন বলেন, অপরিণত জন্ম, সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, সেপসিস ও নিউমোনিয়ার মত সংক্রমণের ফলে শিশু মারা যাচ্ছে।

“আমরা লাখ লাখ শিশু ও মাকে বাঁচাতে পারি যদি আমরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিতে আরও বিনিয়োগ করি এবং সকল পর্যায়ে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের, বিশেষ করে ধাত্রী মায়েদের সংখ্যা বাড়াতে পারি, তাদের সঠিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারি, যাতে প্রতিটি নবজাতক নিরাপদ হাতে জন্মগ্রহণ করতে পারে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আহমেদ জামশিদ মোহামেদ বলেন, “বাংলাদেশ বিগত দশকগুলোতে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্য সেবায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তারপরেও মানসম্মত ও সময়োচিত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়ে গেছে।

“এই প্রবণতা বদলে দেওয়া ও মর্মান্তিক ক্ষতি বন্ধে আমাদের অবশ্যই এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ অর্জনের জন্য আর মাত্র পাঁচ বছর বাকি আছে। তাই মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা উন্নত করতে আমাদের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।”

স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ সেবাদাতার উপস্থিতিতে সন্তান প্রসব, নবজাতকের সেবা ইউনিট সম্প্রসারণ, প্রশিক্ষিত নার্স বাড়ানো, গর্ভকালীন, সন্তান প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর সেবার মান উন্নত করা, একইসঙ্গে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা জোরদারে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা কর্মী বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এফপি/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভিসির বাসভবনের সামনে ঢাবি শিক্ষার্থীদের রাতভর অবস্থান Nov 23, 2025
img
শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফিরতে বিভাগীয় শহরে বাস সার্ভিস দেবে ডাকসু Nov 23, 2025
img
হল ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে ইডেন শিক্ষার্থীরা Nov 23, 2025
img
যার বংশ পরিচয় নেই, বাপ-দাদার নাম নেই, সেও নাকি এমপি হবে : মঞ্জুরুল আহসান Nov 23, 2025
img
‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর ভবিষ্যৎ ঘিরে বাড়ল জল্পনা Nov 23, 2025
img
ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরে এসেছে: সেলিমা রহমান Nov 23, 2025
img
পাপনের স্মৃতিতে জুবিনের পেশাদারিত্ব Nov 23, 2025
img
ছোট ছোট আনন্দে বড় উদারতা দেখতেন জুবিন Nov 23, 2025
img
নারীবান্ধব সমাজ গঠনের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার Nov 23, 2025
img
রোববার দেশব্যাপী বিক্ষোভ বাম গণতান্ত্রিক জোটের Nov 23, 2025
img
বড় পর্দা থেকে দূরে গিয়ে মানসিক শান্তিতে সুরজিৎ Nov 23, 2025
img
বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে: নাহিদ Nov 23, 2025
img
অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো শেখিয়েছে মা, স্মরণ করালেন জিতু Nov 23, 2025
img
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট গ্রেপ্তার Nov 23, 2025
img
সোজাসাপ্টা কথায় কেও কষ্ট পেলে দুঃখিত : অরিজিৎ Nov 23, 2025
img
রাজধানীতে ভূমিকম্পে আহত-নিহতদের পরিবারের পাশে জামায়াত Nov 23, 2025
img
নারীবাদ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চান ফাতিমা Nov 23, 2025
img
রাজধানীর তিতুমীর কলেজে ছাত্রদল-শিবির সংঘর্ষ Nov 23, 2025
img
সাহিবজাদার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে লঙ্কানদের হারালো পাকিস্তান Nov 23, 2025
img
নির্বাচনের সময় পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল গণভোট : ড. আব্বাসী Nov 23, 2025